ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে সর্বাত্মক ব্যবস্থা ॥ মেয়র আনিসুল হক

ডিএনসিসি এলাকায় কোন অবৈধ স্থাপনা থাকবে না

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১০ ডিসেম্বর ২০১৫

ডিএনসিসি এলাকায় কোন অবৈধ স্থাপনা থাকবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ৬ মাসের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) গৃহীত উন্নয়ন কাজ নাগরিকদের কাছে দৃশ্যমান হবে বলে দাবি করেছেন মেয়র আনিসুল হক। ডিএনসিসি এলাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা, যানজট কমাতে উন্নত বিশ্বের ন্যায় ইউলুপ তৈরি করা, রাস্তার সকল বাতি এলইডি বাতিতে রূপান্তর করা, সকল খাল রক্ষা ও দখলধারীদের কাছ থেকে ফিরিয়ে আগের রূপে আনতে চেষ্টা করা, পুরোপুরি ই-টেন্ডার বাস্তবায়ন করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুনত্ব আনতে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) তৈরি করা, নির্দিষ্ট সংখ্যক বাস কোম্পানি রাস্তায় রাখা, ফুটপাথ দখলমুক্ত করা, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, শহরে বসবাস উপযোগী করতে অর্থাৎ শহরকে ক্লিন ও গ্রীন সিটি নির্মাণে প্রয়োজনীয় সব কিছুই করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বুধবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে নাগরিক, সুধী সমাজ ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে এলাকার উন্নয়নে করণীয় জানতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আনিসুল হক বলেন, আমরা মাত্র ৬ মাস ১৯ দিন হলো ক্ষমতায় এসেছি। আপনারা আমাদের মেয়র করতে যেচে গিয়ে সমর্থন করেননি। আমরা আপনাদের সেবা করব বলে আপনাদের কাছে গিয়ে হাত পেতে ভোট চেয়েছি। এরপর আপনারা আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। ফলে আজ আমরা মেয়র, কাউন্সিলর। আমরা ডিএনসিসির নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নে যা যা প্রয়োজন তাই করব। বর্তমানে গৃহীত প্রকল্পগুলোর অধিকাংশের ফল পেতে আরও ৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, চলাচলের জন্য ফুটপাথ দখলমুক্তকরণ, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলে জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গত ৬ মাসে গৃহীত ও বাস্তবায়িত বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ডিএনসিসি এলাকার সৌন্দর্য বিনষ্টকারী ২০ হাজার অবৈধ বিলবোর্ড তুলে দিয়েছি। আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে আপনারা ডিএনসিসি এলাকায় আর কোন বিলবোর্ড দেখতে পাবেন না। তবে বিলবোর্ড যে থাকবে না তা নয়। নির্দিষ্ট স্থানে এলইডি বিলবোর্ড ও পোস্টার লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে। এ নিয়ম ভঙ্গ করলে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। মেয়র সবার পক্ষ থেকে কাজ করছে আর তাই সকল কাজে জনগণকে সহযোগিতা করতে হবে। যানজট নিরসনে টঙ্গী থেকে মহাখালী সাতরাস্তা পর্যন্ত মোট ২২টি ইউলুপ তৈরি করছি। যা আগামী জুনের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। ফলে এ এলাকায় যানজট ৭৫ ভাগ কমে আসবে। নাগরিকদের সুদৃঢ় নিরাপত্তা দিতে আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে সিসি ক্যামেরা বসাচ্ছি। বর্তমানে গুলশান বারিধারা এলাকায় ১০০টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে একটি সুচ পড়লেও যাতে করে খুঁজে পাওয়া যায় সে জন্য ১০০০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা সহজ হবে ও অপরাধ অনেকাংশে হ্রাস পাবে। এছাড়া পুরো শহর ক্যামেরার আওতায় থাকায় কেউ অন্যায় করে পার পেতে পারবে না। ক্যামেরা স্থাপন ব্যয়বহুল হওয়ায় আমরা নাগরিকদের কাছ থেকে ক্যামেরা সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামাদি স্থাপনের জন্য টাকা উত্তোলন করছি। যার পরিমাণ কয়েক দিনে ১৫ কোটিতে গিয়ে পৌঁছেছে। বর্তমানে অনেক স্থানে রাস্তার ওপর ময়লা ফেলে রাখা হচ্ছে। দুর্গন্ধের কারণে রাস্তায় চলাও অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী করতে ৭২টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হবে। যার কাজ চলমান রয়েছে। এতে করে রাস্তার ওপরের আবর্জনার দুর্গন্ধ বর্তমানের চেয়ে ৭৫ ভাগ কমবে। নাগরিকদের পরিবহনের জন্য বর্তমানে রাজধানীতে চলা বাস কোম্পানির সংখ্যা ৩৫০টি থেকে কমিয়ে ৫টিতে আনা হবে। নতুন নতুন উন্নতমানের ও এয়ারকন্ডিশনার বাস আনা হবে। আধুনিক টিকিটিং পদ্ধতির মাধ্যমে চলা এসব বাসে নারী পুরুষ, শিশু ও প্রতিবন্ধীরা আলাদাভাবে অনায়াসে চলাচল করতে পারবেন। আমরা রাজধানীতে ডেভেলপার কোম্পানিকে চিঠি দিয়েছি যে, তারা চলতি মাস পর্যন্ত রাস্তার ওপর নির্মাণ সামগ্রী রেখে কাজ করতে পারবেন। এরপর থেকে রাস্তার ওপর নির্মাণ সামগ্রী রেখে কাউকে বা কোন প্রতিষ্ঠানকে স্থাপনা নির্মাণ করতে দেয়া হবে না। এ আইন না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। আন্তরিকতা থাকলে আলোচনার মাধ্যমে সবাইকে সমস্যার কথা বুঝিয়ে রাস্তার ওপর থেকে গাড়ি, বাস, ট্রাক, টেম্পো লেগুনা সরিয়ে যানজট কমানো সম্ভব তার প্রমাণ হিসেবে মোহাম্মদপুরের কমিশনার রাজিবের উদাহরণ দিয়ে আনিসুল হক বলেন, আপনারাও প্রতিটি নাগরিককে বুঝিয়ে বলুন। তবেই মোহাম্মদপুরের মতো ডিএনসিসির প্রতিটি এলাকায় রাস্তার যানজট অনেকাংশে কমে আসবে। মানুষকে এজন্য আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা কষ্ট পেতে হবে না। নাগরিক সেবার জন্য নির্ধারিত ব্যক্তিরা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর একরাতে বিভিন্ন কারণে ১৬৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করেছি এবং প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ পদে যোগদানও করেছেন। যা এর আগে কেউ করতে পারেনি। তাই দায়িত্বে অবহেলাকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সঠিকভাবে নাগরিকসেবা করুন। নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করুন। আগামী এক বছরের মধ্যে রাস্তার সকল বাতি এলইডিতে রূপান্তর করা হবে। দিনের পর দিন আলো ছাড়া কোন এলাকা থাকবে না। নিয়মানুযায়ী লাইট মেরামতের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দেয়া হবে। এর বাইরে গেলে সংশ্লিষ্টদের কৈয়িফত তলব করা হবে। ডিএনসিসির রাস্তার পাশের দেয়ালের সৌন্দর্য সুরক্ষায় আমরা ইতোমধ্যে ৫ কিলোমিটারের বেশি গ্রিপার লাগিয়েছি। কিন্তু নানা কারণে এর মধ্যেই ৩ কিলোমিটার গ্রিপার নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। শহরকে গ্রীন সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা ফুটওভারব্রিজ, রাস্তার পাশে, সিঙ্গাপুরের ন্যায় শহরের প্রবেশপথে ফুলের গাছ লাগানো হবে। যাতে ফুল রাখা হবে। বর্তমানে ডিএনসিসি এলাকার ১৩টি খাল দখলধারীরা দখল করে রেখেছে। একমাত্র এ বিষয়টি নিয়ে আমার করার তেমন কিছুই নেই। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, খাল দেখভাল করে ওয়াসা আর মেইনটেনেন্স করে রাজউক। তবে দখল ফিরিয়ে দিলে তা কিভাবে রক্ষা করতে হবে তা আমাদের কাউন্সিলররা ভাল করেই জানেন।
×