ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থায়নে সহায়তা দিচ্ছে চীন সরকার

চার কাস্টমস হাউসে বসছে কার্গো স্ক্যানার

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ৭ ডিসেম্বর ২০১৫

চার কাস্টমস হাউসে বসছে কার্গো স্ক্যানার

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ দেশের চার কাস্টমস হাউসে বসানো হচ্ছে কন্টেনার স্ক্যানিং সিস্টেম। ফলে বৈধ ব্যবসায় সহায়তা এবং অবৈধ মালামালের চালান প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। সেই সাথে কাস্টমস রাজস্ব বাড়বে ও জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের পোর্ট সিকিউরিটির বিভিন্ন ধারা বা কোর্ড প্রতিপালন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থা প্রবর্তনে মোট ব্যয় হবে ১১৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৩ কোটি ৮৬ লাখ এবং চীন সরকারের অনুদান থেকে ৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। আগামী বছর ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, শুধু রাজস্ব আদায়ই নয়, ইন্টারন্যাশনাল গুড প্র্যাকটিসের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এবং কর প্রশাসনকে আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও যুগোপযোগী করে তোলার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এসব কার্যক্রমের অনেকাংশই ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে এবং কিছু বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এসব কর্মপরিকল্পনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যুগোপযোগী করনীতি প্রণয়ন, দলিলনির্ভর পদ্ধতি পরিহার করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাণিজ্যিক হিসাব সংরক্ষণ ও অনলাইন পদ্ধতিতে কর পরিশোধের ব্যবস্থা করা, প্রযুক্তিনির্ভর তথ্য ভা-ারকে কাজে লাগিয়ে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-শুল্ক ও কর কর্মকর্তা-বাংলাদেশ ব্যাংক ও করদাদের মধ্যে পারস্পরিক নেটওয়ার্কিং বৃদ্ধির মাধ্যমে কর ফাঁকি রোধ, করদাতা ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন, ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন নিশ্চিতকরণসহ ট্যাক্সপেয়ার্স সার্ভিস নিশ্চিত করা। তিনি জানান, আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এনবিআর গঠনের ধারাবাহিকতায় বসানো হচ্ছে এ স্ক্যানারগুলো। এগুলো অত্যন্ত অত্যাধুনিক ও প্রযুক্তিসম্পন্ন। স্ক্যানারগুলো বসানো হলে আমদানি রফতানিতে পণ্য ক্লিয়ারিংয়ে ঝামেলা এবং সময় কমে যাবে। এখন আর কন্টেনার খুলে মালামাল পরীক্ষা করার দরকার হবে না। স্ক্যানিং করলে সব পরিষ্কার দেখা যাবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যেই সহায়তা দেয়ার বিষয়টি চীন সরকার নিশ্চিত করছে। কন্টেনার স্ক্যানিং সিস্টেমের আওতায়ভুক্ত হতে যাওয়া কাস্টমস হাউসগুলো হচ্ছেÑ বেনাপোল কাস্টমস হাউস, মংলা কাস্টমস হাউস, চট্রগ্রাম কাস্টমস হাউস এবং কমলাপুর আইসিডি কাস্টমস হাউস। পরিকল্পনা কমিশনের মতামতা দিতে গিয়ে পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ সফিকুল আজম জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মাধ্যমে দেশের ৪টি কাস্টম হাউসে কন্টেনার স্ক্যানার স্থাপন করা হবে। এর ফলে কার্গো হ্যান্ডলিং সহজতর ও নিরাপদ হবে এবং সময় কম লাগবে। কাস্টম হাউসগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, যা বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে। এসব বিবেচনায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদেও নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সংক্রান্ত প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রুত খালাস নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে স্ক্যানারের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের রফতানি কার্গো এলাকায় এ কন্টেনার স্ক্যানার ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বেনাপোল কাস্টম হাউস, আইসিডি কমলাপুর ও মংলা কাস্টম হাউসে এ জাতীয় স্ক্যানার নেই। চট্রগ্রামে বন্দরে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এবং মংলা, বেনাপোল ও কমলাপুর আইসিডিতে কন্টেনার স্ক্যানিং সুবিধা প্রবর্তনের লক্ষ্যে এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। চীনের অনুদানে এ বিষয়ক একটি প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) পরিকল্পনামন্ত্রী ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছেন। এরপর ১১৯ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হলে ২০১৫ সালের অক্টোবরে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তের আলোকে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করে অনুমোদনের জন্য আবার পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্র জানায়, কর ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে ইতোমধ্যে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ প্রণীত হয়েছে, যা ২০১৬ সালের জুলাই হতে বাস্তবায়নের প্রস্তুতি চলছে। কাস্টমস আইন-২০১৫ এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা এখন মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপন করার প্রস্তুতি চলছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছর হতে এটি বাস্তবায়ন করার প্রস্তুতি রয়েছে। ডাইরেক্ট ট্যাক্স কোডের খসড়া প্রণীত হয়েছে, যা প্রয়োজনীয় পর্যালোচনা ও স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণ এবং রোডম্যাপ তৈরি হয়ে এখন চূড়ান্তের পর্যায়ে রয়েছে। অন্যদিকে কাস্টমসের আধুনিকীকরণ ও সংস্কারের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী কাস্টমস ব্যবস্থায় অনুসৃত সর্বোত্তম পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পণ্যের শুল্কায়ন ও পণ্য ছাড়করণ প্রক্রিয়া অটোমেশনের লক্ষ্যে কাস্টমস স্টেশনে ইতোপূর্বে ব্যবহৃত অটোমেটেড সিস্টেম ফর কাস্টমস ডাটা পদ্ধতির সর্বশেষ ভার্সন অটোমেটেড সিস্টেম ফর কাস্টমস ডাটা ওয়াল্ড প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ব্যাংকসমূহের সঙ্গে ঋণপত্রের (এলসি) তথ্যাদি বিনিময়ের লক্ষ্যে ই-এলসি বাস্তবায়ন কাজ চলছে। পণ্য খালাসের সঙ্গে জড়িত একাধিক সংস্থার কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন এবং সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে একটি উইন্ডোর আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে বাণিজ্য সহজীকরণের লক্ষ্যে একাধিক দেশে কার্যকর ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে নজিবুর রহমান বলেন, জনকল্যাণে রাজস্ব আহরণ এবং সেবাধর্মী করদাতাবান্ধব প্রশাসন গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি। তারই একটি অংশ হচ্ছে এ স্ক্যানার স্থাপন। তিনি বলেন, আমার কাজ হচ্ছে সুশাসিত, স্বচ্ছ এবং জনসেবার আদর্শে উজ্জীবিত এনবিআর প্রতিষ্ঠা করা।
×