ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোঃ জগলুল কবির

মধুময় জীবন

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫

মধুময় জীবন

মধুময় জীবন শুনলেই রোমান্টিক এক অনুভূতি আসে। মনের মাঝে ভেসে আসে স্বামী-স্ত্রীর একসাথে একে অপ্ররের ছায়ার মতো জীবনের কল্পনা। দীর্ঘ অপ্রেক্ষার প্রর মধু-মিলনের গল্প, যেখানে সুখ-আনন্দের সাথে বাস্তব জীবনে প্রদার্প্রণ হয় আর তখন আমাদের সত্যিকারের স্ব স্ব চরিত্র সুন্দর ও ভিন্নভাবে ফুটে উঠে। তবে যৌবনের প্র্রারম্ভে একটি ছেলে বা একটি মেয়ের মনের মধ্যে প্র্রাকৃতিক নিয়মেই বিপরীতের প্রতি আকর্ষণ-অনুভূত হয়, আর তা স্বর্গীয়। উভয়ের পাওয়ার আকর্ষণ, কিন্তু একটু অপেক্ষা, যা এই আকর্ষণকে আরও গভীর করে রাখে। উভয়ই ছন্দবদ্ধ একে অপরকে পাওয়ার নেশায়। আকাশ-বাতাস, বাতাসের মিষ্টি গন্ধ হেমন্তের শেষে পৌষের শীতের আমেজ, গ্রামের আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া আর বসন্তের অপেক্ষায় থাকা যেন জীবনে অন্য এক অর্থ বহন করে। আবেগ-অনভূতি মনে হয় নির্বিকল্প। আকাশের নীলিমায় উড়ন্ত পাখির ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া, অন্ধকার রাতের জ্বলজ্বল নীহারিকাগুলো জীবনের অনুভূতিতে নতুন কল্পনা সৃষ্টি করে। শীতের পরের বসন্তে মধু-মিলনের মধ্য দিয়ে জীবনকে মধুময় করে তোলার অপেক্ষায় প্রহর গুনে। ২৫-২৮ বছর বয়সের দম্পতি এমন মধুময় জীবন শুরু করে যখন একসাথে চলতে থাকে, নিজেই নিজেকে ভালভাবে অনুভব করার আগেই কিছু দায়িত্ব সামনে চলে আসে তা উভয়েরই, নিজের ও শ্বশুরবাড়ির। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য একটু কঠিন বেশি। নিজের বাবার বাড়ির মায়া-মমতা, কলিজা নিঙরানো ভালবাসা, বাবা-মা, ভাই-বোন সবাইকে রেখে আলাদা জগত ও ভুবনে এত অল্প বয়সে খাপ্রখাইয়ে নেয়া যা সত্যি অনেক বড় ধাপ। এ ক্ষেত্রে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির সবাই যদি সহানুভূতিশীল হয়, নিজেদের মেয়ের মতো করে বরণ করে নেয়, ছোট ছোট ভুলত্রুটিগুলো নিজের মেয়ের মতো ক্ষেত্রবিশেষে তারচেয়ে বেশি আদর-যতেœ শুধরে দেয় সেটাই আমাদের সত্যিকারের আশা, এটা অনেক বড় মানবতা। তা বিপরীত হলে সেটা সত্যি নিষ্ঠুরতা, মধুময় জীবনে চলার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। জীবনের ছন্দপতন শুরু হয়। একটি মেয়ে অন্য পরিবেশ থেকে এসে এত অল্প বয়সে নতুন মানুষের সাথে সহজে খাপ খাওয়ানো সত্যি একটু কঠিন। এ ক্ষেত্রে শ্বশুর-শাশুড়ির বড় ভূমিকা, সহানুভূতি খুব প্রয়োজন। ভুল-ত্রুটি করাটাই স্বাভাবিক, সেটাকে মমতা দিয়ে ভালবাসা দিয়ে শুধরালে সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যায়। নতুবা তিক্ততা দিয়ে খারাপ ব্যবহার করলে নতুন দম্পতির জীবন তিক্ত হয়ে ওঠে। সুখের জীবনে ছন্দ হারায়। এই সমাজে এখনও ছেলেরা মেয়েদের উপর বেশি প্রভাব রাখে। সাধারণত স্বামীর অধীনেই স্ত্রীরা থাকে। তাই স্বামীর দায়িত্ব স্ত্রীর চেয়ে বেশি। স্ত্রীর অনুভূতিকে, তার চলনাফেরার ধরন অনুভব করতে হবে। কোন ভুল-ত্রুটি মনে হলে বুদ্ধি খাটিয়ে ধৈর্য সহকারে সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। স্ট্রেট সাথে সাথে কিছু না বলে সময় নিয়ে মন বুঝে অর্থাৎ স্থান-কাল-পাত্র বুঝে এগুতে হবে। যদিও স্বামীরও বয়স কম, যৌবনকাল, চোখেমুখে চঞ্চলতা, তারপরও একটু একটু ম্যাচিউরিটি আনতে হবে, তা না হলে ছোট ছোট তিক্ততা শুরু হলে সেগুলো এক সময় বড় আকার ধারণ করে ফেলতে পারে। ননদ-দেবররা ভাবির সাথে ভাই-বোনের মতো থাকা প্রয়োজন, মাঝে মাঝে এদের কারণে ঘরের নতুন অতিথি বা বউয়ের জীবনে বড় কষ্ট নেমে আসে। সেজন্য সবাই মিলে-মিশে আপন করে নেয়া প্রয়োজন। পৃথিবীর সব স্বামী-স্ত্রীর আকাক্সক্ষা-আশা সুন্দর ফুটফুটে সন্তান। কোন মেয়ে যখন সন্তানসম্ভবা হয় তখন তার একদমই আরেক নতুন জীবন শুরু হয়। তখন মেয়ের নিজের বাড়ি বা শ্বশুরবাড়ির সবাইকে অনেক সচেতন হওয়া দরকার। সব খেয়াল রাখা, সামর্থের মধ্যে সব ধরনের খাবার-চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা উচিত। অনাগত সন্তানের মা যদি হাসিখুশি থাকেন তাহলে নবাগত সন্তানের উপরই এর সব ভাল প্রভাব পড়বে। যা নিজ পরিবার, দেশ জাতি সবার জন্যই শুভকর। স্বামী-স্ত্রী সব আত্মীয়-স্বজনের মাঝে যখন নতুন অতিথি ফুটফুটে বাচ্চা আসে তা সবার মাঝে আনন্দ বইয়ে দেয়। মধুময় অন্য এক জীবন আসে। সুখ-শান্তির আবহ আসে নিজ ঘরে। এখন যে ছিল নতুন বউ, ছোট্ট মেয়ে, তার অধিকার সংসারে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে দায়িত্ব পালনের দাবিও বাড়তে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় শ্বশুর-শাশুড়িকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে না। স্বামীর বোন-ননদের সাথে ঝগড়া করার মানসিকতা তৈরি হয়। শ্বশুর-শাশুড়ি বিশেষ করে শাশুড়ির সাথে খারাপ সম্পর্ক হয়ে যায়। ননদের সাথে সম্পর্কের অবনতি হলে পুরো স্বামীর বাড়ির সাথে দূরত্ব তৈরি করে। তাতে যৌথ পরিবার ভিন্ন হয়ে আলাদা করে দেয়। এতে কিন্তু ঐ ছোট বাচ্চার উপর বেশি বিরূপ্র প্রভাব ফেলে। সাধারণত সংসার জীবনে খুব ছোট ছোট জিনিস বা ব্যাপার নিয়ে মনমালিন্য তৈরি হয়। তাই এমন অবস্থা যেন না হয়, তার জন্য সতর্ক থাকতেই হবে। মনে রাখতে হবে শাশুড়ি হলো আমার স্বামীর মা, যিনি আপনার স্বামীকে এমনভাবে যতœ করে লালন পালন করেছেন যেমন আপনি এখন নিজের সন্তানকে আদর সোহাগ মমতা ভালবাসা দিয়ে বড় করছেন। এমন সম্মানিত ত্যাগী মানুষের জন্য আপনার সম্মান, শ্রদ্ধা থাকতে হবে। একটু ত্যাগ করার মানসিকতা অবশ্যই রাখতে হবে। শাশুড়ির কোন কাজ অপছন্দ হলে সম্মানের সাথে শ্রদ্ধা দিয়ে জয় করতে হবে। শাশুড়ি হলো মা। সেবা পাওয়ার যোগ্য ও প্রাপ্র্য। তার মাথায় একটু তেল দিয়ে দিন। খাওয়া-ঘুমের খেয়াল রাখুন। কোন অসুখে থাকলে চিকিৎসা করিয়ে নিয়মিত ওষুধ খাইয়ে দিন। দেখবেন এমনিতেই মায়া হয়ে যাবে। শাশুড়ির সেবা করলে তার জন্য ভালবাসা হবে। এতে আপনি ওনাকে আপন করে পাবেন, তখন ওনার অপছন্দের কাজগুলোকেও দূর করে দিতে পারবেন। এ সকল ত্যাগ করা ও ভালবাসা পাওয়া হলো মনের মধ্যে স্বর্গীয় অনুভূতি জাগ্রত করা। ছোট ছোট ত্যাগ কিন্ত অনেক বড় অর্জন। আমাদের প্রচলিত একটি কথা আছে হাঁড়ি-পাতিল একসাথে থাকলে টুকটাক কিছু শব্দ হবেই। তেমনি দম্পতি একসাথে থাকলেও চলার পথে কিছু মতপার্থক্য হয়ে যায়, এটাকে সহজভাবে নিতে হবে। দুজনকেই নিজ-নিজ জায়গা থেকে সংশোধন করে নিতে হবে। দাম্পত্যকে সুখময় করতে হলে উভয়ই একে অপরের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে থাকতে হয়। সাধারণত মেয়েরা ঘরের বাইরে গেলে নিজেকে সাজগোছ করে বের হয় কিন্ত ঘরের ভেতর একটু ক্যাজুয়াল থাকে। সব সময় ঘরের ভেতরে সেজেগুছে থাকা যায় না। কিন্ত অবসর সময় যতটুকু সম্ভব গুছিয়ে থাকলে উভয়েরই মনের প্রশান্তি-প্রফুল্লতা বাড়বে। এতে জীবনের নতুন আবেদন আসবে। একঘেয়েমি কমে যাবে। মডেল : শামীম ও তিশা
×