ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

‘রোকেয়া রচনা পাঠ ও তাঁর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই’

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১০ ডিসেম্বর ২০১৫

‘রোকেয়া রচনা পাঠ ও তাঁর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রবন্ধ পাঠ ও আলোচনানুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে রোকেয়া দিবস পালন করা হয় বাংলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে বুধবার বিকেলে। বাংলা একাডেমি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ‘রোকেয়ার আলো এবং আমাদের আলো-অন্ধকার’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক-সাংবাদিক আবুল মোমেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সোনিয়া নিশাত আমিন। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। তিনি বলেন, রোকেয়া অসম-সাহসিকতায় শুধু নারীপ্রগতি নয়, আমাদের সমাজপ্রগতিতেও রেখেছেন অসামান্য বিপবী ভূমিকা। আমাদের সামগ্রিক অগ্রগমনের স্বার্থে রোকেয়া-রচনা পাঠ এবং রোকেয়া চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার কোন বিকল্প নেই। প্রাবন্ধিক আবুল মোমেন বলেন, রোকেয়ার অভিপ্রায় আজ প্রায় একশত বছরের ব্যবধানে ফলপ্রসূ হয়েছে কিনা তা একবার তলিয়ে দেখা দরকার। রোকেয়ার স্বপ্নের আলোকে সাম্প্রতিক বাংলাদেশের চিত্রটাও দেখে নেয়া জরুরী। অন্ধকারের মৌলবাদী শক্তি নারীকে আবার অবরোধে আবদ্ধ করে সমাজকে অবরোধবাসিনীর মিছিলে পরিণত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ সম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া পুরুষ ও নারীর সমঝোতায় একটি উদার সমাজের কথা ভেবেছেন। তিনি ধর্মেরও উদার-মানবিক রূপটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। রোকেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সমাজকে সনাতন মানসিকতার বিভাজনের বৃত্ত থেকে মুক্ত করে উদার মানবতার সমন্বিত ধারায় আনতে হবে। রোকেয়ার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন তখনই যথার্থ হবে যখন আমরা সমতার ভিত্তিতে একটি উদার মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারব। আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন বলেন, রোকেয়া শুধু নারীমুক্তির অগ্রদূত নন, বঙ্গীয় রেনেসাঁর অন্যতম উদ্যোক্তাও বটে। রোকেয়ার স্বপ্নে আমাদের নারীসমাজ অনেক দূর এগিয়েছে বটে কিন্তু প্রান্তিক নারীর সার্বিক মুক্তি এখনও অর্জন হয়নি। রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে নারী শীর্ষপদে আসীন হয়েছেন তবে সমাজের সর্বস্তরে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে এখনও আমরা সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, রোকেয়া সমকালীন সমাজের বহু প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তাঁর ভাবনা ও কর্মে এগিয়ে গেছেন। তিনি নিজের মুক্তির চেয়ে সমাজের মুক্তিকে বড় করে দেখেছেন সব সময়। রোকেয়ার সমাজ-সংস্কারক পরিচয়কেই আমরা প্রধান করে দেখি; অনেকাংশেই আড়াল হয়ে যায় তাঁর সাহিত্যিক পরিচয়। বাংলা সাহিত্যের বড় মাপের লেখক, চিন্তাবিদ ও নারীমুক্তির দিশারী রোকেয়ার প্রেরণা আমাদের মঙ্গলের জন্যই যেন অনিঃশেষ সত্য হয়ে প্রতিভাত হয়। গণহত্যার শিকারগ্রস্তদের স্মরণ, মর্যাদা প্রদান এবং গণহত্যা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক দিবস পালন ॥ গণহত্যার শিকারগ্রস্তদের স্মরণ, মর্যাদা প্রদান এবং গণহত্যা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক দিবস পালন উপলক্ষে আলোক প্রজ্বালন, আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। বুধবার সন্ধ্যায় একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের নন্দন মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় এ আয়োজন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব আক্তারী মমতাজ। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সদস্য মফিদুল হক। আরও উপস্থিত ছিলেন ১৯৭১ সালে ২০ মে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরের একমাত্র জীবিত সাক্ষী তখককার সময়ের শিশু সুন্দরী বালা। ১৯৭১ সালে ২০ মে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে সংগঠিত গণহত্যায় প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। সেই গণহত্যার স্মরণে অনুষ্ঠানে বাঁশিযোগে একটি করুণ সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এ সময় অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণের দর্শক শ্রোতারা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। অশ্রু সংবরণ করতে গিয়ে অনেকেই রুমাল দিয়ে চোখ মুছেন। জহির রায়হানের ‘স্টপ জেনোসাইড’ ও ‘টিয়ারস অব ফায়ার’ নামক দুটি তথ্যচিত্র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে এ আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এ আয়োজনের সঙ্গে একযোগে সন্ধ্যা ৬টায় সারাদেশের জেলা ও উপজেলার বধ্যভূমিগুলোতে আলোক প্রজ্বালন করা হয়। প্রসঙ্গত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় সংঘটিত গণহত্যার বীভৎসতা ও গণহত্যার শিকারগ্রস্তদের স্মরণে ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় আলোচনা হয়। ওই সভায় জাতিসংঘ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর গণহত্যার শিকারগ্রস্তদের স্মরণ, মর্যাদা প্রদান এবং গণহত্যা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালন করা হবে। তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো এ অনুষ্ঠান। ‘৩য় আন্তর্জাতিক এ্যানিমেশন কার্টুন উৎসব বাংলাদেশ ২০১৫’ শুরু হচ্ছে ১৩ ডিসেম্বর ॥ ‘৩য় আন্তর্জাতিক এ্যানিমেশন কার্টুন উৎসব বাংলাদেশ ২০১৫’ শুরু হচ্ছে আগামী ১৩ ডিসেম্বর। পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী এ উৎসবে বাংলাদেশসহ ১০টি দেশের ১৭টি শিশুতোষ এ্যানিমেশন কার্টুনসহ মোট ১০০টি এ্যানিমেশন কার্টুন প্রদর্শিত হবে। ঢাকার ২২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২০টি এনজিও স্কুল, ১২টি শিশু সংগঠন ও বিভিন্ন স্কুল থেকে আগত ৪০ জন শিশু প্রতিনিধিকে এ উৎসবে আমন্ত্রণ জানানো হবে। চিলড্রেন কমিউনিকেশন্স বাংলাদেশ-এর আয়োজনে ও ইফাদ গ্রুপের সহায়তায় ‘শিশুরা সাজাবে নতুন পৃথিবী’ সেøাগানের এ উৎসব শুরু হবে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। ১৫ ডিসেম্বর শেষ হবে তিন দিনব্যাপী এ এ্যানিমেশন কার্টুন উৎসব। বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এ আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্তরা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, কার্টুনিস্ট আহসান হাবিব, সিসিবির উপদেষ্টা সাঈদ মিল্কী, নির্বাহী পরিচালক সায়মা আক্তার রিনি প্রমুখ। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, কার্টুন ও এ্যানিমেশন ফিল্মের ভক্ত সকলেই। এটি নিঃসন্দেহে একটি সৃজনশীল বিদ্যা। তবে এখন পর্যন্ত অনেকটা ব্যক্তিগত ভাল লাগা থেকেই অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এ অঙ্গনের মানুষরা কাজ করে যাচ্ছে। এ অঙ্গনে আরও বেশি বিনিয়োগ দরকার। সংস্কৃতিকর্মীরা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ান এরকম বলা হয়, সেটা যাই হোক না কেন বনের মোষ আমাদের তাড়াতেই হবে। নইলে ওরা আমাদের ফুলের বাগান নষ্ট করবে। সংবাদ সম্মেলনের আগে অনুষ্ঠিত হয় একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ এতে উৎসবের সঙ্গে সম্পৃক্তরা উপস্থিত ছিলেন।
×