ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জিএফআই প্রতিবেদন সঠিক কি-না খতিয়ে দেখার পরামর্শ বিশ্লেষকদের

অর্থ পাচার রোধে সক্রিয় বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫

অর্থ পাচার রোধে সক্রিয়  বাংলাদেশ ব্যাংক

রহিম শেখ ॥ বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। অর্থনীতির উন্নয়ন শুধু টাকায় নয়, প্রযুক্তিতেও এসেছে। প্রযুক্তির বদৌলতে ব্যাংকিং খাতের সবকিছুই এখন অনলাইনে পরিচালিত হচ্ছে। তাই বর্তমান সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাচার সম্ভব নয় বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ফলে গত ছয় বছরে দ্বিগুণ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ছয় বছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রফতানি আয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। শিল্পায়নের প্রবৃদ্ধি বাড়ায় বাড়ছে আমদানি। তারপরও বাংলাদেশ থেকে যদি টাকা পাচার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার আদৌ হয়েছে কি-না তা সরকারকে অনুসন্ধান করতে হবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য সঠিক কি-না তাও খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞরা। বুধবার প্রকাশিত ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) দেয়া তথ্য মতে, ২০০৪ থেকে ২০১৩ এক দশকে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে ৫ হাজার ৫৮৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাচার হয়েছে ২০১৩ সালে; যার পরিমাণ ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর আগের বছর পাচার হয় ৭২২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে অবৈধ অর্থপ্রবাহ বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। এছাড়া ২০০৮ ও ২০০৯ সালেও অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে চলে গেছে। ওই দুই বছরে পাচার হয় যথাক্রমে ৬৪৪ কোটি ৩০ লাখ ও ৬১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, অর্থ পাচার রোধে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক্ষেত্রে আগের চেয়ে অনেক সক্রিয়। পাশাপাশি এ কার্যক্রমের সার্বিক মানের উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের নজরে বিদেশে অর্থ পাচার প্রবণতাও আগের চেয়ে কমেছে। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, আলোচ্য দশকে অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক লেনদেনের মাধ্যমে পাচার হয়েছে ৪ হাজার ৯১৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। মূলত রফতানির ক্ষেত্রে এ অস্বচ্ছ লেনদেন হয়। এ প্রক্রিয়ায় প্রতি বছর গড়ে ৪৯১ কোটি ডলারের বেশি অর্থ দেশ থেকে চলে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে ২০১৩ সালে; যার পরিমাণ ৮৩৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অন্যদিকে ওই ১০ বছরে হট মানি আউটফ্লো বা ব্যালান্স অব পেমেন্টের মাধ্যমে পাচার হয়েছে ৬৭৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গড়ে প্রতি বছর পাচার হয় ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এক্ষেত্রেও সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে ২০১৩ সালে; যার পরিমাণ ১৩১ কোটি ১০ লাখ ডলার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. ফরাস উদ্দিন বলেন, আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। অন্য কোন মাধ্যমে অর্থ পাচার ঘটলেও ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাচার সম্ভব নয় বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ফলে গত ছয় বছরে দ্বিগুণ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত ছয় বছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রফতানি আয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি বাড়ায় আমদানিও বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা রিপোর্টে ২০১৩ সালের অর্থ পাচারের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। আর তা প্রকাশ করা হয়েছে দুই বছর পর। বর্তমান সময়ের সঙ্গে ওই রিপোর্টের তুলনা করা ঠিক হবে না। তারপরও বাংলাদেশ থেকে যদি টাকা পাচার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। জিএফআই বলছে, ২০০৪-১৩ সময়কালে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে চীন থেকে; যার পরিমাণ ১ লাখ ৩৯ হাজার ২২৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। দ্বিতীয় স্থানে আছে রাশিয়া; ১ লাখ ৪ হাজার ৯৭৭ কোটি ডলারের বেশি। শীর্ষ পাঁচে এর পর রয়েছে যথাক্রমে মেক্সিকো, ভারত ও মালয়েশিয়া। পাচার হওয়া এসব অর্থ জমা হয়েছে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এবং করের সুখস্বর্গ (ট্যাক্সেস হেভেন) বলে পরিচিত বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে। ২০১৪-এর জুনে ইউএনডিপি প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাধীনতার পর চার দশকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ জিডিপির আকারের প্রায় ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ। সে হিসাবে গত চার দশকে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এ অর্থ পাচারের মূল পন্থা আমদানি-রফতানিতে পণ্যের মূল্য কম-বেশি দেখানো। আমদানি-রফতানিতে পণ্যের মূল বেশি ও কম দেখানোর মাধ্যমে পাচার করা অর্থের পরিমাণ ৫৮ দশমিক ২ শতাংশ। আর বাকিটা বিভিন্ন দেশের এজেন্টের মাধ্যমে হুন্ডি করে পাচার হয়। জিএফআই বলছে, ২০০৪-১৩ সময়কালে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে চীন থেকে; যার পরিমাণ ১ লাখ ৩৯ হাজার ২২৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। দ্বিতীয় স্থানে আছে রাশিয়া; ১ লাখ ৪ হাজার ৯৭৭ কোটি ডলারের বেশি। শীর্ষ পাঁচে এর পর রয়েছে যথাক্রমে মেক্সিকো, ভারত ও মালয়েশিয়া। পাচার হওয়া এসব অর্থ জমা হয়েছে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এবং করের সুখস্বর্গ (ট্যাক্সেস হেভেন) বলে পরিচিত বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে।
×