ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধাদের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করার প্রতিশ্রুতি

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫

মুক্তিযোদ্ধাদের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করার প্রতিশ্রুতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীনকারী ঢাকায় বসবাসরত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা ও ঢাকার বিভিন্ন সড়ক নামকরণের ঘোষণা দিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে ঢাকাকে গড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। বুধবার মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির প্রেক্ষিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাঈদ খোকন এ ঘোষণা দেন। হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের ঘোষণা সমস্ত ঢাকায় অর্থাৎ উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বসবাসকারী মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ির ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা হবে। ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির ২ মেয়র এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবেন বলে জানা গেছে। ডিএসসিসির আয়োজনে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রায় ৩ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গের সদস্যদের সংবর্ধনা ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ঢাকায় বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামে কর্পোরেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নামকরণের দাবি জানান। এর জবাবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ও দক্ষিণের সাঈদ খোকন তাদের দাবি মানার প্রতিশ্রুতি দেন। সাঈদ খোকন বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করার একটি সুপারিশ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আমি এবং উত্তরের মেয়র আনিসুল হক সাহেব গিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে এ ট্যাক্স মওকুফ করতে অনুরোধ করব। আশা করি তা কার্যকর করা হবে। কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের কারণেই আজ আমরা দেশ পেয়েছি। মেয়র বলেন, ভবিষ্যতে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে ঢাকার সড়কগুলো নামকরণ করা হবে। জীবিত অবস্থায়ই শুধু নয় মৃত্যুর পরও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষায় ঢাকায় বসবাসরত বীর মুুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জুরাইন কবরস্থানে দেড় একর জায়গা সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে। এতে শুধু মুক্তিযোদ্ধাদেরই শায়িত করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা জীবন দিয়ে আমাদের যে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন আমাদের সবকিছু দিলেও এ ঋণ শোধ করা যাবে না। দোয়া করেন, আপনাদের স্বপ্ন যেন বাস্তবায়ন করতে পারি। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নগর ভবনের দুয়ার সবসময় খোলা। যে কোন প্রয়োজনে যে কোন সময় আপনারা আমাদের কাছে আসবেন। আমরা আপনাদের পাশে আছি, সঙ্গে আছি। আপনারা শুধু আমাদের দোয়া ও স্নেহ দেবেন। তিনি বলেন, তিন কোটি মানুষের এ ঢাকা সীমাহীন সঙ্কট ও সমস্যার সম্মুখীন। শুধু মেয়র, কাউন্সিলর আর ২ সিটি কর্পোরেশনের মাত্র কয়েক হাজার কর্মকর্তাদের দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আপনারা আমাদের পাশে থাকলেই এসব সঙ্কট উত্তরণ করতে পারব। যারা বিশ্বের প্রশিক্ষিত বাহিনীকে মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে পরাস্ত করতে পারেন তারা আমার সঙ্গে থাকলে আমি অবশ্যই বাসযোগ্য নগরী হিসেবে ঢাকাকে গড়তে পারবই পারব। তাই আপনাদের পাশাপাশি আপনাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী প্রজন্মকে ঢাকা গড়তে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহিত করুন। তাই আমি প্রতিটি নাগরিককে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই, তাহলে এ সমস্যা থাকবে না। সাঈদ খোকন বলেন, আমার পিতা ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মাত্র ১১ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মেশার সুযোগ পেয়েছেন। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর আদর্শেই চলেছেন। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি বাবার কাছে মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনেছি। তাই মুক্তিযুদ্ধের অনুভূতি শুধু মুক্তিযোদ্ধারাই বুঝেন। অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক বলেন, আমাদের গায়ের চামড়া কেটে দিলেও মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ পরিশোধ হবে না রণাঙ্গনের যোদ্ধারাই কেবল স্বাধীনতার স্বাদ অনুভব করতে পারেন। ’৭১-এর নায়ক বঙ্গবন্ধুর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্বে বিরল। মাত্র ৫১ বছরেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন ২০০ বছরের সাংগঠনিক শক্তি আর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি। বাঙালীর স্বার্থরক্ষায় তিনি ছিলেন হিমালয়ের চেয়েও অবিচল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নিজে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস ধরে রাখতে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বজায় রাখতে দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন। আর আমরা তারই উত্তরসুরী আর সহযোগী হিসেবে কাজ করছি। মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, আপনারা যা চেয়েছেন, খুব বেশি চাওয়া নয়। আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করব আপনাদের সব চাওয়া পূরণ করতে। আমরা আপনাদের সকল সমস্যা ও দাবি পূরণে ছোট আকারের একটি কমিটি করে তা অতি দ্রুত পূরণ করতে চেষ্টা করব। মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে সর্বাত্মক চেষ্টারও ঘোষণা দেন তিনি। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বেলাল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিল ঢাকা ইউনিট কমান্ডের কমান্ডার আমির হোসেন মোল্লা, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ও ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোশাররফ হোসেন, ৩৮নং ওয়ার্ডের আবু আহমেদ মান্নাফী প্রমুখ। অনুষ্ঠান শেষে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম শিল্পী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
×