ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মূল : হেলেই তাসুকুমা

স্মার্টওয়াচ কেনার আগে যা জানতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৫ ডিসেম্বর ২০১৫

স্মার্টওয়াচ কেনার আগে যা জানতে হবে

ওয়াশিংটন পোস্ট প্রচলিত কোন উপকরণ কিনতে গেলে সেটা যাচাই-বাছাই করে দেখে নেয়া যায়। ক্যামেরা পরীক্ষা করে দেখা যায়। বিভিন্ন প্রসেসরের গুণাগুণও যাচাই করা যায়। কিন্তু স্মার্টওয়াচের কথা আলাদা। স্মার্টওয়াচ কিনতে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। কাউকে উপহার দেয়ার জন্য কিনতে গেলে তো আরও বেশি সাবধানী হতে হয়। অন্য যে কোন টেক গ্যাজেটের তুলনায় স্মার্টওয়াচেই সম্ভবত ব্যবহারকারীর ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন করে। কাউকে এ জিনিস উপহার দেয়ার কথা ভাবলে এর প্রযুক্তিগত ও ফ্যাশন উভয় দিক ভালভাবে পরখ করতে হবে। ভেবে দেখতে হবে যাকে তা দেয়া হচ্ছে সে স্মার্টওয়াচ দিয়ে কথা বলতে চায় কি-না। সে টাচস্ক্রিন পছন্দ করে কি-না। স্টাইলটা তার রুচিমাফিক কি-না। যারা স্মার্টওয়াচের বিভিন্ন ধরনের কাজ চায় তারা এর নান্দনিক সৌন্দর্য নিয়ে অত মাথা ঘামায় না। বাজারে এখন বিভিন্ন ধরনের স্মার্টওয়াচের ছড়াছড়ি। প্রায় প্রতিদিনই নিত্যনতুন স্মার্টওয়াচ আসছে। সুইজারল্যান্ডের ঘড়ি কোম্পানি মোভাদো সম্প্রতি বাজারে এনেছে কোল্ড মোশন নামে অতি স্টাইলিশ স্মার্টওয়াচ। ৬৯৫ ডলার দামের এই স্মার্টওয়াচটির সঙ্গে যে ঘড়ি যুক্ত তার চেহারাটা প্রচলিত ঘড়ির মতোই। শুধু এর সঙ্গে বাড়তি কিছু কলাকৌশল আছে। যেমন ঘড়ির প্রান্তভাগজুড়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপরেখায় আলো জ্বলে উঠে আপনাকে জানিয়ে দেবে কখন ই-মেইল কিংবা ইনকামিং কল এসেছে। তবে এর চেয়ে বেশি তথ্য দেবে না। ট্যাগ হিউয়ার কোম্পানিও সম্প্রতি তাদের প্রথম স্মার্টওয়াচ বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে। কানেকটেড ওয়াচ নামক মডেলটির দাম দেড় হাজার ডলার। এতে টাচস্ক্রিন আছে এবং গুগলের এ্যানড্রয়েড সফটওয়্যারে চলে। এতে গুগল ম্যাপ, মোটিকিকেশন ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য দেখা যাবে, যা অনেক সস্তা স্মার্টফোনেও দেখা যায়। তফাৎ হলো এর গুণগতমান। যেমন দাম তেমন কাজ। অবশ্য সব ঘড়ি প্রস্তুতকারকই যে অতি ব্যয়বহুল ঘড়ি তৈরির পথ বেছে নিয়েছে তা নয়। যেমন ফোসিল’স কিউ লাইনের ২শ’ ডলারের একটি স্মার্টওয়াচ আছে। গ্র্যান্ট নামের সেই মডেলটি লাইট ও ভাইব্রেশন দুটোকেই একসঙ্গে বেছে নিয়ে মোটিফিকেশন করে। কাজেই যদু, মধুর কেউ ফোন করেছে ঘড়ির চেহারায় সে ধরনের কোন লেখা দেখা না গেলেও স্মার্টওয়াচটি এমনভাবে প্রোগ্রাম করা যেতে পারে যে ওদের কেউ ফোন করলে ঘড়িতে নীল আলো জ্বলে উঠবে। ঘড়িটির কেস ৪৪ মিলিমিটারের এবং সেটি ১৫ মিলিমিটার পুরু। এতে একটা স্ট্যান্ড আছে যা চার্জার হিসেবে দ্বিগুণ বেড়ে যায়। কাজেই প্রতি দু’দিন পর পর প্লাগ লাগিয়ে চার্জ করার বিষয়টি মনে রাখা সহজ। এসব ঘড়ি ছাড়াও এলজি, এ্যাপল, স্যামসাং প্রভৃতির মতো প্রযুক্তি কোম্পানির ঘড়ি আছে, যা আপনার কল্পনার অনেক কিছু পূরণ করতে পারে। এসব ঘড়িতে ই-মেইল মেসেজ দেখা যাবে, ছবি দেখা যাবে, ফোনকল করা যাবে এবং গান শোনা যাবে। এসব স্মার্টওয়াচের দাম মাঝারি মানের স্মার্টওয়াচের দামের সমান কিংবা তারচেয়ে কিছু বেশি। মোবাইল সফটওয়্যারের সকল বৈশিষ্ট্য এবং ইউজার, ওপেন টেবিল ও প্যানডোয়ার এ্যাপসের সুবিধা এগুলোতে আছে বিধায় এগুলো ঢের বেশি উপযোগী। এর এক মস্ত দৃষ্টান্ত হলো এ্যাপল ওয়াচ যা এ বছরের প্রথম দিকে বাজারে ছাড়া হয়েছে। ৩৫০ ডলার থেকে ১৭ হাজার ডলার পর্যন্ত বিভিন্ন দামের আছে। এমন একটা ঘড়ি থাকা আইফোন থাকার সমান। এর ছোট স্ক্রিনেই অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। তবে বাজারে অন্যান্য ঘড়িও আছে যেখানে আরও কাজের সুযোগ আছে। এলজি কোম্পানির সর্বশেষ মডেল ‘ওয়াচ আরবেন’ দ্বিতীয় সংস্করণে এমন ব্যবস্থা আছে যে স্মার্টফোন কাছাকাছি না থাকলেও এই ঘড়ি দিয়ে কল করা যাবে। এটি গুগল এ্যানড্রয়েডে চলে। তবে এসব স্মার্টওয়াচের সীমাবদ্ধতাও আছে। যেগুলোতে টাচস্ক্রিন থাকে সেগুলোর ব্যাটারির আয়ু কম। এগুলোর স্ক্রিন এত ছোট যে, স্মার্টফোন দিয়ে কত রকমের কাজ আপনি সারতে চান সবগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। আপনার স্মার্টওয়াচের বাজেট যদি দেড় শ’ ডলারের কম হয় তাহলে এ বাজেট দিয়ে কিছু কিছু ব্র্যান্ডের ঘড়ি পাবেন যেগুলো বেশ কাজের। যেমন ফিটবিট চার্জ আপনাকে মোটিফিকেশন দেবে, সময় জানাবে, স্বাস্থ্যের অবস্থা জানাবে। এর ব্যাটারির আয়ুও দীর্ঘ। দাম ১৩০ ডলারেও কম। একই ভাবে গারমিন ভিভোফিট-২ এক শ’ ডলারে পাওয়া যাবে। তবে এই মুহূর্তে যেসব ঘড়ি আকার, রূপ, কাজ আর দামের দিক দিয়ে সর্বোত্তম ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে সেগুলো সম্ভবত অতি দামী এবং কম দামী ঘড়িগুলোর মাঝামাঝি। যেমন পেবল টাইম রাউন্ড। আড়াই শ’ ডলারের এই মডেলটি দেখতে সুন্দর। তবে পাতলা ও গোলাকার চেহারার কারণে একে স্মার্টওয়াচ বলে মনে হয় না। অথচ সুন্দর কাজ দেয়। এটি টাইমলাইনের মতো মূলত একই ডিজাইনের এবং একই সফটওয়্যারে চলে। সারাদিনের সমস্ত এ্যাপয়েন্টমেন্ট এখানে একই স্ট্রিমে রাখা যায়। এতে ই-আই স্ক্রিন আছে এবং ব্যাটারির আয়ু এ্যাপল ও স্যামসাংয়ের স্মার্টওয়াচের ব্যাটারির চেয়ে বেশি। এতে অবশ্য কোন টাচস্ক্রিন নেই এবং বিশেষ কোন অত্যাধুনিক এ্যাপ চালায় না। তবে এতে প্রতিদিন সন্ধ্যায় চার্জ দেয়ারও দরকার পড়ে না। বিভিন্ন ধরনের স্মার্টওয়াচের সুবিধা-অসুবিধা এবং দাম-দস্তরের কথা ভেবে ক্রেতাদের উচিত তাদের পছন্দের জিনিসটি বেছে নেয়া। স্মার্টওয়াচ যে থাকতেই হবে এমন কোন কথা নেই। বেশিরভাগ মানুষের তা না হলেও চলে। তবে বিভিন্ন কোম্পানি যেভাবে স্মার্টওয়াচ তৈরির কাজে লেগে গেছে এবং সেগুলোর বাজার যেভাবে আকর্ষিত করছে তাতে এগুলোর হাত থকে রেহাই পাওয়াও মুশকিল।
×