স্টাফ রিপোর্টার ॥ মৌলবাদের বিরুদ্ধে আরেকটা যুদ্ধ করতে হবে। নইলে জাতি হিসেবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও সিরিয়ার মতো অকার্যকর হতে হবে।
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে এভাবেই সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহিদুল হক বলেছেন, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করি তাদের সোচ্চার হতে হবে। নইলে এ জন্য খেসারত দিতে হবে।
রাজধানীর রাজারববাগ পুলিশ লাইনে রবিবার দুপুরে ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধযোদ্ধাদের’ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। পুলিশ প্রধান বলেন, ‘আমরা যদি সবাইকে নিজেদের মতো গুটিয়ে রাখি, ভয়-ভীতির উর্ধে না যেতে পারি, নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মুখ না খুলি ও সোচ্চার না হয়- তাহলে আমাদেরও দেশটা ওই অবস্থা হবে। বলেছেন- মনে রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মৌলবাদ পরস্পর বিপরীতমুখী। ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কারণেই দেশে যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে। জাতি হিসেবে কলুষ মুক্ত হচ্ছি। তবে আমাদের একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে অপশক্তির যে উত্থান, জঙ্গীবাদের যে উত্থান তা সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী।
শহিদুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো- একটি গণতান্ত্রিক, শোষণ ও দারিদ্রমুক্ত প্রগতিশীল সমাজ বাংলাদেশে থাকবে। কিন্তু জঙ্গীরা আমাদের নিয়ে যাচ্ছে শত শত বছরের পুরনো সেই মৌলবাদের দিকে। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে রাজারবাগে পুলিশ থ্রি নট থ্রি রাইফেল থেকে পুলিশ প্রথম পাক সেনাদের গুলি করেছিল। কিন্তু আমরা তাদের ঠিকমতো মূল্যায়ন করতে পারেনি। ২০০৯ সালে পুলিশ কমিশনার হওয়ার পর তাদের আনাচে-কানাচে থেকে খুঁজে এনে সম্মাননা দিয়েছি। রাজারবাগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস জাতিকে জানিয়েছি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকার পরও আমরা বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব পাইনি। অনেক পরে ২০১১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাতের আঁধারে আক্রমণ চালিয়েছিল। তৎকালীন পুলিশ সদস্যরা প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ দিন দেড় শতাধিক পুলিশ সদস্য পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। এ ছাড়া অসংখ্য পুলিশ সদস্য অমানুষিক নির্যাতনের স্বীকার হন। সেসব পুলিশ সদস্য ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সম্মানে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ২৫ মার্চ রাতে শহীদ ও আহত ৪৩ পরিবারকে সম্মাননা চেক ও সনদ বিতরণ করা হয়। এদের মধ্যে যারা ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ এমন ১২ পরিবারকে ৫ লাখ এবং যুদ্ধ-পরবর্তী মারা গেছেন এমন ৮ পরিবারকে ৪ লাখ টাকার চেক বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া জীবিত ২৩ প্রথম প্রতিরোধযোদ্ধাদের সম্মাননা সনদ প্রদান করা হয়।