ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিরোপায় দৃষ্টি মাশরাফির

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫

শিরোপায় দৃষ্টি মাশরাফির

মিথুন আশরাফ ॥ এক, দুই, তিন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) তিনটি আসর হয়ে যাচ্ছে। ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে তৃতীয় আসর শেষ হবে মঙ্গলবার। তিনটি আসরেই একজন অধিনায়ক ফাইনালে খেলছেন। শুধু দল পাল্টাল। কিন্তু অধিনায়ক আর পাল্টালেন না। তিনি মাশরাফি বিন মর্তুজা। যিনি প্রথম আসরে, দ্বিতীয় আসরে; এমনকি তৃতীয় আসরেও ফাইনালে খেলছেন। নেতৃত্ব দেবেন। দুইবার ঢাকার হয়ে ফাইনালে খেলেছেন। এবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খেলবেন। দুইবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মাশরাফির দল। এবারও কি তাহলে মাশরাফির ছোঁয়াতে কুমিল্লাও শিরোপা ঘরে তুলবে? সেই শিরোপাতেই দৃষ্টি আছে মাশরাফির। বলেছেনও, ‘যে পর্যায়ের ক্রিকেটই হোক না কেন, পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে সব সময়ই লক্ষ্য থাকে শীর্ষে যাওয়ার।’ এ শীর্ষে যাওয়াই হচ্ছে শিরোপা জেতা। প্রথম কোয়ালিফায়ারে শনিবার রংপুর রাইডার্সকে ৭২ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েই ফাইনালে খেলছে কুমিল্লা। রবিবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে রংপুর-বরিশাল বুলসের মধ্যকার যে দল জিতবে, কুমিল্লার বিপক্ষে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলবে তারা। এ ম্যাচের আগে প্রথম কোয়ালিফায়ার জিতেই ফাইনালে উঠার আনন্দ বেশি, না দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচ না খেলার স্বস্তিটা বেশিÑ এমন প্রশ্নে মাশরাফি শীর্ষস্থানে যাওয়ার কথা বলেন। তিনি জানান, ‘ফাইনালে উঠার আনন্দ অবশ্যই অনেক বেশি। খুব ভাল লাগছে। একই সঙ্গে একটা ম্যাচ খেলা মানে শরীরের ওপর চাপ এবং টেনশনও থাকে। মনে হয়Ñ এটাই শেষ সুযোগ।’ ইনজুরি এখনও কাটেনি মাশরাফির। ব্যাকপেইন ইনজুরি নিয়েই একবার ২০১০ সালে আবাহনীকে চ্যাম্পিয়ন করান বাংলাদেশ ওয়ানডে ও টি২০ দলের অধিনায়ক। এবার হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি নিয়েও কি শিরোপা জেতা হবে? মাশরাফি বলেন, ‘জানি না! আল্লাহর রহমত! আমরা ফাইনাল খেলতে পারছি এটা অনেক বড় স্বস্তি। এ ধরনের টুর্নামেন্টে অনেক চাপ থাকে। বাইরের চাপ বেশি থাকে। এখনও তো একটা ম্যাচ বাকি। চ্যাম্পিয়ন তো পরে। আরও একটা ম্যাচ বাকি আছে। তবে ফাইনালে যাওয়ায় এই মুহূর্তে ভাল লাগছে।’ এখনও পুরো ফিট না থাকলেও খেলতে থাকার শক্তি পাওয়া নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘শর্ট রানআপে বোলিং করাটা কঠিন। শরীরের অন্য জায়গায় চাপ পড়ে। সারাজীবন যেটা করেছি, লং রানআপে বোলিং করলে আমার ছন্দটা ঠিক থাকে। আমার ফিটনেসের কথা বললে বলব যে, কিছুটা ব্যথা হচ্ছিল। শর্ট রানআপে বোলিং করতে পেরেছি। আল্লাহর রহমত আছে। ভাগ্যও সহায় হয়েছে।’ কুমিল্লার খেলা ১১ ম্যাচের মধ্যে পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক অলরাউন্ডার আজহার জাইদির কাছ থেকে যা আশা করা হয়নি, তারচেয়ে বেশি পেয়েছে দল। ১০ ম্যাচ খেলে ৭ ম্যাচে ব্যাটিং করে ৬৬.৩৩ গড়ে ১৯৯ রান করেছেন জাইদি। সেই সঙ্গে বল হাতে ১৬ উইকেটও নিয়েছেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সেরা অলরাউন্ডার জাইদিই। রংপুরের বিপক্ষে প্রথম কোয়ালিফায়ারে অসাধারণ নৈপুণ্য তার। ব্যাট হাতে প্রয়োজনের মুহূর্তে ১৫ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৪০ রান করেন। বল হাতে ৪ ওভারে ১ মেডেনসহ ১১ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরাও হন। এ অলরাউন্ডারকে নিয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত মাশরাফি। বলেছেন, ‘জাইদি আমাদের যেভাবে সার্ভিস দিয়েছেন সেটা অবিশ্বাস্য। ওর কাছে এতটা কেউ আশাও করেনি। একটা সময় মনে হয়েছিল আমাদের রান হয়ত ১৪৫ থেকে ১৫০ রানের মধ্যেই হবে। শেষ দুই ওভারে অবিশ্বাস্য ভাল ব্যাটিং করেছে। এছাড়া বোলিং তো ও পুরো টুর্নামেন্টেই ভাল করেছে।’ বিপিএলে এবার একজন পেসারকে সবাই চিনেছে। তিনি আবু হায়দার রনি। বাঁহাতি এ পেসার দুর্দান্ত বোলিং করছেন। প্রতি ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে কাঁপাচ্ছেন। টুর্নামেন্টে ২১ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী এখন রনিই। বিপিএলের আগে যার কোন টি২০ ম্যাচই খেলা হয়নি, সেই রনিকে এখন সবাই চিনে। রনির ভবিষ্যত উজ্জ্বলই দেখছেন মাশরাফি। রনিকে নিয়ে বলেছেন, ‘বিপিএলে আমাদের ঘরোয়া টুর্নামেন্টের চেয়ে একটু বেশি প্রেসার থাকে। কারণ এখানে বিদেশী খেলোয়াড়রা থাকে। এরপরও রনি যেভাবে বোলিং করেছে, আমার মনে হয় ও অনেক পরিণতিবোধ দেখিয়েছে। ওকে এমন জায়গাও বোলিংয়ে পাঠিয়েছি, যেখানে প্রেসার আছে। এখনও সে নতুন। কখনও হয়তও নিতে পারছে, কখনও হয়ত পারছে না। ওকে কাছে থেকে দেখেছি ও খুবই সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যত বলা যায় ওকে। তবে ক্লাব ক্রিকেট এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটের পার্থক্যটা অনেক বড়। এসেই পারফর্ম করা অনেক সময় সহজ, অনেক সময় কঠিন। বাংলাদেশ দলের কথা চিন্তা করলে ওকে গ্রেট ফিউচার বলা যায়।’ এ ভবিষ্যত ক্রিকেটার মঙ্গলবারও বাজিমাত করতে পারলেই হয়। সঙ্গে জাইদি, ইমরুল কায়েস ও লিটন কুমার দাসদের নৈপুণ্যে কুমিল্লা শিরোপা জিততে পারলেই হয়। তাহলে টানা তিন বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন অধিনায়কের নামটি হবে মাশরাফি বিন মর্তুজা। সেই আশাতেই আছে এখন কুমিল্লা।
×