ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রেস ব্রিফিংয়ে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি

ইসকন, কান্তজিউ মন্দিরে বোমা হামলা ও ইতালীয় নাগরিক হত্যা একই সূত্রে গাঁথা

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫

ইসকন, কান্তজিউ মন্দিরে বোমা হামলা ও ইতালীয় নাগরিক হত্যা একই সূত্রে গাঁথা

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা অবশেষে স্বীকার করতে বাধ্য হলেনÑ ইসকন ও কান্তজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে হামলা, দিনাজপুরে ইতালীয় নাগরিককে গুলি করে হত্যা চেষ্টাসহ সংঘটিত ঘটনাবলী একই সূত্রে গাঁথা। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবি পুনরায় সংঘটিত হয়ে নাশকতার লক্ষ্যেই এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। শুধু দিনাজপুরে নয়, উত্তরের জেলাগুলোতে এ সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্নভাবে নাশকতার ঘটনা চালিয়ে যাচ্ছে। আর তাদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও মাঠে নেমেছে। জনগণের সহায়তা পেলে অনতিবিলম্বে অঙ্কুরেই তাদের বিনাশ করা সম্ভব হবে। তবে দিনাজপুরে একের পর এক হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায় ইসকন মন্দিরে বোমা বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনসহ নিয়মিত আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলা দুটিতে আটক দুইজনকে (জেএমবি সদস্য) গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই তাজুল ইসলাম শনিবার সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। রবিবার রিমান্ড শুনানির জন্য দিনাজপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রেজাউল বারী দিন ধার্য করেছেন। এদিকে দিনাজপুরের কাহারোলে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) মন্দিরে হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বেসরকারী বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম ও পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ুন কবির। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরে বোমা হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদী মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। শনিবার দুপুর ২টায় দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় এক প্রেস বিফ্রিংয়ে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ুন কবির জানান, দিনাজপুরে বিদেশী নাগরিক ডাঃ পিয়েরো পারোলারিকে হত্যার চেষ্টা, কান্তজিউ মন্দিরে বোমা হামলা, ইসকন মন্দিরে বোমা বিস্ফোরণ ও গুলি এবং ফিলিং স্টেশনে ডাকাতিÑ সবই একই সূত্রে গাঁথা। এগুলো উগ্র জঙ্গীবাদী গোষ্ঠী ও জেএমবির কাজ বলে তিনি জানান। তারাই রংপুর-দিনাজপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব নাশকতার ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। নাশকতাকারীদের ধরতে পুরো উত্তরবঙ্গে পুলিশের অভিযান চলছে। এ পর্যন্ত এসব নাশকতার ঘটনায় দিনাজপুর থেকে ৫ জন, গাইবান্ধা থেকে ৫ জন, লালমনিরহাটে তাদের গ্রুপেরই ইতোপূর্বে আটক করা হয়েছিল ৩ জনকে। তাদের পুনরায় রিমান্ডে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। রংপুর থেকে বেশ কয়েকজনকেও আটক করা হয়েছে। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। একই উদ্দেশ্যে একই গোষ্ঠী এসব কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং তারাই বিভিন্ন এলাকায় নাশকতামূলক কর্মকা- চালাচ্ছে। এ সময় দিনাজপুরের পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম খালেকুজ্জামানসহ পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। ডিআইজি জানান, এগুলো পরিকল্পিতভাবে শান্তিপ্রিয়, নিরীহ মানুষ ও বিদেশী নাগরিককে হত্যা করে এদেশে একটি অস্থিতিশীল ও দেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে যারা অপচেষ্টা চালাচ্ছে তাদের অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেয়া হবে। তাদের কার্যক্রমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কোন অবস্থাতেই বিনষ্ট হবে না। অস্ত্র সংগ্রহের জন্য তারা ব্যাংক, ফিলিং স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করছে। তবে তাদের ইন্ধনদাতা ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে অন্য কোন শক্তি থাকতে পারে। এসব তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যারা আটক হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও পুলিশের তদন্তে এগুলো জেএমবির কাজ বলে বেরিয়ে এসেছে। এ বিষয়গুলো পৌর নির্বাচনে কোন প্রভাব ফেলবে না বলে জানান তিনি। ২০০৪ সাল থেকে এ ধরনের জঙ্গীবাদের উত্থান হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি জানান, তবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এসব পুরোপুরিভাবে দমন করতে সক্ষম হয়েছিল। জনগণের সহযোগিতা পেলে শীঘ্রই আবার তাদের সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব। দিনাজপুরের কাহারোলে ইসকন মন্দিরে হামলার ঘটনায় দুইজনের নাম দিয়ে অজ্ঞাত আরও ছয়জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কাহারোল থানার অফিসার ইনচার্জ মনসুর আলী সরকার জানান, ইসকন মন্দিরের পুরোহিত গোবরধন দাস বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। ইসকন মন্দিরে ঘটনার সময় ও ঘটনার পরের দিন আটক শরিফুল ইসলাম ও মোসাব্বির আলম খন্দকারকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি বীরগঞ্জের সিংড়া শালবন এলাকা থেকে অস্ত্রসহ মোসাব্বির আলম খন্দকারকে আটকের ঘটনায় বীরগঞ্জ থানায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করেছেন থানার এসআই শাহাদত হোসেন। মামলায় আটক দুইজনের নাম দিয়ে অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং আটককৃতদের ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ইসকন মন্দিরে বোমা হামলা ও গুলির ঘটনার প্রতিবাদে দিনাজপুরে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদ্যাপন পরিষদ। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচীতে জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চন, সাধারণ সম্পাদক পরিমল চক্রবর্তী তপনসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পলাশবাড়ীতে আটক ৫ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, দিনাজপুরের কাহারোল ইসকন মন্দিরে গুলি ও বোমা হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন ৫ ব্যক্তিকে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী থেকে আটক করা হয়েছে। গত শুক্রবার গভীর রাতে পলাশবাড়ী থানা পুলিশ তাদের আটক করে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান শনিবার বিকেলে বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করে বলেন, ইসকন মন্দিরে হামলার ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন শরিফুলের বাবা সাকোয়াত হোসেন সরকার (৫৫), তার বন্ধু আবু জাফর ইকবাল প্রধান (৫৬) ও ইকবাল প্রধানের তিন ছেলে ফরহাদ হোসেন (২৮), ফুয়াদ হোসেন (২৫) ও সিহাব হোসেন (২০)। পুলিশ জানায়, পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রাম থেকে তাদের আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
×