যে দেশের মানুষ পাখির ডাকে ঘুমিয়ে পড়ে, আবার পাখির ডাকে জাগে, সেই দেশের মানুষকে পেট্রোলবোমা মেরে, বাসে আগুন দিয়ে জীবন্ত হত্যা কিংবা ধারালো অস্ত্রে কুপিয়ে যারা খুন করে যাচ্ছে, তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর গণদাবি পূরণ হয়নি। ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের মাধ্যমে যারা মানুষকে জীবন্ত হত্যা করেছে; যারা এসব হত্যার হুকুমদাতা; অর্থ যোগানদাতা, পরিকল্পনাকারী তাদের প্রত্যেকের বিচার হতেই হবে এই বাংলার মাটিতে। মানুষের জীবন নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলে চলেছে, তাদের বিচার করাটা জরুরী। ঘাতকরা ঘোষণা দিয়ে, হুকুম দিয়ে অবরোধ, হরতাল ডেকে মরণঘাতী আঘাত হেনেছিল। চোরাগোপ্তা হামলায় তারা চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ১৫৭ মানুষকে জীবন্ত মেরেছে। আগুন জ্বেলে, বোমা মেরে মানুষ হত্যা যে কত সহজ তা বিএনপি-জামায়াত জোট প্রমাণ করেছে। তাদের ডাকা অবরোধ আজও প্রত্যাহার করা হয়নি। তারা নাশকতা, সহিংসতাসহ গণহত্যা চালিয়েও অনুতপ্ত নয়। বরং সদর্পে রাজনৈতিক মঞ্চ দাবড়ে বেড়াচ্ছে। জনগণের কাছে ভোট চাইছে। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯৩ দিনে মহাসড়ক, জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে বোমা হামলা ও বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিবোমা মেরে পুড়িয়ে দিয়েছে যাত্রীসহ যানবাহন। এই নাশকতাকারীরা একদিকে বোমাসহ ধরা পড়ে, অপরদিকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার সন্ত্রাসী তৎপরতা চালায়। এই তা-ব থেকে মানুষকে রক্ষা করার দায়িত্ব যাদের, তারা মুখে যত কথা বলেন, কাজে তত পারদর্শিতা প্রমাণ করতে পারেননি। দিনের পর দিন তারা নাশকতা চালিয়েছে, আর অসহায় মানুষ ভয়ের সংস্কৃতির ভেতরে সেঁধিয়ে আটকে ছিল। রাজনীতি ছেড়ে বিএনপি-জামায়াত জোট লাশনীতিতে নেমে পড়ে। জ্বালাও পোড়াওর মহাব্রতে পথে প্রান্তরে গ্রামে-গঞ্জে অরাজকতা, নৈরাজ্য, নাশকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়। একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা ঘরে ঘরে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যার নৃশংসতায় যেভাবে মেতে উঠত, তাদের অনুসারী ও চেতনাধারীরা সেই পন্থাই বেছে নেয়। তারা আজও চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করছে। দেশীদের পাশাপাশি বিদেশী হত্যায়ও তারা নেমেছে। পাকিস্তানী তালেবান স্টাইলে এদেশেও সন্ত্রাসী তৎপরতা অব্যাহত রেখে জঙ্গীবাদের ঘাঁটি বানাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তারা। তাই পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাদের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে হত্যা করতেও দ্বিধা করে না। এমনকি সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে লাঠিসোটা নিয়ে বিচারকের গাড়ি ভাংচুর করার মতো ন্যক্কারজনক কাজও করেছে। তাদের ধৃষ্টতা সীমাহীন। নাশকতার সীমাহীন মাত্রায় পুলিশকেও বেপরোয়া পিটিয়েছে। দেশবাসীর জীবনে যেসব দাবি-দাওয়ার প্রতিফলন নেই প্রয়োজন নেই, সেসব দাবি-দাওয়া নিয়ে সহিংস অরাজকতায় নামে তারা। ইতিহাস বলে, অন্ধকারের শক্তি বহুবার শুভকে গ্রাস করার চেষ্টা করেছে, ক্ষতি করেছে কিন্তু নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি। বেগম জিয়া টানা ৯৩ দিন গুলশান কার্যালয়ে বসে আন্দোলনের নামে নির্দেশ দিয়ে বাস, ট্রাক, রেলে আগুন, বিদ্যুত কেন্দ্র, সরকারী অফিসসহ ৫৮২টি স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা হলেও বিচার কাজ ঝুলে আছে। যেমন ঝুলে আছে ২০১৩-১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৯২ জনকে হত্যা ও ২২ হাজার মানুষকে আহত করার ঘটনার বিচার। অগ্নিদগ্ধসহ এসব আহত মানুষরা এখনও বেঁচে আছেন মানবেতর জীবনধারায়। নাশকতাকারীদের হাত থেকে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাও রক্ষা পাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন আবারও, এসব হত্যা, অগ্নিকা- যারা ঘটিয়েছে, তাদের প্রত্যেকেরই বিচার হবে। কেউই রেহাই পাবে না। এই ঘোষণা কার্যকর করার মধ্যেই রয়েছে আইনের শাসন বহাল যেমন তেমনি নাশকতামুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ। জনগণও তাই চায়।
শীর্ষ সংবাদ: