ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীকাল ৮ ডিসেম্বর ভালুকা মুক্ত দিবস

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ৭ ডিসেম্বর ২০১৫

আগামীকাল ৮ ডিসেম্বর ভালুকা মুক্ত দিবস

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভালুকা, ময়মনসিংহ ॥ আগামীকাল ৮ ডিসেম্বর ভালুকা মুক্ত দিবস । ১৯৭১ সনের এই দিনে পাক হানাদার মুক্ত হয় ভালুকা । ১৯৭১ সনের ৭ মার্চের ভাষনে উদ্বুদ্ধ হয়ে ৭১ এর ১৭ এপ্রিল’ বৃটিশ ভারত সেনাবাহিনীর (অবঃ) সুবেদার তৎকালীন ভালুকা থানা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আফছার উদ্দীন ১ টি মাত্র রাইফেল ও ৮ জন সদস্য নিয়ে মল্লিকবাড়ী বাজারে খেলু ফকিরের বাড়ীতে গোপনে মুক্তি বাহিনীর দল গঠন করেন। অসীম সাহসীকতায় কয়েকদিনের মধ্যেই তার বাহিনী ভালুকা থানা দখল করে ১৫/১৬ টি রাইফেল ও একটি এল, এম, জি ও প্রচুর গোলাবারুদ সংগ্রহ করে শক্তি অর্জন করেন। এর কয়েক দিনের মাথায় কাওরাইদ থেকে ক্ষীরু নদী দিয়ে ভালুকা থানায় আসার পথে পনাশাইল নামক স্থানে পাক বাহিনীর অস্ত্র ও গোলা-বারুদ সহ একটি নৌকা মুক্তিযোদ্ধারা আটক করে প্রচুর অস্ত্রসস্ত্র সংগহ করেন। পরে ভারতের মেঘালয় হতে প্রশিক্ষন সহ প্রচুর অস্ত্র ও গোলা বারুদ নিয়ে আশার পর এটি একটি শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত হয়। আফছার উদ্দীনের ৮ সদস্যের মুক্তিবাহিনীর দলটি সাড়ে ৪ হাজারে উন্নীত হয়ে এফ জে ১১ নং সেক্টরের ময়মনসিংহ সদর দক্ষিন ও ঢাকা সদর উত্তর সাব সেক্টর অধিনায়ক মেজর আফছার ব্যাটেলিয়ন নামে পরিচিতি লাভ করে। যুদ্ধকালীন আহত মুক্তিযোদ্ধাদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার রমজান আলীর তত্বাবধানে ৫ জন ডাক্তার ১০ জন সহকারী চিকিৎসক ও ৪ জন নার্সের সমন্বয়ে আফছার ব্যাটেলিয়ান হাসপাতাল নামে একটি ভ্রাম্যমান হাসপাতাল পরিচালিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আর্ন্তজাতিক রেডক্রস সংস্থার সহায়তায় এই হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ভালুকার মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। ৭১ এর ২৫ জুন শুক্রবার সকাল হতে পরদিন শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ভালুকা গফরগাঁও সড়কের ভাওয়লিয়াবাজু নামক স্থানে শিমুলিয়া নদীর পাড়ে পাক বাহিনীর সাথে দীর্ঘ ৩৬ ঘন্টা আফছার বাহিনীর একটানা যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে তরুন মুক্তিযোদ্ধা অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র মল্লিকবাড়ী গ্রামের আব্দুল মান্নান শহীদ হন। আহত হয় ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধারা নদীর পশ্চিম দিক হতে একটানা দুদিন সম্মুখ যুদ্ধ করায় শতাধিক পাক সেনা নিহত হয়। এ যুদ্ধের খবর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, অল-ইন্ডিয়া রেডিও ও বিবিসি হতে ফলাও করে সম্প্রচার করা হয়। এই যুদ্ধের পর ভালুকায় পাক বাহিনীর ক্যাম্পটি শক্তিশালী করা হয়। স্থানীয় মুসলিমলীগ নেতারা এখানে গড়ে তোলে বিশাল রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর একটি শক্তিশালী ক্যাম্প। এসব রাজাকার আলবদররা ভালুকার বিভিন্ন গ্রামে দিনের পর দিন হত্যা, নারী ধর্ষন,বাড়ীঘরে আগুন ও লুটপাট চালিয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। আফছার বাহিনী বিভিন্ন সময়ে ভালুকা ক্যাম্পে পর্যায়ক্রমে বেশ কয়েকবার আক্রমন চালিয়েছিলেন। এছাড়া আমলীতলাযুদ্ধ, বল্লা যুদ্ধ, ত্রিশাল,গফরগাঁও,ফুলবাড়ীয়া,শ্রীপুর, মল্লিকবাড়ী, মেদুয়ারী সহ বিভিন্ন স্থানে পাকসেনা ও রাজাকারদের সাথে আফসার বাহিনীর যুদ্ধ হয়। দীর্ঘ ৯ মাসের বিভিন্ন যুদ্ধে আফছার উদ্দীনের পুত্র নাজিম উদ্দীন সহ ৪৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদৎ বরন করেন। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভালুকা উপজেলা কমান্ড বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান দলিল খন্ডে ৯ ম খন্ডে তাঁর বীরত্বগাথা রচিত হয়েছে । দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মেজর আফছার বাহিনীর কাছে ভালুকা ক্যাম্পের কয়েক হাজার রাজাকার আলবদর ও পাক সেনার আত্মসর্মপনের মধ্য দিয়ে ৮ ডিসেম্বর ভালুকা পাক হানাদার মুক্ত হয় । দিবসটি পালন উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহন করেছে । আলোচনা সভা , র‌্যালী , কবর জিয়ারত ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে ।
×