ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন সোনিয়া নিশাত আমিন

প্রকাশিত: ০৫:০০, ৬ ডিসেম্বর ২০১৫

অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন সোনিয়া নিশাত আমিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গবেষণা ও প্রবন্ধ সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-১৪২২’ পেলেন গবেষক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন। ছায়ানট মিলনায়তনে শনিবার বিকেলে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার হাতে এ পুরস্কারের সম্মাননা তুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর তামান্না ডেইজী পরপর তিনটি কবিতা আবৃত্তি করেন। পরে সোনিয়া নিশাত আমিনকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। সনদ তুলে দেন সেলিনা হোসেন। পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন তাসমিমা হোসেন। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, পুরুষনির্মিত ইতিহাসে নারীর ইতিহাস বরাবরই উপেক্ষিত হয়েছে। যদি ‘হিস্ট্রি সারভাইবাল অব ফাক্টস’ হয় তাহলে নারীর ইতিহাস ছাড়া সেটি সম্পূর্ণ হতে পারে না। সোনিয়া মননশীলতা ও সৃজনশীলতা এক করেছেন তার গবেষণার কাজে। ‘বাঙালী মুসলিম নারীর আধুনিকায়ন’ শীর্ষক তাঁর যে গবেষণা গ্রন্থ, সেখানে সোনিয়া ভিন্নধর্মী বিশ্লেষণ দিয়ে নারীর বিবর্তনের ইতিহাস তুলে এনেছেন। ১৮৭৬ সাল থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত- এই দীর্ঘ সময়ে নারীর ইতিহাসের নানা দিক, নানা অনুষঙ্গ তুলে এনেছেন। ইতিবাচক পরিবর্তন কিভাবে ইতিহাস গ্রহণ করেছে, সেটি সোনিয়া তার গবেষণার মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করেছেন। এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে সোনিয়ার ঢাকার নগরজীবনে নারী শীর্ষক একটি সম্পাদিত গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। চার শ’ বছরে নারীর বিবর্তনমূলক ইতিহাস তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন। বিচিত্র বিষয় নিয়ে এখানে ২১টি প্রবন্ধ আছে। সোনিয়া সম্পাদক হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বিষয়বস্তু নির্বাচন থেকে শুরু করে লেখক নির্বাচনে তিনি তার বিচক্ষণতার পরিচয় রেখেছেন। সোনিয়া এখানে বলেছেন, নারীর ইতিহাস একটি নতুন শাস্ত্র, তার এ বলার স্বরটি আমার ভাল লেগেছে। অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি আজকের অনুষ্ঠানের মধ্যমণি, পুরস্কৃত লেখক সোনিয়ার শিক্ষক। এ কারণে এটা আমার জন্য বিরল সৌভাগ্য। পাক্ষিক অনন্যাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। গুণীমানুষের মূল্যায়ন করলে সমাজ এগিয়ে যায়। আর সেটি না করতে পারলে সমাজ অন্ধকারের দিকে চলে যায়। এ কারণে এই ধরনের পুরস্কারের গুরুত্ব অনেক। সোনিয়া নিশাত তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আজ আমি তিনটি অনুভূতি বিশেষভাবে ব্যক্ত করার প্রয়াস পাচ্ছি। আর তা হলো গর্ব, আনন্দ ও বিনয়। গর্ব-আনন্দ এ কারণে যে, দীর্ঘ ২৫ বছর আমার গবেষণা জীবনের একটা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেলাম। ড. আমিন আরও বলেন, সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবারে নারীর প্রতি যে বৈষম্য কয়েক হাজার বছর ধরে বিদ্যমান, সমাজ নির্মাণে নারীর যে অর্ধেক ভূমিকাÑ সেটি কৌশলে অদৃশ্য করে দেয়া হয়েছে। শুধু অদৃশ্যই নয়, ক্ষেত্রবিশেষ তা বিকৃত করে তোলা হয়েছে। জ্ঞাননির্মাণে নারীর অংশগ্রহণ না থাকলে সেটি যেমন আংশিক হবে, তেমন বিকৃতও হবে। সভাপ্রধানের বক্তব্যে তাসমিমা হোসেন বলেন, আজ অনন্যার ২১তম সাহিত্যপুরস্কার দেয়া হলো। প্রথম পেয়েছিলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। তিনি আজ উপস্থিত আছেন। আমাদের কার্যক্রম খুব ছোট পরিসরে হলেও কাজটি গুরুত্ব দিয়ে করতে চেয়েছি। প্রতিবছরের মতো এবারও আমরা পুরস্কার দেয়ার জন্য অনেকের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সোনিয়ার নামটি আসাতে আমি নিজে তার বইগুলো সংগ্রহ করে পড়েছি। আমি নিজে ঋদ্ধ হয়েছি। আমার মনে হয়েছে, এ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মূল্যায়ন হওয়া দরকার। ড. সোনিয়া নিশাত আমিন বাংলাদেশের গবেষণা অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য এক নাম। তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। একই বিভাগ থেকে তিনি ১৯৭৭ সালে এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়ন করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমাজবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি দীর্ঘকাল ঊনিশ এবং বিশ শতকের বাংলার সামাজিক ইতিহাস বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন। ড. আমিন তরুণী বয়সে কলকাতায় অবস্থান করে মুক্তিযুদ্ধের আর্কাইভাল কাজের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখেন। ‘ছবির কবি হাশেম খান’ গ্রন্থের প্রকাশনা ॥ দেশীয় শিল্পসাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনন্য প্রবাদপুরুষ শিল্পী হাশেম খান। বাঙালী জাতিসত্তা জাগরণের প্রতিটি পর্বে তিনি তার রংতুলির ছোঁয়ায় সংগ্রামমুখর অভিযাত্রার অবদান রেখেছেন। আগামী ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল শিল্পী হাশেম খান তার জীবন পরিক্রমায় ৭৫ বছরে পদার্পণ করছেন। এ উপলক্ষে আগামী বছরজুড়ে চিত্রপ্রদর্শনী ও চিত্রকলা এ্যালবামের প্রকাশনাসহ বিবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে। এ অনুষ্ঠানমালার সূচনা পর্বে চন্দ্রাবতী একাডেমি ‘ছবির কবি হাশেম খান’ শীর্ষক এক সংকলনগ্রন্থ প্রকাশ করেছে। দেশের খ্যাতিমান ৫৫ লেখক এ সংকলনে শিল্পী হাশেম খানের প্রতি তাদের প্রীতিস্নিগ্ধ পঙ্ক্তিমালা নিবেদন করেছেন। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শনিবার বিকেলে গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সভাপতিত্ব করেন এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, কথাশিল্পী মাহফুজুর রহমান, শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম, পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চন্দ্রাবতী একাডেমির নির্বাহী পরিচালক কামরুজ্জামান কাজল। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় শিশুশিল্পীদের পরিবেশনায় আবদুল লতিফের লেখা ‘আমার দেশের মতো এমন দেশ কি কোথাও আছে’। এরপর তারা পরিবেশন করে নয়ীম গওহরের ‘নোঙর তোল তোল সময় যে হলো হলো’ এবং গোবিন্দ হালদারের সেই বিখ্যাত গান ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, হাশেম খান অন্যসব শিল্পীদের চেয়ে একটু আলাদা। তিনি চিত্রকলার পাশাপাশি আরও নানা কাজে নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন। তার শিল্পীসত্তা শুধু চিন্তার জগতে নির্দিষ্ট নয়। তাকে নিয়ে যে সঙ্কলনটি প্রকাশিত হলোÑ সেখানে যারা লিখেছেন তারা একেবারে অন্তরের অন্তস্থল থেকে শিল্পীকে নিয়ে লিখেছেন। চমৎকার মানুষের জন্য চমৎকার সব লেখা রয়েছে বইটিতে। রজনীকান্ত সেনের স্মরণে বহ্নিশিখার আয়োজন ॥ কবি রজনীকান্ত সেনের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে দুই পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানমালার প্রথম পর্বে ছিল আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আলোচক ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ। দ্বিতীয় পর্বের সূচনাতেই ‘প্রেমে জল হয়ে যাও গলে’ গানের সঙ্গে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে বহ্নিশিখার ৭ শিল্পী। এরপর তিনটি দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন বহ্নিশিখার শিল্পীরা। বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জে শুরু হয়েছে শিল্পী তৈয়বা বেগম লিপির একক প্রদর্শনী ॥ গ্যালারি স্পেসে শোভা পাচ্ছে স্টেইনলেস স্টিল রেজর ব্লেড দিয়ে তৈরি নারীদের হিল জুতো, হ্যান্ড ব্যাগ, সেলাইমেশিন, বাথটাব। আবার গ্যালারির কোথাও দেখা যাচ্ছে শরীরের বিভিন্ন স্থানের চামড়া ও চুলের থিমে আঁকা পেন্সিল ড্রইং। শিল্পী তৈয়বা বেগম লিপির তৈরি এ সকল শিল্প ও চিত্রকর্ম নিয়ে গুলশানের বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জে শুরু হয়েছে ‘নো ওয়ান হোম’ শীর্ষক প্রদর্শনী। শনিবার সন্ধ্যায় মাসব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন যৌথভাবে সমাজকর্মী খুশী কবির ও বাংলাদেশ ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানির রাষ্ট্রদূত ড. থমাস প্রিঞ্জ। আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি দর্শকের জন্য খোলা থাকবে। গান-কবিতার যুগলবন্দী ॥ পথচলার তিন দশকে পদার্পণ উপলক্ষে শনিবার ‘গান-কবিতার যুগলবন্দী’ সন্ধ্যার আয়োজন করে স্বপ্নকুঁড়ি। জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে যুগলবন্দীর এ আয়োজনে সঙ্গীত পরিবেশন করেন লালনকন্যা ফরিদা পারভীন। প্রথমেই তিনি গাইলেন দেশের গান ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’।
×