ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড

পার্বত্যাঞ্চলে মিশ্র ফল চাষে দারিদ্র্য জয়ের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৮ ডিসেম্বর ২০১৫

পার্বত্যাঞ্চলে মিশ্র ফল চাষে দারিদ্র্য জয়ের উদ্যোগ

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ পার্বত্য চট্টগ্রামে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য মিশ্র ফল চাষ বৃদ্ধি করতে ৩৬ কোটি ৮০ লাখ ৮৪ হাজার টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এএন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সমতল জায়গা খুবই কম। তাই মাঠ ফসলের সম্প্রসারণও সীমিত। কিন্তু এ এলাকার ভূমি উদ্যান ফসলের জন্য খুবই উপযোগী। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে তেমনি স্থানীয় জনগণ স্বাবলম্বী হবে এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এসব দিক বিবেচনায় এটি একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২ হাজার ৫০০টি ১ দশমিক ৫ একরের মিশ্র ফল বাগান সৃজনের মাধ্যমে আড়াই হাজার পরিবারের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ২ হাজার ৫০০টি শূন্য দশমিক ৭৫ একরের মিশ্র ফল বাগান সৃজনের মাধ্যমে আড়াই হাজার পরিবারের আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। ২৫০টি পানির উৎস উন্নয়নের মাধ্যমে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। উদ্যান উন্নয়ন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ৫ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান, আগ্রহী ও সংশ্লিষ্ট আড়াই হাজার কৃষককে মিশ্র ফল বাগান সৃজনে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা ও উদ্বুদ্ধকরণ সফর, ১ হাজার ২৫০ জন কৃষককে মোটিভেশনের ট্যুর, ৫০০ জনকে উদ্যান নার্সারি ব্যবসা উন্নয়নে সহযোগিতা দেয়া এবং ১২৫টি মার্কে শেড নির্মাণ করা হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের অন্যতম অনুন্নত এলাকা হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। এ এলাকার উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে সরকার ১৯৭৬ সালে পার্বত্য পট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড গঠন করার পর থেকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দেশের দক্ষিণ পূর্ব কোনে অবস্থিত তিনটি জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান নিয়ে এই পার্বত্যাঞ্চল গঠিত। দেশের প্রায় এক দশমাংশ এলাকা বিভিন্ন উচ্চতার পাহাড় দিয়ে বেষ্টিত। পার্বত্য এলাকায় আবাদযোগ্য মাঠ ফসলি জমি আছে মোট জমির মাত্র ৫ শতাংশ। সমতল জমির অভাবে এ এলাকায় ফসল আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগ খুব কম। অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে কৃষকরা তাদের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে পাহাড়ের ঢালে অপরিকল্পিত চাষাবাদ করে থাকেন। ফলে একদিকে যেমন ভূমিক্ষয় এবং ভূমির উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে। এ এলাকার জমি ফলের বাগান করার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার অনেক পাহাড়ী ভূমি এখনও আবাদের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে পার্বত্য এলাকার মোট ভূমির প্রায় ২২ শতাংশ উদ্যান ফসলের জন্য ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এক সময় সামাজিক অস্থিরতা ছিল, যা ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়েছে। ভৌগোলিক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণে এ অঞ্চল অনেক পিছিয়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা সামাজিক অস্থিরতার ক্ষতি এখনও পূরণ করতে পারছে না এ এলাকার মানুষ। এই অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নসহ এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রত্যন্ত এলাকায় মিশ্র ফসল চাষ শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে ৫ হাজার ৬২৫ একর উদ্যান উন্নয়ন, উপজেলা পর্যায়ে ৫৬টি কষিমেলা, ২৫০টি পানির উৎস উন্নয়ন এবং মোট ৯ হাজার ২৭৭ কৃষককে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) মতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মানসম্পন্ন ফলের চারা-কলম রোপণ করে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। এতে ফলের চাহিদা পূরণ করে দেশে ফলের আমদানি কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তাছাড়া এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ওই এলাকার বেকার জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে। এসব সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
×