ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিজয় দিবসের ব্যাপক প্রস্তুতি ছায়ানটে

লাল সবুজের মিলনমেলা, চার হাজার শিল্পী গাইবেন বিজয়ের গান

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১২ ডিসেম্বর ২০১৫

লাল সবুজের মিলনমেলা, চার হাজার শিল্পী গাইবেন বিজয়ের গান

মোরসালিন মিজান শুরুটা বাইরেই হয়েছিল। এখন ঘরে। ধানম-ির মতো অভিজাত এলাকায় দারুণ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছায়ানট ভবন। লাল ইটের বাতিঘর। কিন্তু বাইরে যে গোটা বাংলাদেশ! তার সঙ্গে সংযোগের কী হবে? মাঝে মাঝেই উঠেছে এ প্রশ্ন। আর তারপর দেশবিরোধী বাঙালী সংস্কৃতিবিরোধীদের আস্ফালন। মৌলবাদী হামলা। জঙ্গীদের হুমকি। এ অবস্থায় আর কত ঘরে বসে চর্চা? ছায়ানট তাই, জানালা খুলে নয় শুধু, দরজা খুলে বাইরে তাকিয়েছে। নতুন বাস্তবতায় তৃণমূলের মানুষের কাছে পৌঁছার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সংগঠনটি আয়োজন করছে বিজয় উৎসবের। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এটি হবে সংগঠনের যৌথ আয়োজন। তবে প্রচলিত ধারার উদ্যাপন নয়। বরং ছায়ানটের উৎসব অনুষ্ঠানের যে হৃদয়াবেগ গভীরতা ও ভাবগাম্ভীর্য, অটুট থাকবে। গান হবে। থাকবে নাচ আবৃত্তি। সব শিল্পভাষায় একটিই কথা হবেÑ মুক্তিযুদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের কাছে চেতনার জায়গাটি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হবে। অনেক বড় পরিসরে কাজ করতেই খেলার মাঠ বেছে নেয়া। এখানে গাইবেন চার হাজার শিল্পী। প্রায় সকলেই নিজেদের শিল্পী ও শিক্ষার্থী। আয়োজকরা বলছেন, অনুষ্ঠানের যারা শ্রোতা তারাই শিল্পী। সকলে মিলেই গাইবেন বিজয়ের গান। খেলার মাঠে প্রবেশের ক্ষেত্রে কেউ লাল পোশক পরে আসবেন। কেউ আসবেন সবুজ রঙে সেজে। দুইটি পৃথক গেট দিয়ে প্রবেশের ব্যবস্থা থাকবে। সবার প্রবেশ করা হয়ে গেলে মাঠটি জাতীয় পতাকার রঙে প্রকাশিত হবে। দারুণ এ আয়োজন দেখার অপেক্ষা না করে উপায় কী! বড় এ আয়োজন সফল করতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতিও। শুক্রবার ছায়ানট সে প্রস্তুতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের ধারণা দেয়। ভবনে গিয়ে দেখা যায়, গোটা মিলনায়তন পরিপূর্ণ। চলছে রিহার্সেল। শিল্পী সংখ্যা এত বেশি যে, মঞ্চে জায়গা দেয়ার কথা ভাবাও যায় না। সবাই বসেছিলেন দর্শক সারিতে। সবাই মানে, যারা মূল অনুষ্ঠানে অংশ নেবে তাদের একটি অংশ। একেবারে সামনে হারমোনিয়াম তবলা। পেছনে গানের খাতা খুলে বসেছেন শিক্ষার্থীরা। গাইছেন। তাদের ভুলগুলো ঠিক করে দেয়ার কাজে ব্যস্ত শিক্ষকরা। জাতীয় সঙ্গীতসহ ৯টির মতো গান হবে উৎসবে। একটি ছাড়া সবকটি গানের রিহার্সেল হচ্ছিল। সম্মেলক কণ্ঠে গাওয়া গানগুলোর মধ্যে ছিলÑ আমি মারের সাগর পাড়ি দেব, আমি ভয় করব না ভয় করব না, নবীন আশা জাগল যে রে আজ, জয় হোক জয় হোক, আমার দেশের মতন এমন, বাংলা ভূমির প্রেমে আমার প্রাণ হইলো পাগল ও লাখো শহীদের রক্তমাখা। এসব গানের সঙ্গে থাকবে নাচের পরিবেশনা। মঞ্চে সেই নাচ করে দেখালেন শিল্পীরা। ততক্ষণে বুঝতে বাকি থাকে না, বিজয় দিবসের এটিই হবে সবচেয়ে সুন্দর ও আন্তরিক আয়োজন। আয়োজকরা জানান, সম্মেলক ছাড়াও উৎসবে একক কণ্ঠে খায়রুল আনাম শাকিল গাইবেন ‘বিপ্লবের রক্তেরাঙা’ গানটি। আবৃত্তি করবেন মোহাম্মদ জহিরুল হক খান। তার আগে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে উৎসব। কিন্তু কেন খোলা মাঠে সবাইকে নিয়ে ছায়ানটের বিজয় উৎসব? উত্তর দিতে মঞ্চে আসেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। তিনি বলেন, ছায়ানট অনুধাবন করছে পাকিস্তানের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার চার দশক পেরোনোর পরেও পূর্ণাঙ্গ বাঙালী হয়ে বিশ্ব-মানবতাকে ধারণ করার মতো মানস তৈরি হয়নি স্বাধীন এই ভূখ-ের সকল অধিবাসীর। বরং অবক্ষয় ঘটে চলেছে মানসিকতা আর মূল্যবোধের। মাতৃভূমি এবং দেশের মানুষকে ভালবাসার ক্ষেত্রে ইদানীংকালে কিছু বিচ্যুতি, হানাহানিও পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, দেশকে দেশের মানুষকে ভালবেসে একত্রে কাজ শুরু করলে মানুষে মানুষে বিভেদ লাঘব হবে। সুতীব্র জাতীয় চেতনা ও মানবতা জাগ্রত করা অতীব জরুরী। সংস্কৃতি দিয়ে আবারও বাঙালীকে এক করা সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, এ আয়োজন সকলের স্বতঃস্ফূর্ত সরব অংশগ্রহণের দরজা খুলে দেবে। আমাদের লক্ষ্য, সকল দেশ ভক্তকে যুক্ত করা, অংশী করা, এক করা।
×