ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

ময়মনসিংহে গ্রেফতার তিন আসামি কারাগারে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫

ময়মনসিংহে গ্রেফতার তিন আসামি কারাগারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ময়মনসিংহের আট আসামির মধ্যে গ্রেফতারকৃত তিন আসামিকে কারাগারে প্রেরণ করেছে ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দীর দ্বৈত বেঞ্চ তাদের কারাগারে পাঠান। সেই সঙ্গে এই মামলায় আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের দিন নির্ধারণ করেছেন। গ্রেফতারকৃত তিন আসামি হলোÑ রেজাউল করীম, ইউসুফ আলী ও উমর আলী। আসামিরা পালিয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় বাকি আসামিদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। এ বিষয়ে প্রসিকিউটর আবুল কালাম জানান, এই মামলায় ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর এ পর্যন্ত তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা রয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলছে এবং তদন্তের স্বার্থে আসামিদের গ্রেফতার করা প্রয়োজন বলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানানো হয়। জানা যায়, হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, অপহরণসহ এখন পর্যন্ত পাঁচটি মানতাবিরোধী অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার আট রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। আবেদনে বলা হয়, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মুক্তাগাছার ‘রাজাকার’ হিসেবে পরিচিত আক্কাসসহ আট আসামিকে গ্রেফতার করা প্রয়োজন। আদালতে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী, সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আবুল কালাম। পরে প্রসিকিউটর আবুল কালাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ও আসামিরা যাতে পলাতক না হতে পারে সেজন্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদনটি করা হয়। আদালত তা মঞ্জুর করেছে। আসামিদের গ্রেফতারের স্বার্থে এখনই তাদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।’ আসামিদের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ৪ মে তদন্ত শুরু করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। প্রাথমিক তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তাগাছা এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের দিন রয়েছে বলে জানান প্রসিকিউটর কালাম। একেএম ইউসুফ আলমকে গ্রেফতার ॥ এদিকে, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাগেরহাটের বন কর্মকর্তা মোঃ ইউসুফ আলী ওরফে একেএম ইউসুফ আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার গভীর রাতে র‌্যাব ৮-এর একটি দল সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের দুবলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শরণখোলা রেঞ্জের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা ইউসুফকে (৫৮) গ্রেফতার করে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর বাহিনীতে ছিলেন বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি মোঃ রুহুল আমিন জানান, বৃহস্পতিবারই ইউসুফকে বাগেরহাটের হাকিম আদালতে নেয়া হবে। পরে পাঠানো হবে ঢাকায়। গ্রেফতারকৃত ইউসুফ আলী জামালপুরের চানপুর হরিণাকান্দা গ্রামের আব্দুল খালেক ওরফে খালেক মাস্টারের ছেলে। তার বড় ভাই এবিএম ইউনুস আলীকেও (৬৫) যুদ্ধাপরাধ মামলায় একই রাতে জামালপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জামালপুরে একটি মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট ছিলেন। সব মিলিয়ে এ মামলার মোট চার আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও এএসপি রুহুল আমিন জানান। গ্রেফতারকৃত বাকি দু’জন হলেনÑ ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার ওমর ফারুক (৭০) এবং রেজাউল করিম ওরফে আক্কাস মৌলভী (৬৬)। আক্কাস মৌলভী মুক্তাগাছার চেচুয়া আলিয়া মাদ্রাসার সুপার। বুধবার রাতে তাদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘আসামি একেএম ইউসুফ আলম মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্র ছিলেন। সে সময়ে তিনি আলবদর বাহিনীতে যোগ দিয়ে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার সুবর্ণখিলা এলাকায় গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতন চালান।’ প্রাথমিক তদন্তে ‘অভিযোগের সত্যতা’ পাওয়ায় গত ১ এপ্রিল জামালপুর ও ময়মনসিংহ জেলার আটজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের এই মামলা করা হয়। প্রসিকিউশনের আবেদনে গত ৯ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। বাগেরহাটের শরণখোলা থানার ওসি মোঃ শাহ আলম মিঞা বলেন, ‘বন কর্মকর্তা ইউসুফ পরোয়ানা জারির খবর পেয়ে শরণখোলা ছেড়ে সুন্দরবনের দুবলা এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। পরে র‌্যাবের সহযোগিতায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।’ সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ সাইদুল ইসলাম জানান, একেএম ইউসুফ আলম ১৯৭৯ সালের ৯ আগস্ট বন বিভাগে ফরেস্টার পদে যোগ দেন। ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ডেপুটি রেঞ্জার হন তিনি। কিছুদিন আগে পদোন্নতি পেয়ে শরণখোলার স্টেশন কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছিলেন যুদ্ধাপরাধ মামলার এই আসামি।
×