ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষ সাক্ষাতকারে ইমাদুদ্দিন আহমেদ

বাংলাদেশে গণহত্যার দায় পাকিস্তানী তরুণরা নিতে পারে না

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশে গণহত্যার দায় পাকিস্তানী তরুণরা নিতে পারে না

তৌহিদুর রহমান ॥ মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার জন্য বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা না চাওয়ার কারণে পাকিস্তান সরকার দেশটির ভদ্র মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানী তরুণ সংগঠক ইমাদুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা লজ্জিত। সেই গণহত্যার জন্য আমরা বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছি। পাকিস্তান সরকার ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত দেশটির তরুণরা এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জনকণ্ঠকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের গণহত্যার জন্য দেশটিকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে সামাজিক আন্দোলন শুরু করেছেন পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্ম। যুক্তরাজ্য ও পাকিস্তান থেকে তারা ইতোমধ্যেই ‘আমরা পাকিস্তানী, বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাই’ শীর্ষক একটি অনলাইন পিটিশনে সাক্ষর সংগ্রহ ক্যাম্পেন শুরু করেছেন। এই কার্যক্রমের উদ্যোক্তা হলেন পাকিস্তানী তরুণ ইমাদুদ্দিন আহমেদ। লন্ডন প্রবাসী ইমাদুদ্দিন আহমেদ অনলাইনে জনকণ্ঠকে বিশেষ সাক্ষাতকার দেন। পাকিস্তানী হয়েও কেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে ইমাদুদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে যে গণহত্যা হয়েছে, তার দায় পাকিস্তানী তরুণরা নিতে পারেন না। এতদিন পরে এখন এ বিষয়ে কথা বলার সময় এসেছে। আমাদের প্রত্যাশা পাকিস্তান সরকার এ বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইবে। পাকিস্তানের ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আমাদের উদ্যোগ অব্যাহত রাখব। বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আপনাদের আহ্বানে কেমন সাড়া মিলছে জানতে চাইলে ইমাদুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা পাকিস্তানের তরুণদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। ইতোমধ্যেই প্রায় পাচ শ’ তরুণ পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। দিনে দিনে এই স্বাক্ষর বাড়ছে। আগামীতে এই স্বাক্ষর আরও বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা নিয়ে পাকিস্তানের তরুণরা সচেতন কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে ৩২ বছর বয়সী এই যুবক বলেন, অনেক পাকিস্তানী তরুণরা জানেন না, প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের সময় কি ঘটেছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস পাকিস্তানী তরুণদের সামনে তুলে ধরা হয়নি। তাদের ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের পরে জন্মগ্রহণকারী পাকিস্তানের তরুণদের মধ্যে দুটি ধারা রয়েছে, একটি ধারা গণহত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন। প্রত্যাশা করেন, বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তান সরকার যেন ক্ষমা চান। আবার আরেকটি ধারা গণহত্যার বিষয়ে খুবই উদাসীন। আপনাদের ক্যাম্পেনের উদ্দেশ্য পাকিস্তানের তরুণরা অনুধাবন করতে পারছেন কি-না এমন প্রশ্নের উত্তের তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তানের তরুণদের বোঝাতে চেষ্টা করছি যে, বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জন্য যতটা নয়, পাকিস্তানী হিসেবে নিজেদের সম্মান দেখানোর জন্যই এটার প্রয়োজন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের জীবিত পাকিস্তানী নাগরিকরাও অনুধাবন করতে পারছেন, বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে পাকিস্তানের বিলম্ব হচ্ছে। আর আগেই পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া প্রয়োজন ছিল। আপনি যদি পিটিশনের মন্তব্যগুলো পর্যবেক্ষণ করেন, তাহলে তাদের সেই আকুতি আপনি সেখানে দেখতে পারবেন। পাকিস্তানে জন্মগ্রহণকারী ইমাদুদ্দিন আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েট ডিগ্রী অর্জন করেছেন। তিনি বর্তমানে লন্ডনে বসবাস করছেন। ইমাদুদ্দিন আহমেদ বলেন, পাকিস্তানীদের জন্য এই অনলাইন পিটিশনে স্বাক্ষরের সুযোগটি সব সময় খোলা থাকবে। যারা এখানে স্বাক্ষর করবেন, তাদের বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদেরও স্বাক্ষরে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আহ্বান জানান তিনি। পাকিস্তানী তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য কোন উদ্যোগ নেবেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনলাইন পিটিশনে অনেকেই স্বাক্ষর করে তাদের মন্তব্যও তুলে ধরছেন। সেখানে কেউ কেউ তর্ক-বিতর্ক করছেন। এর মাধ্যমেও সঠিক ইতিহাস উঠে আসবে। আমি মনে করি পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। তারা যেন মুক্তিযুদ্ধের সময়টাকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারে সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পাকিস্তানের তরুণরা নিশ্চয় উপলব্ধি করবেন।
×