ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাফুফে-ক্লাব দ্বন্দ্ব, ফুটবলে অশনি সঙ্কেত!

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৮ ডিসেম্বর ২০১৫

বাফুফে-ক্লাব দ্বন্দ্ব, ফুটবলে অশনি সঙ্কেত!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শরীর হঠাৎ করেই খারাপ হয় না। তার আগে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন- জ্বর, কাশি, সর্দি, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা ... ইত্যাদি। তেমনি কোন বিপর্যয় সংগঠিত হওয়ার আগেও বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনেও তাই। আগে এক নম্বরে ছিল, এখন ক্রিকেটকে শীর্ষাসনটা ছেড়ে দিয়ে জনপ্রিয়তায় দুই নম্বরে নেমে এসেছে ফুটবল। এই ফুটবলে বিবিধ কারণে পরিলক্ষিত হচ্ছে সঙ্কট, শনির দশা, অশনি সঙ্কেত। সচেতন ক্রীড়াপ্রেমী মাত্রই অবগত, বেশ কিছুদিন ধরে দেশীয় হকিতে চলছে ক্রান্তিকাল। নানামুখী সমস্যা আর জটিলতায় ভরপুর হকি অঙ্গন। সেই হকিরই যেন ভূত এখন সওয়ার হয়েছে ফুটবলের ঘাড়ে! পাঠক অবশ্য প্রশ্ন করতেই পারেন, হকির সঙ্গে ফুটবলের সমস্যার সম্পর্ক কি? সম্পর্ক আছে। দল বদল এবং খাজা রহমতউল্লাহ্র অপসারণ চেয়ে হকিতে যে যে কটি ক্লাব জোর আন্দোলন করে তুলকালাম কা- ঘটাল, সেই ক্লাবগুলোর পুরোধা ছিল ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। এখন ক্লাবটি বিভিন্ন ইস্যুতে একই সমস্যার অবতারণা করতে চাচ্ছে ফুটবলেও! এজন্য তারা সঙ্গে নিয়েছে দেশের শীর্ষ আরেক ক্লাব শেখ জামাল ধানম-িকে। ক্লাব দুটি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) ফুটবল ক্যালেন্ডার অনুযায়ী খেলা চালানো, বৃষ্টির দিনে খেলা আয়োজন না করা, ক্লাবগুলোর পাওনা পরিশোধের দাবিসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের সেই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে প্রিমিয়ার ফুটবল লীগের আরও তিনটি ক্লাব শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, ব্রাদার্স ইউনিয়ন এবং টিম বিজেএমসি। তাদের দাবি- পেশাদার ফুটবল লীগ কমিটি পুনর্গঠন না করলে দল বদলে অংশ নেবে না তারা। বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাহ্উদ্দিন দায়িত্ব নেয়ার পর প্রতি মৌসুমেই প্রিমিয়ার লীগ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী অন্য টুর্নামেন্টগুলোর বেশিরভাগই আয়োজিত হয়েছে। এ নিয়ে শেখ জামাল তো বটেই, অন্য কোন ক্লাবেরই কোন আপত্তি বা মাথাব্যথা ছিল না। গত অক্টোবরে চট্টগ্রামে আয়োজিত হয় শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট। আয়োজক চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড টুর্নামেন্টে খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানায়নি প্রিমিয়ার লীগ চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানম-ি এবং রানার্সআপ শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডকে। সমস্যার শুরু সেখান থেকেই। নইলে সবকিছু ঠিকঠাই চলছিল। খুবই দ্রুতই পট পরিবর্তন হতে শুরু করে। মিডিয়ার কাছে বাফুফে সম্পর্কে তারা বিভিন্ন মন্তব্য করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাফুফে শোকজ করে শেখ জামালের সভাপতি মনজুর কাদের এবং মোহামেডানের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল এবং ঘোলাটে হয়ে ওঠে। এখন যথা সময়ে দল বদল এবং লীগ অনুষ্ঠিত হবে কি না এবং সব ক্লাবগুলো এতে অংশ নেবে কি না- এ নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়-অনিশ্চয়তার। বর্তমান পরিস্থিতি বা জটিলতা নিয়ে স্বভাবতই উদ্বিগ্ন দেশের ফুটবলবোদ্ধা এবং ফুটবলপ্রেমীরা। তাদের মতে- এভাবে যদি বাফুফে বনাম ক্লাবের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে এবং দল বদল-লীগ যথাসময়ে অনুষ্ঠিত না হয়, তাহলে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হবে এদেশের ফুটবলেরই। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ফুটবলার, ক্লাবগুলো এবং বাফুফেও। তাই এ সমস্যা সমাধানের পথ একটাই- দেশের ফুটবলকে বাঁচানোর স্বার্থে নমনীয় হয়ে এবং ছাড় দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে বাফুফে এবং ক্লাবগুলোকে। একমাত্র সুষ্ঠু আলোচনার ভিত্তিতেই খুলে যেতে পারে কাক্সিক্ষত সমাধানের পথ। এর কোন বিকল্প নেই। দ্বন্দ্ব-লড়াই নয়, ইগো সমস্যা ত্যাগ করে এবং ছাড় দেয়ার মানসিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত এই সৃষ্ট সঙ্কটের। সেটা সম্ভব হবে কি না, তা বলে দেবে সময়ই।
×