ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এবার নিষ্প্রভ সাকিব!

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫

এবার নিষ্প্রভ সাকিব!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ব্যাটে-বলে সমানতালে নৈপুণ্য দেখানোয় পারদর্শী। এমন একজন খেলোয়াড়কে দলে ভেড়াতে সবসময়ই আগ্রহী থাকে সব দল। বিশ্বসেরা টি২০ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে পাওয়ার জন্য তাই এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) ফ্র্যাঞ্চাইজিরাও ছিল ব্যতিব্যস্ত। ২০১২ সালে হওয়া প্রথম আসরে খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলসের হয়ে চৌকস নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন। পরের বছর ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়েও অলরাউন্ডার নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছিলেন। এ কারণে আগের দুই বিপিএলেই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন সাকিব। এবার তাকে দলে পেয়েছে রংপুর রাইডার্স। দল শেষ চার থেকেই বিদায় নিয়েছে। অধিনায়ক ও আইকন হিসেবে দলকে যেমন ফাইনালে তুলতে পারেননি, একইভাবে নিজেও ব্যাটে-বলে তেমন উজ্জ্বলতা ছড়াতে পারেননি সাকিব। তাই আগের দুই বিপিএলের সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায় এবার দেশসেরা এ ক্রিকেটার ব্যর্থই হয়েছেন। প্রথম আসরে নিজ এলাকার দল খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলসের হয়ে খেলেছেন সাকিব আল হাসান। দলটির আইকন ও অধিনায়ক হিসেবে অবশ্য দারুণ সফল ছিলেন। দলকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন সেমিফাইনাল পর্যন্ত। সেবার ব্যাটে-বলেও দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখান অলরাউন্ডার সাকিব। ১১ ম্যাচে ৪০.০০ গড়ে ১ অর্ধশতকসহ করেছিলেন ২৮০ রান। সর্বাধিক রান সংগ্রাহকের তালিকায় তার অবস্থান ছিল দশে। আর বল হাতে নিয়েছিলেন ১৯.৯৩ গড়ে ১৫ উইকেট। অবস্থান ছিল তিন নম্বরে। ব্যাট হাতে সবচেয়ে ভাল ইনিংসটি খেলেছিলেন সেমিতে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের বিপক্ষে ৪১ বলে ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৬ রানের একটি বিস্ফোরক ইনিংস। তবে শেষ চারে এরপরও তার দল হেরে গিয়েছিল। কিন্তু সাকিব সেবার হারেননি। পুরো আসরে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখানোর কারণে হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে তাকে নিলামে পেয়ে সৌভাগ্যবান হয়েছে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স। যদিও সেবার মাশরাফি বিন মর্তুজার অধিনায়কত্বে খেলেছেন সাকিব। কিন্তু ব্যাট-বলের নৈপুণ্যে তিনি এবারও দারুণ পারফর্মেন্স দেখিয়েছেন। ২০১৩ সালের বিপিএলে ১২ ম্যাচে ৩২.৯০ গড়ে ৩২৯ রান করেন সাকিব। এর মধ্যে ছিল দুটি অর্ধশতকও। দ্বিতীয় আসরে সর্বাধিক রান সংগ্রাহকের তালিকায় সাকিবের অবস্থান ছিল ৯ নম্বরে। এ আসরে তিনি ১৯.৩৩ গড়ে ১৫ উইকেট নিয়ে সর্বাধিক উইকেট শিকারির তালিকাতেও ছিলেন ৯ নম্বরে। এরপরও অন্য কোন ক্রিকেটার ব্যাটে-বলে একই সঙ্গে এত ভাল নৈপুণ্য দেখাতে না পারায় টানা দ্বিতীয়বারের মতো সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার হাতে তোলেন সাকিব। এক বছর বন্ধ ছিল বিপিএল। এবার তৃতীয় আসরে আবারও নতুন দল পেয়েছেন সাকিব। কিন্তু তাকে পেয়েও শেষ পর্যন্ত ফাইনালে উঠতে পারেনি রংপুর রাইডার্স। ব্যাট হাতে এবারের আসরেই সবচেয়ে বাজে কেটেছে সাকিবের। তিনি ১১ ম্যাচ খেলে মাত্র ১৭.০০ গড়ে করতে পেরেছেন ১৩৬ রান। কোন অর্ধশতকও হাঁকাতে পারেননি। সর্বোচ্চ একটি ৩৩ রানের ইনিংস খেলেছেন। তবে বল হাতে বেশ ভাল ফর্মেই ছিলেন তিনি। প্রাথমিক পর্ব শেষ হওয়া পর্যন্ত উইকেট শিকারের তালিকায় এক নম্বরে থাকলেও সেটা আর ধরে রাখতে পারেননি। তাকে ছাড়িয়ে গেছেন তরুণ পেসার আবু হায়দার রনি। ১১ ম্যাচে সাকিবের ঝুলিতে আছে ১৪.৫৫ গড়ে ১৮ উইকেট। এখন তার অবস্থান চার নম্বরে। তার ওপরে আছে বরিশাল বুলসের কেভন কুপার ৮ ম্যাচে ২০ এবং রনি ১১ ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়ে। এছাড়া ১২ ম্যাচে বোলিং গড়ে এগিয়ে থাকায় সমান ১৮ উইকেট নিয়েও তার ওপরে সতীর্থ শ্রীলঙ্কান থিসারা পেরেরা। অলরাউন্ড নৈপুণ্যের দিক থেকে বিবেচনা করলে ব্যাটিংয়ে সাকিবের চেয়ে এগিয়ে আছেন পাকিস্তান বংশোদ্ভূত ইংলিশ অলরাউন্ডার আসহার জাইদি। তিনি ব্যাট হাতে ১০ ম্যাচে ৬৬.৩৩ গড়ে ১৯৯ রান করে আছেন ৮ নম্বরে। বল হাতে ১০ ম্যাচে জাইদি মাত্র ৯.৪৩ গড়ে নিয়েছেন ১৬ উইকেট। ফাইনালে ওঠা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের এ অলরাউন্ডার তাই সাকিবের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে গড়-পড়তায় এগিয়ে আছেন সাকিবের চেয়ে। দলকেও ফাইনালে ওঠাতে পারেননি, নিজেও ব্যাটে-বলে সমান নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। এর সঙ্গে আবার ম্যাচে অশোভন আচরণ করার জন্য এক ম্যাচ নিষিদ্ধও হয়েছিলেন। সবমিলিয়ে এবার বিপিএলে তুলনামূলকভাবে কিছুটা নিষ্প্রভই বলা যায় সাকিবকে।
×