ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুষমার মুখে সবুজ শাড়ির কাহিনি

প্রকাশিত: ১৮:৫৭, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫

সুষমার মুখে সবুজ শাড়ির কাহিনি

অনলাইন ডেস্ক ॥ ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কূটনীতিতে শাড়ির ছোঁয়া। সবুজ শাড়ির! পাকিস্তানে গিয়ে সুষমা স্বরাজ কেন সবুজ শাড়ি পরেছিলেন, সেই প্রশ্ন সংসদে কেউ তোলেননি। কিন্তু বিদেশমন্ত্রী নিজেই ব্যাখ্যা দিয়ে জানান, দিনটা ছিল বুধবার। সপ্তাহের ওই দিন তিনি সবুজ রংই পরেন। শাড়ি নিয়ে প্রশ্ন না উঠলেও সংসদে প্রশ্ন উঠেছিল, পাকিস্তানের সঙ্গে অগস্টে কথা বন্ধ করে দিয়ে ফের ডিসেম্বরে তা শুরু করে কেন ডিগবাজি খেল নরেন্দ্র মোদী সরকার? সুষমার ব্যাখ্যা, কোনও ডিগবাজি নয়। আলোচনার প্রক্রিয়া আগেই শুরু হয়েছিল। মাঝখানে তা থমকে গিয়েছিল। আবার শুরু হয়েছে। পাকিস্তানে গিয়ে তিনি বিশেষ কোনও বার্তা দিতে সবুজ শাড়ি পরেননি এবং পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়াও নতুন কিছু নয়—সুষমার এই দুই যুক্তি থেকে পরিষ্কার পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ঢাকঢোল পেটাতে চাইছে না মোদী সরকার। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তি বজায় রাখতে, দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে পাকিস্তানের সঙ্গে কথা বলা দরকার। কংগ্রেস-বাম বলছে, আমেরিকার চাপও রয়েছে। যাবতীয় বাস্তবতা বুঝেই নতুন করে ইসলামাবাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি। এ দিন লোকসভায় বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন অগস্টের শেষে মোদী সরকারই পাকিস্তানের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বা এনএসএ স্তরের বৈঠক বাতিল করে দিয়েছিল। পাকিস্তানের দাবি ছিল, কাশ্মীর নিয়ে কথা বলতে হবে। তৃণমূলের সৌগত রায় থেকে সিপিএমের মহম্মদ সেলিমের প্রশ্ন, সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন কী হল, পাকিস্তানের দিক থেকে এমন কী আশ্বাস মিলল যে ব্যাঙ্ককে আবার দু’দেশের এনএসএ পর্যায়ের বৈঠক হল? কেনই বা সেখানে কাশ্মীর নিয়ে কথা হল? কীসের ভিত্তিতে সুষমা পাকিস্তানে গিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরুর ঘোষণা করলেন? উত্তরে সুষমা বলেন, ‘‘বাস্তব পরিস্থিতি কিছুই বদলায়নি। আমরা বলেছিলাম, সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না। তাই চলতি বছরের জুলাইয়ে রাশিয়ার উফায় ঠিক হয়েছিল, এনএসএ স্তরে সন্ত্রাস নিয়ে কথা হবে। এ বার ব্যাঙ্ককেও সন্ত্রাস নিয়েই কথা হয়েছে। সন্ত্রাস প্রসঙ্গেই কাশ্মীরের কথা এসেছে।’’ কাশ্মীরের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কোনও কথা হয়নি বলেও জানিয়েছেন সুষমা। লোকসভায় বিতর্কে অংশ না নিলেও কংগ্রেসের অভিযোগ, পাকিস্তান ২৬/১১-র মুম্বই হামলার চক্রীদের শাস্তি দেয়নি। তবু আলোচনায় বসছে মোদী সরকার। আজই লস্কর প্রধান হাফিজ সইদ দাবি করেছেন, মুম্বই হামলায় তাঁর জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ ভারত দিতে পারবে না। তা হলে কীসের ভরসায় আলোচনা? সুষমার যুক্তি, ‘‘আলোচনা হলে ভরসা করেই হয়। কিন্তু দুরত্ব মেটানোরও দরকার রয়েছে।’’ সুষমার ব্যাখ্যা, মুম্বই হামলার পরে আলোচনা বন্ধ হলেও ২০১০-এ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে পাক-প্রধানমন্ত্রীর থিম্পুতে কথা হয়েছিল। ২০১৩-য় সর্বজিৎ সিংহের হত্যার পরে কথা বন্ধ হয়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নওয়াজ শরিফকে আমন্ত্রণ জানানোর পরেও বিদেশ সচিব স্তরের প্রস্তাবিত বৈঠক বাতিল হয়ে যায়। এর পর উফায় আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তার পরেও এনএসএ বৈঠক বাতিল হওয়ায় ফের প্যারিসে শরিফকে আলোচনার প্রস্তাব দেন মোদী। তার পরেই ব্যাঙ্ককে এনএসএ বৈঠক। তার পরেই বিদেশমন্ত্রীর ইসলামাবাদ সফরের সিদ্ধান্ত। কিন্তু পুরনো ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এই ব্যাপারে প্রচারের আলো টেনে আনতে নারাজ মোদী সরকার। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কর্তারাই বলছেন, মোদী শরিফকে শপথ গ্রহণে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেই আলোচনায় বসে যাওয়া ভুল ছিল। কারণ তাই নিয়ে প্রচুর প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। এ বার এনএসএ স্তরের বৈঠকের বিষয়ে তাই আগেভাগে ঘোষণা করা হয়নি। দিল্লি বা ইসলামাবাদের বদলে বৈঠক হয়েছে ব্যাঙ্ককে। কেন তৃতীয় কোনও দেশে বৈঠক, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সুষমার যুক্তি, বৈঠক যেখানে খুশি হতে পারে। তৃতীয় কোনও দেশ মধ্যস্থতা না করলেই হল। কিন্তু ব্যাঙ্ককে বৈঠক হওয়ায় প্রচারমাধ্যমে হইচই হয়নি। প্রত্যাশাও তৈরি হয়নি। এর পর দু’দেশের বিদেশ সচিব স্তরের বৈঠকে ব্যবসা-বাণিজ্য, স্যর ক্রিক, সিয়াচেন— সব নিয়েই কথা হবে। পাকিস্তান গিয়ে সে দেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে উর্দুতে কথা বলেছেন সুষমা। এই নিয়েও সংসদে কেউ প্রশ্ন করেননি। কিন্তু সবুজ শাড়ির মতো এই বিষয়েও সুষমা নিজে থেকেই বলেন, ‘‘উর্দু আমার দেশেরও ভাষা। আমি ব্যাঙ্ককে সংস্কৃত সম্মেলনে গিয়ে সংস্কৃত বলতে পারলে পাকিস্তানে উর্দুও বলতে পারি।’’ যা শুনে সৌগত রায়ের সরস মন্তব্য, ‘‘আপনি নওয়াজ শরিফের থেকেও ভাল উর্দু বলেন!’’ সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
×