ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুন্দরবনে পাঁচ দিন জাহাঙ্গীর ও নয়ন বাহিনীর তাণ্ডব

শত মৎস্যজীবীকে অপহরণ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫

শত মৎস্যজীবীকে অপহরণ

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ পূর্ব সুন্দরবনে সশস্ত্র জাহাঙ্গীর বাহিনী ও নয়ন বাহিনীর বেপরোয়া তা-বে জেলেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। মুক্তিপণের দাবিতে গত ৫ দিনে আরও এক শ’ জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। শরণখোলা রেঞ্জের মরাভোলা, ধাবড়ি, তেঁতুলবাড়িয়া, আড়াইবেঁকী, দুধমুখীসহ বনের বিভিন্ন এলাকায় হানা দিয়ে সশস্ত্র বনদস্যুরা প্রায় প্রকাশ্যে জেলেদের ধরে নিয়ে নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন করছে। এমনকি দস্যুরা শরণখোলা ফরেস্ট অফিসের নিকট দিয়েও জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে গোটা পূর্ব সুন্দরবনে জেলেদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অপহৃত জেলেদের বাড়ি বাগেরহাট, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, মংলা ও রামপাল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বলে জেলে ও মহাজনরা জানিয়েছেন। অপহৃতদের মধ্যে পাঁচজনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন- মিজান বয়াতী, রহিম হাওলাদার, আবুল ঘরামী, হাসান হাওলাদার ও সাইদুল শিকদার। এর আগে ৭ ডিসেম্বর রাতে বনদস্যু নয়ন বাহিনী শরণখোলা ও ধানসাগর স্টেশন এলাকার বন থেকে ৪০ জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারা এখনও ওই বাহিনীর হাতে জিম্মি রয়েছেন। তাদের মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা দাবি করেছে দস্যুরা। এছাড়াও বনদস্যু আকাশবাহিনী গত ২৮ নবেম্বর শরণখোলার স্কুলছাত্র রাজিবসহ ৩০ জেলেকে অপহরণ করে বনের মধ্যে আটকে রাখে। পরে মুক্তিপণ দিলে তারা মুক্তি পায়। ফিরে আসা জেলেদের বারত দিয়ে সাউথখালী ইউনিয়নের কয়েক মহাজন জানান, তাদের ইউনিয়নের বগী, খুড়িয়াখালী, সোনাতলা, বকুলতলা, চালিতাবুনিয়া ও দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের শতাধিক জেলে শরণখোলা রেঞ্জ মরাভোলা, বড়শির খাল, আলীবান্দা, জহরমণি, টাকার খাল, তালবাড়িয়া এলাকায় কাঁকড়া আহরণ করতে যান। তারা রাতে নৌকায় অবস্থানকালে বনদস্যু জাহাঙ্গীর বাহিনীর ২০-২২ জন দস্যু সন্ধ্যারাত থেকেই জেলে বহরে হানা দেয়। দস্যুরা প্রতিটি নৌকায় হানা দিয়ে ৭০-৭৫ জেলেকে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যায়। অপরদিকে, রায়েন্দা ও ধানসাগর ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজাপুর, রসুলপুর, উত্তর রাজাপুর ও রতিয়া রাজাপুর এলাকা চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের তাম্বলবুনিয়া, শান্তিরখাল ও নিশানবাড়িয়া বন এলাকার বিভিন্ন খালে কাঁকড়া আহরণ করছিলেন। একই রাতে বনদস্যু নয়ন বাহিনী নৌকায় হানা দিয়ে আরও ৩০-৩৫ জেলেকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে নিয়ে গেছে বলে মহানজনরা জানিয়েছেন। এদিকে একের পর এক অপহরণের ঘটনায় জেলেদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মহাজনরাও দস্যুদের মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ এবং লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এখন হতাশায় ভুগছেন। তারা দস্যুদের নির্যাতনে পেশা ছেড়ে দেয়ার চিন্তা করছেন। অনেকে দস্যুদের অত্যাচারে ব্যবসা ফেলে ফিরে এসেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত জেলে-মহাজনরা দস্যু দমনে বনবিভাগ ও কোস্টগার্ডের অপারগতার কারণে দস্যুদের তা-ব বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ সাইদুল ইসলাম জানান, নানা সঙ্কট সত্ত্বেও দস্যুদের উপদ্রব দমনে বনবিভাগ সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের (মংলা) জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেহেদী মাসুদ জানান, অপহৃত জেলেদের উদ্ধার ও দস্যুদমনে অভিযান চলছে।
×