ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যেমন আছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক সুব্রত সেনগুপ্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫

যেমন আছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের  শব্দসৈনিক সুব্রত সেনগুপ্ত

গৌতম পাণ্ডে ॥ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক সুব্রত সেনগুপ্ত। ‘রক্ত চাই রক্ত চাই অত্যাচারীর রক্ত চাই’, ‘ছুটরে সবাই বাঁধ ভাঙা বান অগণিত গ্রাম মজুর কিষাণ’, ‘শোন জনতা গণ জনতা’, মুক্তিযুদ্ধের সময় এরকম অনেক কালজয়ী গান লিখেছিলেন সুব্রত সেনগুপ্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি ওপর রয়েছে ১৬০টি গান, আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছেন ৫৫৫টি গান। ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিসংগ্রামে। এরপর থেকে অনেকটা অনাদর আর অবহেলায় কেটেছে জীবন। ১২ বছর যাবত স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় কেটেছে। তবুও এই গুণী মানুষটির খবরও রাখেন না কেউ। এখন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই কণ্ঠসৈনিক মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে চিকিৎসাধীন ছিলেন, কিন্তু টাকার অভাবে সেখান থেকে বাসায় ফিরে আসতে হয়েছে। তাকে দেশের বাইরে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এর মধ্যেও বাঁচার স্বপ্ন দেখেন দেশপ্রেমিক এই মানুষটি। তাই জীবনের পড়ন্ত বেলায় তাঁর চাওয়া একটাই। তা হলো; জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসার দায়িত্ব নেবেন। সুস্থ হয়ে ফের দেশের জন্য লিখতে চান। মৃত্যু যেন তাঁকে তাড়া করে ফিরছে। তবুও দেশকে নিয়ে তাঁর স্বপ্ন অনেক। জানা গেছে সুব্রত সেনগুপ্ত মেরুদ- স্পাইনাল কর্ড, বক্ষ, নিউরো এবং ইউরোলজি সমস্যাসহ শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন। টাকার অভাবে চিকিৎসার ভার বহন করতে পারছে না তার পরিবার। মৃত্যু তাঁকে তাড়া করে ফিরলের স্মৃতি কাতর হননি। বিছানায় শুয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, বিজয় দিবসে সবাই আনন্দ-উল্লাস করবে, কেউ পাঠ করবে স্বরচিত কবিতা, কেউ করবে গান, আর আমি একজন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক হয়ে বিছানায় শুয়েই কাটাব, এমন দুর্ভাগ্য আমার, সবার সঙ্গে আমি শামিল হতে পারছি না। মরণব্যাধি আমাকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। অন্যের জন্য নিজেকে সারাজীবন বিলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে নিয়তির কাছে হেরে যাচ্ছি। বড় স্বার্থপরের মতো নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কেবল নিজে সুস্থ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। শেষ পর্যন্ত সেখানেও বোধহয় ব্যর্থ হচ্ছি। টাকাকে আমার জীবনে কখনও অনিবার্য ভাবিনী। টাকার অভাবে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে আজ মনে হচ্ছে টাকাই মানুষের জীবনের চরম অনিবার্য। আমি হয়ত আর বাঁচব না। মানুষ মরে যায় এটাই নিয়ম। আমিও মরে যাব। কিন্তু বিনা চিকিৎসায় আমাকে মরতে হবে এটা ভেবে কষ্ট হয়। আমার এরকম নির্মম পরিণতি হলে ভবিষ্যতে দেশের ক্রান্তিলগ্নে আর কি কেউ এগিয়ে আসবে? আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ভিক্ষা মানছি। তিনি যেন আমার সুচিকিৎসায় এগিয়ে আসেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে সাক্ষাত করতে চাই। আমার বেদনার কথাগুলোকে তাঁকে জানাতে চাই। নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান-তারা যেন আমার মত মুক্তিযোদ্ধাদের সত্যিকারের মূল্যায়ন করতে শেখে। তিনি বলেন, আমি প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নাতি। আমার মধ্যে বিপ্লবী চেতনার রক্ত। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সেই বিল্পবী চেতনা আরও উদ্দীপ্ত হয়। ২৫ মার্চে রাতে যখন পাক সেনারা সারাদেশে খুন-জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে। সাহস নিয়ে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে থাকি। পাগলের বেশে বিভিন্ন জায়গার খবর ও বোমা বহন করতাম। পরে যখন দেখলাম তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক কষ্টে কসবা বর্ডার দিয়ে পার হয়ে ভারতের সোনামুড়ায় পৌঁছিয়ে আগরতলা শহরের কংগ্রেস ভবনে উঠলাম। সেখানে অনেক পরিচিতদের সঙ্গে দেখা হলো। সেখান থেকে বলা হলো যে বিষয়ে যে পারদর্শী সে তাই নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আমার আছে সুর, গান লেখার ক্ষমতা। কলকাতা ১৯’র ৫৭/৮ বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রে পৌঁছলাম। আমি অনেক গান এবং কবিতাও লিখেছি। আমার লেখা ‘রক্ত চাই রক্ত চাই অত্যাচারীর রক্ত চাই’ গানটির সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম, ‘ছুটরে সবাই বাঁধ ভাঙা বান অগণিত গ্রাম মজুর কিষাণ’ গানটির সুরকার অনুপ ভট্টাচার্য, ‘শোন জনতা গণ জনতা’ সুর করেছিলেন সলীল চৌধুরী। আমরা যে স্বাধীন সার্বভৌম, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলাম তার পুরোটা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছি। এখন পরাজিত শত্রুরা আবার নতুন করে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টায় লিপ্ত। তিনি বলেন, বিছানায় শুয়ে আমার প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৫৫৫টি গান লিখেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গানগুলো দেখানোর চেষ্টা সফল হয়নি।
×