ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ সড়কের সন্ধানে

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১২ ডিসেম্বর ২০১৫

নিরাপদ সড়কের সন্ধানে

বিস্ময়কর হলেও বাস্তবতা এই যে, বাংলাদেশে নেই আন্তর্জাতিক মানদ-ের কোন সড়ক। দেশী মানের সড়ক যা আছে, তা যেন ‘দুর্গম গিরি’। এই সড়কে চলাচল মানে যে কোন সময়, যে কোন মুহূর্তে প্রাণবায়ু উধাও হবার পথ সুগম করা কিংবা দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে সটান হাসপাতালে, মৃত্যুর জন্য অপেক্ষমাণ থাকা। কর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী সড়ক নির্মাণ শুরু হলেও সম্ভব হচ্ছে না এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ। ফলে সড়কের দু’পাশজুড়ে শুধু হাটবাজারই বসছে না, হরেক ধাঁচের স্থাপনারও ঘাঁটি গাড়া হচ্ছে। দখল হয়ে যায় অবলীলায় সড়কের শোল্ডার। আর তাই দ্রুত নষ্ট হচ্ছে সড়ক আর বাড়ছে দুর্ঘটনার হার। বিশ্বে তাই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার বাংলাদেশে অত্যধিক। গড়ে প্রতিদিন ৫৬ জন প্রাণ হারায়। বছরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ হাজারের বেশি। দেশের যানবাহন ও সড়কগুলো মূলত সাক্ষাত যমদূতে পরিণত হয়েছে অথচ জনগণের নিরাপদ যাতায়াত ও মৃত্যুফাঁদ থেকে রক্ষা পেতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। আবার দায়ভারও বহন করে না। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলে আসছে নিহতদের মধ্যে ৩২ শতাংশই হচ্ছে পথচারী। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ১২টি দেশের মধ্যে প্রতি ১০ হাজার যানবাহনে বাংলাদেশে নিহতের হার সর্বোচ্চ এবং এ সংখ্যা ১৬৯ জন। অথচ সংশ্লিষ্টদের টনক আর নড়ে না। নিয়তির হাতে ছেড়ে দিয়ে যেন তারা বেশ সুখপ্রদ রয়েছেন। তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন না তুলে বলা যায়, অবহেলার চূড়ান্ত সীমায় তাদের সব কিছু। এই যেমন সারাদেশে ফিটনেস গাড়ির সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ অথচ ঢাকায় গত জুলাই পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করা প্রায় ৯ লাখ গাড়ির মধ্যে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬শ’ ৫১টি গাড়িই ফিটনেসবিহীন। আবার সারাদেশে নিবন্ধিত মোটরযানের সংখ্যা যেখানে ২৪ লাখ ৪ হাজার ১শ’ ২৪টি, সেখানে সনদধারী গাড়ি চালকের সংখ্যা ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৪শ’ ৬৫ জন। তাহলে বাকি ৯ লাখের বেশি যানবাহনের চালকরা কি? না হলে কিভাবে চলে এই যানবাহন। সনদবিহীন চালকের কোন পরিসংখ্যানই নেই সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কোন ফাইলেই। ভুয়া সনদধারী চালক ও মোটরযানের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হয়। ফলাফল যার শূন্যতায় আর্তনাদ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কের দু’পাশের স্থাপনাগুলো দায়ী হলেও তা অপসারণ করা হয় না। শেষ পর্যন্ত আদালতকে এগিয়ে আসতে হয়েছে। সড়ক নিরাপদ করার জন্য ও দুর্ঘটনা রোধে আদালত কতিপয় নির্দেশনা দিয়েছে আবারও। সর্বশেষ এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঢাকা হতে জেলা পর্যায়ে যাওয়ার জন্য সংযোগকৃত মহাসড়কের কার্যকরী ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে, মহাসড়কের দু’পাশের স্থাপনা অপসারণ জরুরী, মহাসড়ক যানবাহন নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী স্থাপনা তৈরির অনুমতি প্রদান সংক্রান্ত সরকারের ক্ষমতা বাতিলে পদক্ষেপ নিতে হবে। মহাসড়কের দুর্ঘটনারোধে আদালতের নির্দেশে ইতোপূর্বে গঠিত কমিটির সুপারিশসমূহ কার্যকর করার নির্দেশও দিয়েছে আদালত। আরেক নির্দেশে বলা হয়েছে, চালকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস, ৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। মহাসড়কে রোড ডাইভারশন তৈরি, পথচারী চলাচলে প্রয়োজনীয় স্থানে আন্ডারপাস, স্কুল সিলেবাসে ট্রাফিক আইন বিষয় অন্তর্ভুক্ত এবং মোটর আইনে অপরাধীর সাজা, জরিমানা বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এসব কার্যকর করার দায়িত্ব যাদের তাদের যদি বিষয়গুলো বোধগম্য না হয় তবে বিপর্যয় আরও বাড়বে। আদালতের এই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ কাগজে সীমাবদ্ধ থাকার অর্থই হচ্ছে, আরও বেশি মানুষ হত্যার পথ প্রশস্ত রাখা ও দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে রাখা। সড়ক দুর্ঘটনার অভিশাপ থেকে জাতিকে বাঁচানোর উদ্যোগ দ্রুত কার্যকর হোকÑ এই প্রত্যাশা দেশবাসীরও।
×