ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস সমৃদ্ধ করতে চাই’

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫

‘চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস সমৃদ্ধ করতে চাই’

রুমেল খান ॥ আগামী ২০ ডিসেম্বর নেপালের কাঠমান্ডুতে এএফসি অনুর্ধ ১৪ মহিলা আঞ্চলিক ফুটবলের ফাইনালে খেলার প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে শুরু বাংলাদেশের মেয়েরা। গত ২৫ এপ্রিলে আয়োজক নেপালের বিপক্ষে এই ফাইনালের আগের দিন ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়া ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে দেশটিতে। ফাইনালের ভেন্যু দশরথ স্টেডিয়ামের একটি অংশের ফাটল ধরে। ফলে সে সময় ফাইনাল খেলাটি আর অনুষ্ঠিত হয়নি। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন আবারও এই ফাইনালটির দিনক্ষণ নির্ধারণ করে গত ২ ডিসেম্বর। বাংলাদেশ দল ফাইনাল খেলতে নেপাল যাত্রা করবে আগামী ১৮ ডিসেম্বর। এ উপলক্ষে ১৭ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বিকেল ৩টায়, বাফুফে ভবনের কনফারেন্স রুমে। গত এপ্রিলে নেপাল সফরে বাংলাদেশ দলে যেসব খেলোয়াড়রা ছিল, তাদের সবাই আছে বর্তমান স্কোয়াডে। তারা কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের অধীনে অনুশীলন করছে। নেপালে গত এপ্রিলে দুর্দান্ত খেলেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। এর আগে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ অনুর্ধ ১৪ মহিলা দল শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত এই আসরে অংশ নিয়ে তৃতীয় হয়েছিল এবং ফেয়ার প্লে ট্রফি লাভ করেছিল। তার মানে এবার তারা নিশ্চিতভাবেই টপকে গেছে আগের বারের সাফল্যকে। গত এপ্রিলে টুর্নামেন্ট চলার সময় ফাইনালের প্রতিপক্ষ নেপালের সব খেলা দেখেছিলেন ছোটন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এপ্রিলে ওখানে টুর্নামেন্ট চলার সময় আমি নেপালের সব খেলা দেখেছিলাম। কোন সন্দেহ নেই, তারা ভাল দল। আমাদের গ্রুপে সেরা দল হয়ে আমরা যেমন ফাইনালে গিয়েছি, তেমনি ওরাও তাই। বিশেষ করে সেমিতে তারা দুর্দান্ত খেলে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে। তবে আমাদের দলও অনেক ভাল। আমরাও পারফর্ম করে এবং যোগ্যতা প্রদর্শন করেই ফাইনালে নাম লেখাই।’ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলকেই ফেবারিট হিসেবে দাবি করেন ছোটন। এর স্বপক্ষে তার যুক্তি, ‘আমরা এই আসরে আগের বছর শক্তিশালী ভারতের কাছে ০-৫ গোলে হেরেছিলাম। আর এবার আমরা ওদের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছি। ওই ম্যাচে আমরা লিড নিয়েও দুর্ভাগ্যবশত শেষ মিনিটে গোল হজম করে ফেলি। গ্রুপে ভুটানকে ভারত ১২-০ গোলে হারায়। সেক্ষেত্রে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে হলে আমাদের ১৩-০ গোলে ভুটানকে হারাতে হবেÑ এমন কঠিন সমীকরণ মাথায় নিয়ে খেলে ভুটানকে ১৬-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাই। এই ধরনের টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দল আগে কখনও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। এবার পেরেছে। তাছাড়া এই আসরে গত বছর আমরা শক্তিশালী ইরানের কাছেও ০-৫ গোলে হেরেছিলাম। আর এবার সেই ইরানকে সেমিতে ২-০ গোলে হারিয়েছি। ওই ম্যাচে আমরা একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করে খেলি। ফলে এটাই প্রমাণ হয় যে, আমাদের দল আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।’ নিজেদের ফেবারিট মনে করলেও প্রতিপক্ষ নেপাল দল আবার খাটো করতে চান না ছোটন, ‘অবশ্যই নেপাল ভাল ও শক্তিশালী দল। কেননা, সেমিতে তারা ভারতের মতো দলকে হারিয়েছে। নিজের শিষ্যাদের প্রতি কেমন আস্থা আছে? ‘সানজিদা, কৃষ্ণা রানী, মারজিয়ারা, স্বপ্নার মতো কোয়ালিটি ফুটবলার আমার দলে থাকায় আমি অনায়াসেই তাদের ওপর ভরসা করছি।’ ছোটনের ভাষ্য। উল্লেখ্য, এই আসরে এর আগে বাংলাদেশ কখনও নেপালের মুখোমুখি হয়নি। স্বাগতিক দল হিসেবে ফাইনালে চাপে থাকবে কি না কিংবা দর্শক সমর্থন একেবারেই পাবে না ফাইনালে বাংলাদেশ, ফলে এতে বাংলাদেশ দল নার্ভাস থাকবে কি না? ছোটনের জবাব, ‘দেখুন, এসব নিয়ে আমি বা আমাদের মেয়েরা মোটেও চিন্তা করছি না। আমরা শুধু নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে চাই। টুর্নামেন্ট শুরুরু আগে বলেছিলাম আমরা ফাইনালে খেলতে চাই। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। এবারের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া। আমি মেয়েদের অনুপ্রাণিত করেছি এই বলেÑ তোমরা ইতোমধ্যেই ইতিহাস গড়েছ। কেননা বাংলাদেশর কোন মহিলা দল যে কোন পর্যায়ের টুর্নামেন্টে এই প্রথম ফাইনাল খেলছে। তাই আমাদের হারানোর কিছু নেই। এখন বরং ফাইনালে জিততে পারলে ইতিহাসটা আরও সমৃদ্ধ হবে। দেশবাসী তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে মেয়েরা তাদের সামর্থ্যরে শেষ বিন্দু নিংড়ে দিতে প্রস্তুত।’
×