ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আড্ডায় পিয়া

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১০ ডিসেম্বর ২০১৫

আড্ডায় পিয়া

উত্তরহীনভাবে প্রথম কলটা বাজতে বাজতেই কেটে গেল। দ্বিতীয় কল দেয়ার সুযোগ হলো না। পিয়া ব্যাক করলেন। অপরিচিত নম্বরের ব্যাপারে মিডিয়ার লোকজন সাধারণত একটু উদাসীনই থাকেন। পিয়া ভিন্ন। বুঝিয়ে দিলেন তা। তখন কনে দেখার লগ্ন পার। একটু কথা হলো। অতপর ঘণ্টা দুয়েক পরে আড্ডা শুরু। ‘আমি খুব ব্যালান্সড একটা মেয়ে।’ নিজের সম্পর্কে বলার জন্য এই একটা বাক্যই তিনি যথেষ্ট মনে করেন। পিউ অবশ্য ‘বাবা মা’র খুব আদরের ভদ্র মেয়ে’। যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নিয়েই কথাটা বললেন তিনি। ছোটবেলায় ব্যারিস্টার হতে চেয়েছিলেন, এখনও সেই পথেই আছেন। পড়ালেখাটা চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে ক্রমশই বাড়ছে কুয়াশার ঋতুর রাত। নিয়ন আলোর ঝাপ্টা পুরো শহরজুড়ে। তার সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ব্যাডমিন্টন খেলার মাঠগুলো। চারদিক কী ভীষণ আলোময়। পিয়া খেলেন না ব্যাডমিন্টন! কৌতূহল আমার। ‘খুব পছন্দের খেলা ছিল, খেলতাম। শীত তো চলে এসেছে, আবারও শুরু করব।’ জানালেন তিনি। তারকা মানেই কিন্তু অসাধারণ কিছু, ছোঁয়া বেশ দুঃসাধ্য ব্যাপার। সেটা আকাশের তারকা হোক, হোক পৃথিবীর। ‘সিরিয়াসলি!’ কথার মাঝখানেই বিস্ময় পিয়ার। বললেন, ‘আমি খুব সাধারণ। মিডিয়াতে না থাকলেও একটা মানুষের আমাকে নাগাল পেতে যতটুকু সময় লাগতো, এখনও ততটুকুই লাগবে। অনেকেই হয়ত খুব সহজেই বন্ধু হয়ে যেতে পারে, এটা আমার মধ্যে নেই। যখন আমি গার্লস স্কুলের ক্লাসে ঢুকতাম, ফিসফিস করত ক্লাসের মেয়েরা। যখন আমি কোচিংয়ে ঢুকতাম, তখনও ছেলে-মেয়েরা একসঙ্গে ফিসফিস করত; পিউ আসছে, পিউ আসছে.. এখনও আমি কোথাও ঢুকলে লোকজন একই রকম ফিসফিস করে।’ পিয়ার শব্দগুলোর সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে যাচ্ছিল রাতের বহু ট্রেন। বাকি শব্দগুলো শোনার জন্য হয়ত কিছু ছুটে আসছিল স্টেশনের দিকে। ‘আমি যখন নাইনে পড়তাম, তখন ক্লাস টেনের একটা মেয়েকে সেইরকম মেরেছিলাম।’ পিলে চমকে ওঠার মতো সত্যি কথা জানালেন পিয়া। ওইটুকুন বয়সের কোন মেয়ে সাধারণত এসব করে না। তিনি করলেন। না, তিনি কিন্তু কারাতে বা মার্শালআর্টও পারেন না। এটা তাঁর জন্মগত বিদ্যা। সে কারণে পিয়ার কিন্তু একটা ভাল সুযোগ ছিল কোন প্রোফেশনাল ফাইটিং গ্রুপে ঢুকে যাওয়ার। সেটা করেননি তিনি। কেন! ‘কারণ আমি মারামারি করতে পছন্দ করি না। কিন্তু কেউ যদি আমাকে এটাতে উস্কানি দেয় বা বাধ্য করে, আমি পিছপা হই না।’ কাজের ব্যাপারেও কিন্তু পিছপা হতে হয়নি আজও তাঁকে। দেশে কাজ করেছেন, বিদেশেও করেছেন। দেশের চেনা পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পাওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু বিদেশে! ‘শেখার একটা আগ্রহ আমার সবসময়ই থাকে। ওখান থেকেই আসলে স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পাই।’ খুব সাপ্টাভাবেই জানালেন পিয়া। দেশের বিভিন্ন সিনেমা হলে ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’ চলছে বেশ ক’দিন ধরে। যতটুকুন আশা ছিল পরিচালক আশিকুরের কাছে, ঠিক ততটুকুন তিনি দিতে পারেননি। ‘না না না, এটা আমি আপনার সঙ্গে একেবারেই সম্মত হবো না।’ আমার কথার লাগাম টেনে ধরলেন পিয়া। একটুও একমত হতে পারলেন না। গ্যাংস্টারের নায়িকা হিসেবে একমত না হওয়াটাই অবশ্য খুব স্বাভাবিক। তাঁর যুক্তি, ‘ফ্লপই যদি হতো, আপনি আজকে আমার ইন্টারভিউটা করতেন না। তিনদিন আগে আরিফ ভাই (চিত্রগ্রাহক) আমাকে ফোন করে বললেন যে- পিয়া তোমার ছবি তোলা লাগবে আবার। একটা ফ্লপ সিনেমার নায়ক-নায়িকাকে নিয়ে তো কেউ লিখতে চায় না!’ কিন্তু পত্রিকার লেখালেখি দিয়ে তো সিনেমার হিট-ফ্লপ নির্ধারণ হয় না! পত্রিকার ব্যাপারগুলো অন্যরকম। অনেক ফ্লপ সিনেমা নিয়েও কিন্তু কখনও কখনও লিখতে হয়, সেটা বিভিন্ন কারণে.. বলছিলাম আমি। আগ্রহ বেড়ে গেল পিয়ার। ‘আপনি কী কারণে গ্যাংস্টার নিয়ে নিউজ করছেন?’ শুধু গ্যাংস্টার না, আমি সামগ্রিকভাবে আপনার ইন্টারভিউ নেয়ার জন্যই ফোন করেছি।’ কথাটা শুনে যেন শান্ত হলেন পিয়া। একটু আগের উতলে উঠা ঢেউটা মিশে গেল দূরের কোন তীরে। বললেন, ‘তবে, গ্যাংস্টার রিটার্নস নিঃসন্দেহে বর্তমানের খুব ভাল সিনেমার একটা।’ ছবিটি সম্পর্কে পিয়ার আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। নিজে হলে গিয়ে দেখেছেন বেশ কয়েকবার। এমনকি একদিনে চার-পাঁচটি হলেও গিয়েছেন। দর্শক সাড়া যথেষ্ট ভাল, হ্যাঁ-বোধক। মডেল, উপস্থাপক, অভিনেত্রী হিসেবে তো লোকে চেনেই এখন পিয়াকে, অদূর ভবিষ্যতে ব্যারিস্টার হিসেবেও চিনবে। আরেকটা পরিচয়ও কিন্তু যোগ হতে পারে যে কোন সময়ই। রাজনীতিবিদ। এই বাসনা মনে পুষে রেখেছেন বহু আগে থেকেই। কিন্তু রাজনীতি করতে হলেই যে মিথ্যে বলা জানতে হবে, এটা মানেন না তিনি। ‘রাজনীতিবিদ হতে গেলে হয়ত বা নিরপেক্ষ হওয়া বা অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বোঝার জন্য চুপ করে থাকা শ্রেয়, কিন্তু আমি বলব না কখনও মিথ্যে কথা বলার প্রয়োজন আছে।’ পিয়ার চিন্তাভাবনা আশা জাগানিয়া। এই হ্যাঁ-বোধক ভাবনাটা সবসময়ই থাকুক তাঁর মনে, ফুটে উঠুক তাঁর কর্মে; এটুকু প্রত্যাশা তো করাই যায়! বাকিটা মহাকাল ভাল জানবে। সময় ঘুড়ি পতপত করে উড়েই চলছে। সেই সঙ্গে ওড়ার সময় এখন পিয়ার। সে উড়ুক, ভীষণভাবে উড়ুক তাঁর আপন খেয়ালে... ছবি : আরিফ আহমেদ
×