মোঃ মামুন রশীদ ॥ নিজেদের মাঠে এখন দর্শক স্বাগতিক ঢাকা ডায়নামাইটস। শেষ চারের এলিমিনেটর থেকেই ছিটকে গেছে এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) তৃতীয় আসরে। প্রাথমিক পর্বেও খুব বেশি ভাল নৈপুণ্য দেখিয়ে শেষ চারে উঠতে পারেনি দলটি। ১০ ম্যাচে মাত্র ৪ জয় নিয়ে চতুর্থ স্থান দখল করে শেষ চারে পা রেখেছিল। কিন্তু শেষ চারের ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচের চাপটা আর কাটাতে পারেনি তারা। চতুর্থ দল হিসেবেই এবারের মতো বিপিএল অভিযান শেষ হয়ে গেছে ডায়নামাইটসের। আর এতে দারুণ হতাশ দলটির দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ মিকি আর্থার। তিনি মনে করেন, এবার দল গঠনেই সমস্যা ছিল, যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ পজিশনগুলো পূর্ণ করার মতো খেলোয়াড় পাওয়া যায়নি। শেষ চার পর্যন্ত আসাটাই ছিল বড় সৌভাগ্যের বিষয়। তিনি দাবি করলেন পরবর্তী বছর পুনরায় দায়িত্ব নেয়ার সুযোগ পেলে আগেভাগেই ফ্র্যাঞ্চাইজিকে গুরুত্বপূর্ণ পজিশনগুলোয় প্রয়োজনীয় খেলোয়াড় দলে টানার পরামর্শ দেবেন।
মাত্র চারটি ম্যাচ জিতেই শেষ চারে পা রাখে ঢাকা ডায়নামাইটস। সেটিও সম্ভব হতো না যদি চিটাগাং কিংস ও সিলেট সুপারস্টারস অত্যন্ত বাজে নৈপুণ্য না দেখাত। ডায়নামাইটস শেষদিকে এমনকি স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানদের বাদ দিয়ে ব্যাটিংয়ে ওপেনিং করানো হয়েছে অলরাউন্ডারদের দিয়ে। শেষ চারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, যেখানে হারলেই বিদায় সে ম্যাচেও ব্যাটিংয়ে ওপেনিং করেছেন আবুল হাসান রাজু ও ফরহাদ রেজা। এ বিষয়ে আর্থার বলেন, ‘ওপেনিং ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে আমাদের আরেকটু মনোযোগ দেয়ার প্রয়োজন ছিল। কারণ এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পজিশন, যারা একটি ম্যাচকে ভালভাবে এগিয়ে নিতে সক্ষম। ক্রিস গেইল টি২০ ক্রিকেটে বিশ্বের সেরা। তাকে আমরা পাইনি কিন্তু শেন ওয়াটসন কিংবা এমন কাউকে যার মাধ্যমে দারুণ কিছু করা সম্ভব হতো তাকে নেয়া প্রয়োজন ছিল।’ শুধু ওপেনিং নয়। মিডলঅর্ডারটাও ঠিকভাবে সমন্বয় করা হয়নি। এমনটাই দাবি আর্থারের। তিনি বলেন, ‘ব্যাটিং পজিশনের মাঝেও এমন কাউকে আপনার প্রয়োজন ছিল যাকে দিয়ে আপনি দলকে রক্ষাও করতে পারবেন এবং ভাল অবস্থানে নিতে পারবেন। টি২০ ক্রিকেটে অবশ্যই খুব বেশি ডট বল খেলা যাবে না। আমরা গড়ে প্রায় ৩৫টি করে ডট বল খেলেছি। এটা অবশ্যই যেকোন দলের জেতার জন্য ভাল কোন বিষয় নয়। এজন্যই আমরা খুব বড় কোন সংগ্রহ পাইনি পুরো টুর্নামেন্টে। এছাড়া ভালভাবে শেষ করার জন্য একজন খাঁটি অলরাউন্ডার কিংবা ডেথ ওভারে বোলিং করার মতো বোলার প্রয়োজন হয়। আশা করছি আগামী বছর এভাবেই চিন্তা করে দল গড়া হবে।’ তবে দল যেভাবেই গড়া হোক না কেন বিদায় সবসময়ই কষ্টের। এজন্য দারুণ হতাশ আর্থারও। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ অবশ্যই অনেক হতাশাজনক ব্যাপার। এ প্রতিযোগিতা থেকে আমরা ছিটকে গেলাম। আমরাও এ প্রতিযোগিতায় জিততে পারতাম। কিন্তু সেটা না হওয়াতে অবশ্যই হতাশ। আমাদের অভিজ্ঞ সাঙ্গাকারা, নাসির ও ম্যালকম ওয়ালার আরেকটু ভাল করতে পারতেন। তারা ভাল করতে পারলে আমরা অবশ্যই জয়ের পথে এগিয়ে যেতাম।’ ক্রিস গেইলের মতো ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান যখন ওপেনার, সে সময় ডায়নামাইটস বোলিং করিয়েছে নাসির হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে দিয়ে। এ বিষয়ে আর্থার বলেন, ‘আমাদের এটা গেম প্ল্যানের একটা অংশ ছিল। কারণ বল পড়ার পরে ভাল স্পিন হচ্ছিল এবং উইকেট থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল। আমরা ভেবেছিলাম ক্রিস গেইলের বিরুদ্ধে দু’জন অফস্পিনার খুবই ভাল ব্যাপার হবে। কিন্তু আমাদের পরিকল্পনাটা শুরুতে কাজে দেয়নি। তবে মাঝপথে আমরা যথেষ্ট ভাল বোলিং করে তাদের ১৩৮ (১৩৫) রানে বেঁধে রাখতে পেরেছি।’
এবারের মতো ডায়নামাইটসের অভিযান শেষ। তবে পরবর্তী বছর পুনরায় বিপিএলে ফিরলে আগেভাগেই দল গঠন নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে কথা বলে নেবেন আর্থার। কারণ নিজের সুবিধামতো সমন্বয় গড়ার প্রয়োজন ভালভাবে দল পরিচালনা করতে হলে। জয় পাওয়ার জন্যও বিশেষ কিছু ব্যাপারে মনোযোগ দেয়া জরুরী। এ বিষয়ে আর্থার বলেন, ‘আমাদের টিম নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরেকটু ভালভাবে মনোযোগ দেয়ার দরকার ছিল। যতটুকু এসেছি সেটাকেই আমি বলব সৌভাগ্য। স্থানীয় ও বিদেশী খেলোয়াড়দের মধ্যে ভাল সমন্বয় ঘটেনি। আমি স্থানীয় ব্যাটসম্যানদের কোনভাবেই ছোট করছি না।
এ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশী খেলোয়াড়রা অনেক ভাল করেছেন। আমাদের দলেরও অনেকে বেশ ভালভাবেই নিজেদের নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন। যেমন মোসাদ্দেক খুব ভালভাবেই বুঝিয়েছেন তিনি একজন উদীয়মান তারকা। আর নাসির জাতীয় দলের হয়েই নিয়মিত খেলেন এবং তিনি অবশ্যই অনেক দায়িত্ব নিয়ে খেলেছেন। আশা করছি আগামী বছরও ফিরব এখানে। তখন আমি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে বলব যেন গুরুত্বপূর্ণ পজিশনগুলোয় উপযুক্ত খেলোয়াড় নেয়া হয়। কারণ ভাল করার জন্য বিশেষ কিছু বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। অনেক কাজও করতে হবে।’
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: