ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ হানাদারমুক্ত

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৬ ডিসেম্বর ২০১৫

আজ হানাদারমুক্ত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ আজ ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত দিবস। মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বসিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ঢল নামে। পাড়া-মহল্লায় চলে আনন্দ মিছিল। ‘জয় বাংলা’ সেøাগানে ফেটে পড়ে জেলার মানুষ। এছাড়া এদিন মুক্ত হয় লালমনিরহাট, চাঁদপুরের কচুয়া ও নেত্রকোনার দুর্গাপুর। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। যশোর ॥ আজ ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনেই যশোর জেলা পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়েছিল। এদিন বিকেলে যশোর সেনানিবাস ছেড়ে পালিয়ে যায় পাক হানাদার বাহিনী। প্রথম শত্রুমুক্ত হয় যশোর জেলা। যশোরেই প্রথম উঠেছিল বিজয়ী বাংলাদেশের রক্ত সূর্য খচিত গাঢ় সবুজ পতাকা। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স-মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) বৃহত্তর যশোর জেলার (যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল) উপ-অধিনায়ক রবিউল আলম জানান, ৭১ সালের ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচ- যুদ্ধ হয়। এ সময় মিত্রবাহিনীও সীমান্ত এলাকা থেকে যশোর সেনানিবাসসহ পাক আর্মিদের বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা ও গোলা নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে পর্যদস্তু পাকবাহিনী ৫ ডিসেম্বর থেকে পলায়ন শুরু করে। লালমনিরহাট ॥ ৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট হানাদার মুক্ত দিবস। লালমনিরহাট জেলায় (তৎকালীন মহকুমা) পাটগ্রাম উপজেলায় হাসর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গনের ৬ নং সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ছিল। ৯ মাসের সম্মুখযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা চার পাশ দিয়ে পাকিস্তানী সেনা ও অবাঙালীদের ঘিরে ফেলে। রাজাকাররা বিষয়টি বুঝতে পেরে বিনা বাধায় মুক্তিযোদ্ধাদের শহরে প্রবেশ করতে দেয়। তারা পালিয়ে আশ্রয় নেয়। এ দিবস পালনে নানা কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। শহরের প্রধান প্রধান সড়কে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে তাৎপর্যপূর্ণ স্মৃতি নিয়ে আলোচনাসভা হবে। দিনাজপুর ॥ ৬ ডিসেম্বর বীরগঞ্জ উপজেলা শক্রমুক্ত দিবস। এই দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে বীরগঞ্জ উপজেলাকে শক্রমুক্ত করে মুক্তিবাহিনী এবং মিত্রবাহিনীর যোদ্ধারা। দিবসটি উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে স্থানীয় সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। বীরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির আয়োজনে বেলা ১১টায় বর্ণাঢ্য পতাকা র‌্যালি বের হবে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে বিকেলে স্থানীয় পুরাতন শহীদ মিনার চত্বরে আলোচনাসভা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। ঝিনাইদহ ॥ ৬ ডিসেম্বর ঝনাইদহ হানাদারমুক্ত হয়। ২৫ মার্চ রাতে পাকবাহিনীর গণহত্যা শুরু ও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার খবর ঝিনাইদহে পৌঁছলে ছাত্র-জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় পাকসেনা নিধন। ৩০ মার্চ রাতে শৈলকুপার গাড়াগঞ্জে মুখোমুখি যুদ্ধে শ’খানেক পাক সেনা নিহত হয়। কচুয়া ॥ আজ ৬ ডিসেম্বর কচুয়া মুক্ত দিবস। খান সেনারা জানতে পারেন কচুয়াকে মুক্ত করতে মুক্তিবাহিনী সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ওই সময় খান সেনারা চারদিকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর আঘাতে পর্যদস্ত হচ্ছিল। বিভিন্ন অঞ্চল ছেড়ে তাদের দল পালাতে শুরু করেছে। হানাদার মুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ খুলে আনন্দ উল্লাসে কচুয়া বাজারে ঢুকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) ॥ ৬ ডিসেম্বর দুর্গাপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার দামাল ছেলেরা ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুরকে মুক্ত করে। পাক হানাদার বাহিনীর মেজর সুলতানের নেতৃত্বে দুর্গাপুরের মিশনারিজ এলাকা বিরিশিরিতে একটি শক্তিশালী পাকসেনা ঘাঁটি গড়ে উঠেছিল, আর এখানে বসেই পাকসেনারা বাংলার কুখ্যাত দালাল, আলবদর, রাজাকারদের সহযোগিতায় নিয়ন্ত্রণ করত দুর্গাপুর সদরসহ কলমাকান্দার সীমান্ত এলাকা লেংগুড়া, নাজিরপুর এবং দুর্গাপুরের বিজয়পুর। নীরবে কেটে গেল উজিরপুর মুক্ত দিবস স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল থেকে জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে পরাস্থ হয়ে ১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর ভোরে ৫৫ জন পাকসেনা ও ৩৫ জন রাজাকার, আলবদর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। ফলে সারাদেশের চূড়ান্ত বিজয়ের ১১ দিন আগে বরিশালের উজিরপুর হয়েছিল শত্রুমুক্ত। সেই থেকে দীর্ঘদিন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ৫ ডিসেম্বর উজিরপুর মুক্ত দিবস পালন করে আসলেও সরকারী উদ্যোগে দিবসটি উপলক্ষে কোন কর্মসূচী পালন না করায় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। নীলফামারী স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী থেকে জানান, শনিবার পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত করেছিল মুক্তিযোদ্ধা নীলফামারী ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ী ইউনিয়নের চিলাহাটি। সেই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও দিবসটি পালন করেছে চিলাহাটি ভোগডাবুড়ী মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট। দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কার্যালয় হতে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিতে অংশগ্রহণ করেন ভোগডাবুড়ী ইউনিয়নের সকল মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সন্তান, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। র‌্যালিটি চিলাহাটির প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
×