ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বিজয়ের মাসে পাকিপ্রেমী নিপাত যাক

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৭ ডিসেম্বর ২০১৫

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বিজয়ের মাসে পাকিপ্রেমী নিপাত যাক

বিজয়ের মাসের শুরুতেই আমরা একটি নয় কয়েকটি ভাল খবর পেয়েছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যখন প্রায় শেষের পথে, দ্বিধাদ্বন্দ্ব সংঘাত আর ষড়যন্ত্র এড়িয়ে সাকা, মুজাহিদের মতো অপরাধীরা যখন ঝুলে গেছে হেড কোয়ার্টার পাকিস্তানেরও তখন টনক নড়ে উঠেছে। আস্ফালন আর হম্বিতম্বি ছাড়া এই জাতি কিছুই জানে না। বাংলাদেশ ও তার শিকড় এখন কোথায় না জেনেই ইমরান খানদের এই হাঁকডাক তাই পর্বতের মূষিক প্রসব। সেটা যে কতটা সত্য নিজামীর সাজা কমানোর আবেদনেই তা স্পষ্ট। বাংলাদেশে খন্দকার পদবীধারী ভাল মানুষের মন্দ কপাল, এ দেশে তাদের নাম ও গৌরব ধুলায় মিটিয়ে দেয়ার জন্য অনেক খন্দকারের জন্ম হয়। মীরজাফর খন্দকার মোশতাকের পর আরেক খন্দকার যোগ হয়েছে এখন সে তালিকায়। রাজাকারদের উকিল, তাদের আত্মার আত্মীয় একদা ভরসাস্থল বিএনপির এই নেতা সাজা কমানোর জন্য দোষ স্বীকার করে এখন বলছে, কেবল কমাতে বলছি। দোষ স্বীকার করিনি। দোষই যদি না করে তো বাড়া কমার প্রশ্ন ওঠে কোথা থেকে? আর কলসি-দড়ি প্রস্তুত না হবার আগেই দোষ মেনে নেয়ার এই প্রবণতা বলে দিচ্ছে রাজাকাররা একাত্তরে যেমন ভয় পেয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল, এখনও তাদের বুকের ছাতি ইঁদুরের মতো। বদলে যাওয়া বাঙালীর বিশ্বাস অর্জন বা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যতই খেলুক না কেন তারা জানে ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করে ধোলাই দিতে ভুল করবে না । তাই মৃত্যু যখন আসন্ন ফাঁসির ভয়ে দোষ স্বীকার করে বিজয়ের মাসটিকে নতুনভাবে গর্বিত করার সুযোগ এনে দিল এই যুদ্ধাপরাধী। বিজয়ের মাসে এ অর্জন হাল্কা কিছু নয়। আজকাল দেশে-বিদেশে বাঙালী বা বাংলাদেশীদের মতিভ্রমও বেপথে যাওয়ার হিড়িক দেখে শঙ্কিত হতে হয়। কিছু অপরাধ এমন দৃঢ়মূল হয়ে যাচ্ছিল মনে হচ্ছিল আর কোন দিনও মুখ তুলে তাকাবে না বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ এক অতীত, চেতনা কোন বিস্মৃত স্মৃতির নাম কিন্তু সময় তার বিচারে ভুল করে না। হিন্দু বা অমুসলমানদের মালাউন কিংবা অমানুষ ভেবে হত্যা করা যায়, দায় এড়ানো যায় না। সে দায় চল্লিশ বছর পর নিজামীর মতো পাঁড় জামায়াতীর কণ্ঠে, দোষ স্বীকার করুক আর না-ই করুক তাদের মনোবল এখন জিরো। এই বাংলাদেশ নানা সংঘাত, কুয়াশা, বুদ্ধিবৃত্তির হীন ষড়যন্ত্রে মুষড়ে পড়লেও জবাব দিতে ছাড়ে না। বিজয়ের এই মাসে রাজাকার কুলশিরোমনির নতমস্তক ভয়ার্ত হৃদয় আর অপরাধবোধ তার উজ্জ্বল প্রমাণ। বিজয়ের মাসে পাকিস্তানীদের এ যাবৎ আরেকটি পরাজয়ের উল্লেখ না করে পারছি না। বাংলাদেশে নিরীহ জনগণের জান কতল করা, গণধর্ষণে বিশ্বাসী, ঘাতকদের ফাঁসি দিলে তাদের গাত্রদাহ হয়, অথচ তাদের দেশে তারা তালেবানদের ঝোলাতে কসুর করেনি। মুখে ও মনে এই দোদিল বান্দা কলমা চোর পাকিরা পদে পদে পরাজিত হলেও তা মানতে চায় না। পাকিদের আরও জানা দরকার আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিচক্ষণ বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন নেতাদের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন। বিজয়ের মাস শুরু হতে না হতে জননেত্রীর এই সম্মান বাংলাদেশের গৌরবকে নতুন জ্যোতি দিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, রাজাকার ও তাদের ছানা-পোনারা জানে- আজ যদি আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতাম; তাহলে ছেলেরা ক্রিকেট মাঠে দ্বাদশ ব্যক্তি হয়ে জীবন কাটাত। ভারতের দিকে তাকালেও তা বোঝা যাবে। কুমীরের ঐ এক ছানা বাবু সৌরভ গাঙ্গুলী এখনও তাদের আখেরী অহঙ্কার, না আছে নতুন কেউ, না কোন সম্ভাবনা। খানদের ঘাম মোছার তোয়ালে দেয়া, বল পরিবর্তন করে দেয়ার কাম বা মাঠে পানির গ্লাস হাতে দৌড়াতে হতো আমাদের। সে জায়গায় এই দেশ পাকিস্তান ভারতের বুকে কাঁপন ধরিয়ে সিরিজ জিতে, আমাদের ছোটখাটো মুস্তাফিজ এখন বিশ্বসেরা একাদশে। ডিসেম্বরে এই খবর মানে মুক্তি ও বিজয়ের মুকুটে নতুন এক পালকের সংযোজন। আর খুব দূরে নয় সেদিন, যে দিন ছদ্মবেশী রাজাকাররাও লেজগুঁটিয়ে পালাবে। সাহস আর ধৈর্য থাকলেই সম্ভব। আস্ফালন, ঔদ্ধত্য, আর অহঙ্কার টেকে না। আওয়ামী লীগ সার্থক না ব্যর্থ সেটা এখানে কিন্তু বিচার্য নয়। তাদের দলগত ত্রুটি বা ভুলের মাশুল তাদেরই দিতে হবে। কিন্তু শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা আর অকুতোভয় নেতৃত্ব একদিন উদ্ভাসিত হবেই। বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের সংগ্রাম ছিল দেশ স্বাধীন করার, শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারে ইতিহাসকে পরিবর্তন করে স্বদেশ নির্মাণের পথ করে দিয়ে যাচ্ছেন, স্বদেশ বললাম এ কারণে এই দেশে আত্মঘাতী রাজাকার নব্য রাজাকার সন্ত্রাসী ধর্মীয় উন্মাদ আর পাকি প্রেমীদের পরাজয় হলেই এ দেশ সবার স্বদেশভূমি হয়ে উঠবে। এটাই বাস্তবতা।
×