ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভেস্তে গেল আমলা-ডি ভিলিয়ার্সদের ‘অবিশ্বাস্য’ প্রতিরোধ, দিল্লী টেস্টে ৩৩৭ রানের বড় হার দক্ষিণ আফ্রিকার, ম্যাচসেরা রাহানে, সিরিজসেরা অশ্বিন

‘৩-০’তেই শেষ করল ভারত

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৮ ডিসেম্বর ২০১৫

‘৩-০’তেই শেষ করল ভারত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আগেই সিরিজ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। তবু দিল্লী টেস্ট সামনে রেখে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি বলেছিলেন, কোন রকম ছাড় নয়, তাদের একমাত্র লক্ষ্য ‘৩-০’তে শেষ করা। তাই হলো। ভেঙ্গে গেল হাশিম আমলা-এবি ডি ভিলিয়ার্সদের ‘অবিশ্বাস্য’ প্রতিরোধ। স্বাগতিক ঘূর্ণিবিষে ফের নীল হলো অতিথি শিবির। এবার র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল ধরাশায়ী ৩৩৭ রানে। এর মধ্য দিয়ে শেষ হলো প্রোটিয়াদের মিশ্র নৈপুণ্যের দীর্ঘ ভারত সফর। যেখানে টি২০ আর ওয়ানডে জয়ের পর টেস্টে মুখ থুবড়ে পড়ল অতিথিরা। কোহলিদের কাছে পাত্তাই পেলেন না আমলারা। একতরফা দাপটে চার টেস্টের সিরিজটা পকেটে পুড়ল ভারত। দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ম্যাচসেরা অজিঙ্কা রাহানে। আর দুরন্ত বোলিংয়ে সিরিজসেরা স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এক নম্বর টেস্ট দলের বিপক্ষে কেবল ম্যাচ বা সিরিজই নয়, যেন নিজেদের ক্রিকেটীয় গৌরবই পুনরুদ্ধার করল কোহলিবাহিনী। নাগপুরে পিচ-বিতর্কের পর ইন্ডিয়ান বোর্ডের (বিসিসিআই) গায়ে যে কালিমা লেগেছিল, সোমবার দিল্লীতে তা ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেল! আমলা-ডি ভিলিয়ার্স, বাভুমা-ডুপ্লেসিসদের ‘ব্লক-গাঁথায়’ ইতি টেনে দিলেন ভারতীয় বোলাররা। একই সঙ্গে স্বাগতিকরা বুঝিয়ে দিল, কেবল ঘূর্ণি পিচের সাহায্যে নয়, তাদের জয়টা এলো দলীয় নৈপুণ্যে। শেষ অবধি স্পোটিং পিচে প্রোটিয়াদের নাস্তানাবুদ করে নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করল টিম-কোহলি। এক লাফে র‌্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলো ভারত। ক্যাপ্টেন কুল মহেন্দ্র সিং ধোনির ছায়া থেকে বেরিয়ে দেশের মাটিতেও শুরু হলো কোহলি-জামানা। এর আগে এই কোহলির অধীনেই শ্রীলঙ্কার মাটিতে দীর্ঘ বাইশ বছর পর সিরিজ জিতেছিল ক্রিকেটের মোড়লরা। ২ উইকেটে ৭২ রান নিয়ে শেষ দিনে দ্বিতীয় ইনিংসের খেলা শুরু করে সফরকারী দক্ষিন আফ্রিকা। ৪৮১ রানের লক্ষ্য ছোঁয়ার দুঃস্বপ্নটা নিশ্চই ছিল না আমলাদের। তারা চেয়েছিলেন কেবল দাঁতে দাঁত চেপে ক্রিজে থেকে দিন পার করে দিতে। কিন্তু সেটিও হয়নি। ৭১ ওভারে আর ৭১ রান যোগ করে অলআউট হয় অতিথিরা। ঠেকানো আর কাকে বলে? ১৪৩.১ ওভারে ১৪৩ রান করতে সমর্থ হয় ‘নাম্বার ওয়ান’রা! প্রথম ইনিংসে যারা গুটিয়ে যায় ১২১-এ। আর ভারত করে ৩৩৪ ও ২৬৭/৫ (ডিক্লে.)। ১২০ ওভার মিলিয়ে যারা ৩ উইকেট হারিয়েছিল, সেই প্রোটিয়ারাই কাল ১৪ বলের ব্যবধানে হারায় আরও ৩ উইকেট! জ্বলে ওঠা অশ্বিন-রবিন্দ্র জাদেজার ঘূর্ণির মুখে এই ধাক্কা সামলানো আর সম্ভব ছিল না। ধৈর্যের পাহাড় গড়ে অটুট প্রতিরোধ গড়া আর সমান ধৈর্যের নিখুঁত বোলিং দিয়ে সেই প্রতিরোধ ভেঙ্গে দেয়ার অসাধারণ এক ম্যাচই উপহার দিল দিল্লী টেস্ট। যে ধৈর্যের লড়াইয়ে শেষ জয়টা ভারতেরই। এবিকে নিয়ে আগের দিনই দুর্দান্ত প্রতিরোধ গড়েছিলেন অধিনায়ক আমলা। সোমবার দিনের ১৩তম ওভারে ভাঙ্গে আমলার ২৮৮ মিনিট ও ২৪৪ বলে ২৫ রানের অবিশ্বাস্য সেই প্রতিরোধ। এরপরও অবিচল ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স, কিন্তু কাজটা সহজ ছিল না। পুরো ইনিংসে যার ২ উইকেট সেই জাদেজাই করে দেন আসল কাজ। আমলার পর ডুপ্লেসিসকেও ফেরান তিনি। শেষ পর্যন্ত ২৩ ওভারে শেষ ৭ উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা। এর মধ্যে ১৩৮.৫ ওভার থেকে ১৪১- অর্থাৎ ১৪ বলে হয় বড় সর্বনাশ। পরপর তিন উইকেট হারায় সফরকারীরা। ৫ উইকেটে ১৩৬ থেকে মুহূর্তেই ৮ উইকেটে ১৪০! এর মধ্যে রয়েছে ডি ভিলিয়ার্সের মহাগুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি। ২৯৭ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলেন ওয়ানডেতে মাত্র ৩১ বলে সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড গড়া এই ব্যাটসম্যান! এর মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থ ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখান অশ্বিন। মোট ৩১ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরাও এই ভারতীয় তারকা। ১২৭ ও ১০০* রানের চমৎকার দুই ইনিংস উপহার দিয়ে দিল্লী জয়ের ‘নায়ক’ অবশ্য রাহানে।
×