ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুর মুক্ত দিবস আগামীকাল

প্রকাশিত: ২০:০০, ৯ ডিসেম্বর ২০১৫

মাদারীপুর মুক্ত দিবস আগামীকাল

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর ॥ আগামীকাল ১০ ডিসেম্বর মাদারীপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে সন্ধ্যায় হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর কাছে আতœসমর্পন করতে বাধ্য হয়। মূলত মাদারীপুুরে যুদ্ধ শুরু হয় আগষ্ট মাসের প্রথম দিকে। মাত্র ৫ মাস পর ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই মাদারীপুরের বাইরের সবক‘টি থানা মুাক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। এ সময় হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা মাদারীপুর শহরের হাওলাদার জুট মিলের অভ্যন্তরে ও নাজিমউদ্দিন কলেজে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা চারিদিক থেকে তাদের ঘিরে রাখেন। ৮ ডিসেম্বর দুপুরে তৎকালিন মহকুমা প্রশাসক আবদুল মতিনের ড্রাইভার আলাউদ্দিন সদর থানার কলাগাছিয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে সংবাদ পৌছে দেয় যে, ৯ ডিসেম্বর ভোর রাতে পাক বাহিনী মাদারীপুর থেকে ফরিদপুরের দিকে পালিয়ে যাবে। এ সংবাদ পেয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের ৩ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা সদর থানার ঘটকচর থেকে সমাদ্দার ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অবস্থান নেয়। ৯ ডিসেম্বর ভোরে হানাদার বাহিনী কনভয়সহ তাদের বাঙালি দোসর রাজাকার, আলবদর, আসামস ও মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ঘটকচর ব্রিজ পার হওয়ার সাথে সাথে মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে আক্রমন শুরু করে। তাড়া খেয়ে পাকবাহিনী দ্রুত গাড়ি চালাতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে পাকসেনারা কনভয় থেকে নেমে ফায়ার করতে করতে দ্রুত সমাদ্দার ব্রিজের দিকে এগোতে থাকে। পাকসেনাদের ফেলে রাখা কনভয় থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি বর্ষনে ভীত হয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে হানাদার ও তাদের দোসরদের একটি অংশ সমাদ্দার ব্রিজের দুই পাশে পূর্বে তৈরী করা বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়ে পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকে। অপর একটি অংশ দুটি কনভয় ও একটি জীপসহ সমাদ্দার ব্রিজ থেকে রাজৈর থানার টেকেরহাট ফেরী পার হয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গোপালগঞ্জ-এর মুকসুদপুর থানার ছাগলছিড়া নামক স্থানে ক্যাপ্টেন সাঈদসহ ৩০ জন পাকসেনা ও কয়েকজন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আতœসমর্পন করে। সমাদ্দার ব্রিজে ২ রাত ২ দিন তুমূল যুদ্ধ শেষে ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পাকবাহিনীর মেজর আবদুল হামিদ খটক ৩৯ জন পাকসেনা, ১৪ জন মুজাহিদ নিয়ে ৫৩ জন হানাদার খলিল বাহিনীর কাছে আতœসমর্পন করে। এ যুদ্ধে ১৭ পাকসেনা নিহত ও সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার হোসেন বাচ্চু শহীদ হন। পাক বাহিনীর আতœসমর্পনের সংবাদ মাদারীপুর শহরে পৌছালে সর্বস্তরের মুক্তিকামী মানুষ জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে। শত্র“মুক্ত হয় মাদারীপুর। মাদারীপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলা আওয়ামীলীগ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার হোসেন বাচ্চু’র কবরে পুষ্পস্তবক অর্পন, ‘৭১ এর রণাঙ্গন সমাদ্দার মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে আলোচনা সভা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দোয়া, মুক্তদিবস র‌্যালী, বিভিন্ন ক্রীড়া ও রচনা প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
×