ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পৌর নির্বাচনে একযোগে কাজ করার জন্য নির্বাচনী মনিটরিং টিম গঠন

পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি ১৪ দলের

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৯ ডিসেম্বর ২০১৫

পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি ১৪ দলের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ একাত্তরে পরাজিত খুনী রাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদের দাবি জানিয়েছেন ১৪ দলীয় জোটে থাকা শরিক দলগুলোর নেতারা। একইসঙ্গে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে জোটের শরিক দলগুলোকে বাইরে রেখে আওয়ামী লীগের এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করে যেসব পৌরসভায় মেয়র পদে শরিক দলের যোগ্য প্রার্থী রয়েছে সেখানে কিছুটা ছাড় এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তবে যেসব পৌরসভায় শরিক দলের প্রার্থী নেই, সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে জোটের নেতারা তাঁদের সম্মতি জানান। মঙ্গলবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠকে এসব দাবি জানানো হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়াকে আহ্বায়ক করে ১৪ দলের একটি নির্বাচনী মনিটরিং টিম গঠন করা হয়। এসব টিম দেশের বিভিন্ন পৌর এলাকায় গিয়ে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকের মাধ্যমে জোটের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে ১৪ দলের মধ্যে কোন ভুল বোঝাবুঝি নেই দাবি করে বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে ১৪ দলের শরীকরা স্ব-স্ব দল থেকে অংশগ্রহণ করছে। এটা খুবই ভাল লক্ষণ। ১৪ দলের ঐক্য হিমালয়ের মতো অটুট। এই ঐক্যকে কেউ ভাঙতে পারবে না। নির্বাচনে নাশকতার আশঙ্কা করছেন কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আমরা কোন আশঙ্কা করছি না। তবে নাশকতা বিএনপির ওপর নির্ভর করছে। এই প্রশ্নটা বিএনপিকে করলেই ভাল হয়। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বদিউজ্জামান ভুঁইয়া ডাবুল, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা, আনিসুর রহমান মল্লিক, জাসদের নাজমুল হক প্রধান, গণতন্ত্রী পার্টির ডাঃ শহিদুল্লাহ সিকদার, ডাঃ শাহাদত হোসেন, কমিনিস্ট কেন্দ্রের ডাঃ অসিত বরণ রায়, বাসদের রেজাউর রশীদ খান, গণআজাদী লীগের সমির কান্তি সিকদার, তরিকত ফেডারেশনের এম এ আউয়াল প্রমুখ। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি তাঁর দলের নাটোর ও রাজশাহীর দুর্গাপুর পৌরসভায় দু’জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন নেই, এমনকি হত্যা-নাশকতাসহ ৩৮ মামলার আসামি জামায়াত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পরও তার মনোনয়নপত্র বৈধ হয়, আর ওয়ার্কার্স পার্টির মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। মানে আজব প্রশাসন! তিনি আওয়ামী লীগের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, এটি কী সমঝোতার নির্বাচন, নাকি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার নির্বাচন? যদি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় তাহলে নির্বাচনকে ‘ফ্রি এ্যান্ড ফেয়ার’ করতে হবে। সূত্র জানায়, এ সময় কেন্দ্রীয় মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বৈঠক থেকেই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে মোবাইল ফোনে ওই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের কারণ জানতে চান। এরপর তিনি শরিকদের আশ্বস্ত করে বলেন, এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে শতভাগ সফল হবে। বৈঠকে জাসদের নাজমুল হক প্রধান ও গণতন্ত্রী পার্টির ডাঃ সহিদুল্লাহ সিকদার বলেন, যেখানে আমাদের শরিক দলের প্রার্থী নেই, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে জেতাতে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডাঃ অসীত বরণ রায় বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদের উত্থান হতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। ব্রিফিংকালে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ১৪ দল মনে করে এ নির্বাচনে যার যার মতো ভূমিকা রাখা দরকার। তাই ১৪ দল যার যার অবস্থান থেকে প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। ১৪ দল মনে করে এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ১০০ ভাগ সফল হবে। আর এ ব্যাপারে ১৪ দল সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। ১৪ দলীয় নেতা দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বে একটি কেন্দ্রীয় টিম গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেই টিম দেশের বিভিন্ন পৌরসভায় গিয়ে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠক করবে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় এ মুখপাত্র বলেন, আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি (খালেদা জিয়া) উপলব্ধি করতে পেরেছেন নির্বাচন বর্র্জন শুভ লক্ষণ নয়। তাই তিনি প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার অধীনেই দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বিএনপি নেত্রীর নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, তিনি আবার যদি মাঠে নামেন তাহলে জনগণের আবার মনে পড়বে তিনি পেট্রোলবোমা দিয়ে মানুষ হত্যা করেছিলেন। পাকিস্তানের কাছ থেকে নায্য হিস্যা আদায়ের পদক্ষেপ নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের অমার্জনীয় অপরাধ বাঙালী জাতি কোনদিন ক্ষমা করবে না। আমরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করতে চাই আমাদের হিস্যার জন্য পাকিস্তানীদের ওপর চাপ দেয়া হোক। চুক্তি অনুযায়ী তারা যে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা ছিল সেটার জন্য চাপ দেয়া হোক।
×