ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বাধীন গণমাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্র এবং সরকার অচল ॥ গওহর রিজভী

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৬ ডিসেম্বর ২০১৫

স্বাধীন গণমাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্র এবং সরকার অচল ॥ গওহর রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ছাড়া কোন দেশের গণতন্ত্র এবং সরকার চলতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গহওর রিজভী। অপরদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা যে ভাষায় কথা বলেন তা পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে ব্যবহার করা হয় না বলে মন্তব্য করেছেন টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান। শনিবার সকালে রাজধানীর ধানম-িতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কর্তৃক সংস্থাটির কার্যালয়ে আয়োজিত ‘সুশাসন ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠান ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রতিযোগিতা-২০১৫-এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. রিজভী বলেন, কোন দেশের স্বাধীনতা ও প্রেসকে বাধা দেয়ার ক্ষমতা কারও নেই। এমনকি মিডিয়াকে দমন করবে এমন ক্ষমতা এক সময় থাকলেও বর্তমানে কারও নেই। স্বাধীন সংবাদমাধ্যম হচ্ছে একটি সরকারের ভিত্তি। একটা সময় ছিল যখন মানুষ মিডিয়ার মুখ বন্ধ করতে নানা উদ্যোগ নিত। বর্তমানে কারও প্রতি শর্তারোপ করে মিডিয়া বন্ধ করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের সকল সরকারই মিডিয়াকে ইন্টারফেয়ার করে। যদিও তারা জানে যে তা করে তেমন লাভ নেই। মিডিয়াকে যারা বাধা দেন তারা জানেন যে, মিডিয়াকে ঘিরেই দেশের মূল ফাউন্ডেশন গড়ে উঠেছে ও সিভিলাইজেশন হচ্ছে। তাই ইন্টারফেয়ার করেও তাকে বাধা দেয়া যাবে না। এ সময় সরকার সরকারী বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়ে মিডিয়াকে চাপের মুখে রাখত কিন্তু বর্তমানে অধিক পরিমাণে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য কোন মিডিয়াকেই চাপিয়ে রাখা যায় না। প্রকৃতপক্ষে সব সরকার এটা জানে যে মিডিয়াই হচ্ছে গণতন্ত্রের ভিত্তি। যদিও মাঝেমধ্যে সব সরকারই সংবাদপত্রকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। তিনি বলেন, বর্তমানে সংবাদপত্রকে তার কাজে বাধা দেয়া কোন সমাজেই সুযোগ নেই। এ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সংবাদমাধ্যমকে বাধা দিয়ে কোন নিউজ দমন করা যায় না। কারণ এখন সামাজিক গণমাধ্যম অনেক শক্তিশালী। মিডিয়ার বাধা শুধু সরকার থেকেই নয় আরও বিভিন্ন দিক থেকে আসে। যেগুলো প্রতিহত করতে হবে। এছাড়া বিদেশ থেকে অনেক পর্যবেক্ষক আসে আমার কাছে। তারা বাংলাদেশের সাংবাদিকতার প্রশংসা করে। কিন্তু আমি জানি বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। এর মধ্যদিয়েও সাংবাদিকতা এগিয়ে যাচ্ছে। শত বাধা অতিক্রম করেই বাংলাদেশের সাংবাদিকরা এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন বাংলাদেশে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ওপরও পুরস্কার দেয়া হয়। এটা সাংবাদিকতার জন্য একটা ভাল দিক। কিছু সংবাদ মাধ্যমের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু গণমাধ্যম তাদের শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন না দেয়ার কারণে নেগেটিভ নিউজ করেন। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ড. আকবর আলী খান বলেন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যে ভাষায় কথা বলেন, পৃথিবীর কোন সভ্য দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সে ধরনের ভাষা ব্যববহার করেন না। এটা শুধু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, অনেক নাগরিক সংগঠনও এসব ভাষা ব্যবহার করছে। বাংলা ভাষা সম্ভবত এতো দুর্বল ভাষা নয়, এ ভাষাতেও মার্জিতভাবে কথা বলতে পারি। তিনি বলেন, টিআইবি সরকার বিরোধী প্রতিষ্ঠান নয়। আমরা টিআইবিতে দুর্নীতি নিয়ে কাজ করছি। টিআইবি সরকারের বন্ধু, আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশকে সুখী সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো যে, বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক দল আসে-যায়, সবাই টিআইবিকে শত্রু বলে মনে করে। কিন্তু টিআইবি মোটেও শত্রু না, টিআইবি সহযোগিতা করতে চায়, সেই সহযোগিতা হচ্ছে না। আর সহযোগিতা না হওয়ার কারণ হলো, আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কেউ একটা অন্য ধরনের কথা বললেই, তাকে খুব খারাপ বলে মনে করা হয়। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, যারা উচ্চপদধারী হন। ‘আমরা কোন অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেব না’ বলে তারা শপথ গ্রহণ করেন। অথচ তারাই বলে, ‘আমার দলের লোকজনকে কেন চাকরি দেয়া হচ্ছে না’। অথচ তাদের উচিত সবাইকে চাকরি দেয়া, কিন্তু সেটা করা হয় না। আবার যদি কোন সমালোচনা করা হয়, তাহলে মনে করে তাকে ব্যক্তিগত সমালোচনা করা হচ্ছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান পরিচালিত অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র সাংবাদিক এটিএন বাংলার প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল। অনুষ্ঠান শেষে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হয়েছেন, প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে বিজয়ী হয়েছেন, যমুনা টেলিভিশনের ইনভেস্টিগেশন সেলের সম্পাদক মিজান মালিক ও নিজস্ব প্রতিবেদক সাজ্জাদ পারভেজ। একই সঙ্গে টেলিভিশনটির ক্যামেরাম্যান কাজী মোহাম্মদ ইসমাইলকেও বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। অপরদিকে প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত ‘জলবায়ু ও সুশাসন’ বিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের নিজস্ব প্রতিবেদক জিএম মোস্তাফিজুল আলম বিজয়ী হন এবং চিত্রগ্রাহক জাহাঙ্গীর আলম রতনকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে বিজয়ী সাংবাদিকদের একটি সম্মাননা, ক্রেস্ট ও এক লাখ টাকার চেক দেয়া হয়েছে। আর দুইজন চিত্রগ্রাহককে পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয়।
×