ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাতালদের উপদ্রবে অতিষ্ঠ ময়মনসিংহের রমেশ সেন রোডবাসী

দিনে শ’ শ’ গ্যালন মদ বিক্রি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৫ ডিসেম্বর ২০১৫

দিনে শ’ শ’ গ্যালন মদ বিক্রি

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ শহরের প্রাণকেন্দ্র রমেশ সেন রোডের ওপর প্রকাশ্য বিক্রি হচ্ছে প্রতিদিন শ’ শ’ গ্যালন ভেজাল মদ। কথিত পারমিটধারীদের নামে নির্বিচারে বেচা বিক্রি হওয়া এই ভেজাল মদ খেয়ে যে কোন সময় ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ আশঙ্কা সচেতন শহরবাসীর। মদের সঙ্গে রমেশ সেন রোডের যৌনপল্লীর প্রতিটি দোকানে প্রকাশ্য সেবন ও বিক্রি হচ্ছে গাঁজা। দিনে রাতে মদ, গাঁজা সেবন ও বিক্রিকে কেন্দ্র করে খুন-খারারি থেকে শুরু করে ঘটেছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। শহরে মাতালদের উৎপাতসহ এসব খুন-খারাবি ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দাবি উঠেছে রমেশ সেন রোড থেকে মদের দোকানটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার। স্থানীয় সূত্র জানায়, জমিদারি আমলে শহরের রমেশ সেন রোডে গড়ে ওঠা যৌনপল্লীর সঙ্গে গজিয়ে ওঠে আলোচিত মদের দোকানটি। প্রচলিত নিয়মমাফিক তালিকাভুক্ত অবাঙালী ও হিন্দু মাইনরিটি পারমিটধারীদের নামে নির্ধারিত পারমিটের টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারী কোষাগারে জমা দিয়ে সপ্তাহের দুই দিন লাইসেন্সি মদ উত্তোলন করে থাকেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের স্থানীয় উপ-পরিচালকের কার্যালয় থেকে পারমিট ইস্যু করার পর শহরের পাটগুদামের মদের ডিপো থেকে কেরু কোম্পানির সরকার র্নিধারিত মাত্রার মদ সরবরাহ পেয়ে থাকেন লাইসেন্সি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের স্থানীয় কর্তৃপক্ষীয় সূত্র জানায়, সরবরাহ করা মদ ৪০ শক্তিমাত্রায় থাকে। অর্থাৎ এই মদে ৬০ ভাগ এ্যালকোহল ও ৪০ ভাগ পানি থাকে। সরকার নির্ধারিত এ স্বাস্থ্যসম্মত মাত্রা ঠিক রেখে নির্দিষ্ট ওজনে সীলগালাযুক্ত বোতলে লাইসেন্সিরা মদ বিক্রির কথা। মদের মাত্রা ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য স্থানীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসে হাইড্রোমিটার রয়েছে। কিন্তু এ হাইড্রোমিটার দিয়ে কখনও অভিযান পরিচালনার কোন নজির নেই। অভিযোগ রয়েছে, কথিত তালিকাভুক্ত অবাঙালী মাইনরিটি পারমিটধারীদের বিপরীতে যৌনপল্লীর ভেতর এ মদ বেচা-বিক্রি চলছে ফ্রি-স্টাইলে। ৪০ শক্তিমাত্রার মদে ২Ñ৩ গুণ পানি মিশিয়ে ভেজাল করে কম ওজনের বোতলে, পলিপ্যাকে, পলিথিনে, প্লাস্টিকের কোমল পানীয়ের বোতলে সীলগালা ছাড়াই বিক্রি করা হচ্ছে দিনরাত। সন্ধ্যার পর রমেশ সেন রোড থেকে বের হয়ে উশৃঙ্খল যুবকরা শহরের ওল্ড পুলিশ ক্লাব রোড, স্বদেশী বাজার ও গাঙিনাপাড় সড়কের মতো ব্যস্ত ও বাণিজ্যিক এলাকায় মাতলামি করছে। মাতালদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে শহরবাসী। রাত সাড়ে ৮টায় মদের দোকান বন্ধ করার কথা থাকলেও রাতভর চলছে এ বেচা-বিক্রি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিয়মিত লাইসেন্সির বেচা-বিক্রি পরিদর্শন ও মনিটরিং করার কথা। লাইসেন্সি নিজে দোকানে উপস্থিত থেকে এ বেচা-বিক্রি তদারকি করার কথা। মদ কী মাত্রায় বিক্রি হচ্ছে, লাইসেন্সের শর্ত লঙ্ঘন হচ্ছে কি না সেটি দেখার কোন উদাহরণ নেই! লাইসেন্সির এক দাপুটের ম্যানেজার বিভিন্ন সংস্থার লোকজনের মদের দোকানে যাতায়াত নিয়ে রিতিমতো দম্ভোক্তি করে বেড়ান। লাইসেন্সির ম্যানেজার বলে দাবিদার আবুল কাশেম ও আব্দুল হামিদ বিভিন্ন সংস্থার লোকদের ম্যানেজ করে এ ব্যবসাকে নিরাপদ রাখতে সক্ষম হয়েছে। প্রচার রয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিভাগের স্থানীয় এক কর্মকর্তার বাসা ভাড়া ও বাজার খরচ সবই মেটানো হচ্ছে এই দোকান থেকে। এর বাইরে দাপুটে এক পরিদর্শককে প্রতিমাসে লাখ টাকার ওপরে মাসোহারা দিতে হচ্ছে বলে প্রচার রয়েছে। একই কার্যালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাকেও সমপরিমাণ নজরানা দিতে হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক এক কর্মকর্তার দাবি, রমেশ সেন রোডের পারমিটধারীদের দুই তৃতীয়াংশই ভুয়া। পারমিটধারীদের বাইরে কারও কাছে বিক্রির অনুমতি না থাকলেও লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে এটি চলছে ওপেন সিক্রেট। যৌনপল্লীর ভেতরে শতাধিক টং দোকানীসহ নানা জনের কাছে এই মদ বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্য। এদিকে শহরের রমেশ সেন রোডের যৌনপল্লীর ভেতর এই মদের কারবারকে ঘিরে প্রায়ই উত্তপ্ত ও রক্তাক্ত হচ্ছে ময়মনসিংহ শহর।
×