ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টেলিগ্রাফের সঙ্গে সাক্ষাতকারে ফরাসী ডানপন্থী নেত্রী লা পেন

ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগ ॥ জোটের বিলুপ্তিরই সূচনা

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৭ ডিসেম্বর ২০১৫

ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগ ॥ জোটের বিলুপ্তিরই সূচনা

ব্রিটিশ জনগণ যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার পক্ষে ভোট দেয়, তবে তা হবে আধুনিক সময়ের বার্লিন প্রাচীর ভেঙ্গে দেয়ারই নামান্তর এবং ব্লকটির অবসান পর্বের সূচনা। ফ্রান্সের ফ্রন্ট ন্যাশনালের নেত্রী ম্যারি লা পেন এ কথা বলেছেন। খবর টেলিগ্রাফ অনলাইনের। চলতি সপ্তাহে ডেনমার্ক তাদের ইইউ সম্পর্কিত সর্বশেষ গণভোটে ইইউ আরও নিয়মকানুন মেনে নিতে অস্বীকার করে। একই সময়ে ব্রিটেনে নবাগত ইইউ কর্মীদের কল্যাণ ভাতা হ্রাস করতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের দাবি ব্রাসেলসে প্রত্যাখ্যান হয়। তখন ফ্রান্সের চরম ডানপন্থীদের ওই নতুন ও নম্র নেত্রী স্পষ্টতই বড় রকমের স্বপ্ন দেখছেন। লা পেন বলেন, ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগ হবে সমগ্র ইউরোপীয়র জন্য চমৎকার অসাধারণ ঘটনা। কারণ তারা স্বাধীনতা চায়। তিনি তার দেশের রবিবারের আঞ্চলিক নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রচার অভিযানের শেষ কর্মব্যস্ত দিন শনিবার টেলিগ্রাফের সঙ্গে সাক্ষাতকার দিচ্ছিলেন। এ নির্বাচনে তার পার্টি নতুন সাফল্য অর্জন করবে বলে জনমত জরিপে দেখা যায়। তিনি বলেন, বাস্তব কথা হলো, এটি হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবসানের সূচনা। আমি ব্রাসেলসকে বার্লিন দেয়ালের সঙ্গে তুলনা করছি। যদি গ্রেট ব্রিটেন সেই দেয়ালের অংশবিশেষ ভেঙ্গে দেয়, তা হলে সেটি শেষ হয়ে যাবে। আর যদি ব্রিটেন ইউরোপীয় প্রকল্পে গহ্বরের সৃষ্টি করে, তবে লা পেন তার কট্টর অভিবাসীবিরোধী ইউরোপবিরোধী, বিশ্বায়নবিরোধী মতবাদ নিয়ে ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হতে পারলে ইইউতে ফ্রান্স থাকবে কিনা সেই প্রশ্নে গণভোটের আয়োজন করতে চাইবেন। লা পেনের জন্য ক্ষমতায় যাওয়ার প্রক্রিয়া রবিবারই শুরু হয়েছে। যদি জরিপের ফলাফল সঠিক হয়, তবে সেদিনের নির্বাচনে ফ্রান্সের ১৩টি নতুন সুপার রিজিয়নের মধ্যে ৬টিতে তার দল প্রথম দফার বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। এ সাফল্যকেই তিনি ২০১৭ সালের ফরাসী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ভিত্তি হিসেবে দেখিয়ে এসেছেন। সম্প্রতি এক সমাবেশে লা পেন মুসলিমবিরোধী রাজনীতির আশ্রয় নিয়ে সতর্ক করে দেন। ‘সংবিধানের জায়গায় শরিয়া আসবে, আমাদের আইনের স্থলে আসবেন চরমপন্থী ইসলাম, আমাদের সব নারীকে বোরকা পরিয়ে দেয়া হবে।’ কিন্তু এখন ফ্রন্ট ন্যাশনালের (এফএন) কর্মসূচী খুবই সতর্কতার সঙ্গে প্রচার করা হচ্ছে। তিনি এখন ফ্রান্সের ৫০ লাখ মুসলিমকে ফ্রন্ট ন্যাশনালের পক্ষে ভোট দিতে বলেন। তিনি বলেন, এফএনের উত্থান মধ্যপন্থী মুসলিমদের ইসলামিক স্টেটের শিবিরে ঠেলে দিচ্ছে। এমন মতকে তিনি অপমানজনক বলে দেখতে পান তাদের ইসলামী মৌলবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে গণ্য না হওয়ার সর্বোত্তম পথ হলো এফএনকে ভোট দেয়া। এক নতুন ফ্রন্ট ন্যাশনালের অপেক্ষাকৃত নরমপন্থী নেতা হিসেবে লা পেন তার আবেদনের ক্ষেত্রকে সচেতনভাবে বাড়ানোর উদ্যোগ নেন। সেই উদ্দেশ্যে তিনি এক দশকের বড় মন্দাজনিত অসন্তোষ, বৃহৎ ইউরোপের ব্যর্থতা এবং এখন ইসলামিক স্টেটের উত্থানজনিত কারণে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সৃষ্ট নতুন ভীতিভাবকে কাজে লাগান। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোকে যখন সরকার তার সমর্থিত কয়েকটি প্রস্তাব গ্রহণ করে, তখন তিনি উৎফুল্লচিত্তে ছিলেন। এসব প্রস্তাবের মধ্যে ছিল সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া, পুলিশকে আরও অস্ত্র সজ্জিত করা এবং সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত ও দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ফরাসী নাগরিকত্ব বাতিল করা। তার পরও লা পেন গোয়েন্দাগিরির দোষত্রুটির দায়ে ওলাঁদ সরকারকে দোষারোপ করেন। এ দুর্বলতার সুযোগেই জানাশোনা জিহাদীরা ফ্রান্সে অবাধ তৎপরতা চালিয়ে পানশালা, রেস্তরাঁ ও বাতাঁক্লা কনসার্ট হলে ১৩০ জনকে হত্যা করে।
×