ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ডিসেম্বরে প্রলাপ বকা বিএনপি চরিত্র

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫

ডিসেম্বরে প্রলাপ বকা বিএনপি চরিত্র

ডিসেম্বর এমন একটি মাস এর আবেদন প্রকৃতিগতভাবে শীতল হলেও বাঙালীর জন্য উষ্ণ আর আবেগময়। আমি লক্ষ্য করি মুখে বড় বড় কথা বললেও অন্য যে কোন মাসের চেয়ে ফেব্রুয়ারি আর ডিসেম্বরে যুদ্ধাপরাধী, দালাল ও প্রতিক্রিয়াশীলদের কণ্ঠ মিইয়ে আসে। তাদের আস্ফালন কমে যায়। যখন এদের দোর্দ- প্রতাপ, গাড়িতে পতাকা, পাছায় গদী আর মুখে চিকন হাসি তখন এই দুই মাসে মিনমিন করত নয়ত লুকিয়ে বেড়াত। স্বাধীনতার স্মৃতি মুক্তিযুদ্ধের গৌরব বা ইতিহাস ডিসেম্বরের মতো আর কিছুতে নেই। রেসকোর্স বা অধুনা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণের জ্বলজ্বলে জীবন্ত কাহিনী নিশ্চয়ই এখন আর লুকিয়ে থাকা কিছু না। একটা মিডিয়ার স্বল্পতা একমাত্র রেডিও, টিভি নিয়ে সীমাবদ্ধ জগতে সন্তুষ্ট বাংলাদেশ এখন চলমান এক জীবন্ত দেশ। এ দেশের তারুণ্য জানে না এমন কোন ঘটনা নেই, আমি খুব বিস্ময়ের সঙ্গে দেখি গ্রাম গ্রামান্তরে কোথায় কখন কবে কিভাবে যুদ্ধ হয়েছিল সেই স্মৃতিও তারা তুলে আনে। তুলে এনেছে জর্জ হ্যারিসন, রবিশঙ্কর থেকে অঁদ্রে মনরোর অবদান। এমন একটা সময়ে মৌলবাদ আর সন্ত্রাসের নামে ধোঁকা দিতে পারলে জারিজুরি গোপন থাকে না। ডিসেম্বরের সবচেয়ে বড় অবদান তার শরীরের বিজয় হাওয়ার ওড়না, সে আঁচল এমন নয় যে কেবল স্বপ্নমুখে বোনা কোন শীতের উড়নি। বিজয়ের ঠিক আগে এ দেশের সূর্য সন্তানদের বেছে বেছে ধরে নিয়ে মারা হয়েছিল। সে দিনটিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করি আমরা। এই দিনটি রাজাকার ও বিএনপির মুখোশধারীদের জন্য আতঙ্কের। সবকিছু মিলিয়ে গেলে বা মুছে দিতে চাইলেও রক্তের দাগ মোছে না। এতগুলো মানুষকে এক সঙ্গে এক জায়গায় চোখবেঁধে ধরে নিয়ে গিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে মারার ঘটনা ধামাচাপা দেয়া অসম্ভব। এদ্দিন ধরে তার অপচেষ্টা চালালেও এ যাত্রায় ম্যাডাম জিয়া ও তার সিপাহসালার মীর্জা ফখরুল সুর পাল্টেছেন। হানাদার বাহিনীর দোসরদের হাতে এসব মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছেন খালেদা জিয়া, মীর্জা সাহেব আরও একধাপ এগিয়ে পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলে সরকারকে দোষী ঠাউরেছেন পাকিদের বিরুদ্ধে নমনীয় ভেবে। মারহাবাই বটে, গোলাম আযম থেকে সাকা চৌধুরী খাঁটি পাকপন্থীদের আগলে রেখে, বগলে রেখে, সালাম কুর্নিশ দিয়ে রাজা-উজির বানিয়ে এখন কিনা ভূতের মুখে রাম নাম? আসলে কি তাই? আসলে ভূত যখন নিজেই ভীত তার আর করার বা বলার কি থাকে? বিএনপির এই সুর পরিবর্তন হয়ত হঠাৎ কোন অভিসন্ধি বা চালের ফসল। এতে আনন্দিত শোকার্ত বা বিহ্বল হবার কিছু নেই। খালেদা জিয়া তার সেসব মিত্রদের একজনকেও বাঁচাতে পারেননি। তাছাড়া তারা যে একটা ভুয়া ও ফলস বাতাবরণ তৈরি করে রেখেছিলেন সেটাও কাজে লাগেনি। এক সময় ভাবা হতো এদের গায়ে হাত পড়লে দেশে তুলকালাম ঘটে যাবে। ফাঁসির পর ফাঁসি হবার পর তুলাও উড়েনি। আগেই বলছিলাম, অবস্থা পরিবর্তিত, দেশ ও জাতি যখন অন্য এক ইমেজ ও ফ্রেমবন্দী। ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ সবকিছু এক চিমটি করে মিশিয়ে স্যালাইন বানিয়ে খাওয়ানোর দিন শেষ। মিডিয়ার বদৌলতে মানুষ সব দেখছে। তাদের কাছে গালগল্প ফাঁদা যায় না বলে বক্তৃতাবাজি সভা-সমাবেশও খতম। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি বা বিচারের কালে সম্পূর্ণ নীরব, মাঝে মাঝে আহা উহু করা বিএনপি গাদ্দারির পরিচয় দিয়েছে, এটা যে জামায়াত ভুলবে না তাও তারা জানে। জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও তাদের ধারা বা আদর্শ মুছে যাবে না। যে নামে যেভাবে যে আকারে হোক তাদের নতুন অবস্থানে বিএনপির দরকার নাও পড়তে পারে। মীর্জা ফখরুলরা এগুলো বুঝেই কিন্তু কথার তুবড়ি ছোটাচ্ছেন। শেখ হাসিনা তো ঠিকই বলেছেন, বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রাক্কালে এমন কথা বলার ভেতর তামাশা ছাড়া আর কি থাকতে পারে? স্বচক্ষে দেখলাম স্মৃতিসৌধ যাওয়া মঈন খান টিভি ক্যামেরার সামনে মাইক্রোফোন ঠেলে দিলেন, এ নিয়ে কথা বলতে চান না বলে, অথচ এই দিবসের ক’দিন আগে মঈন খানকে দেখলাম পঙ্কজ শরণ ভজনা ও তাকে ডিনার খাওয়াতে ব্যস্ত। শরণবাবু কিন্তু স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, কোন নড়চড় নাই তাদের। ফলে খালেদা জিয়ারা সুর বদলালেই গদী ধরা দেবে না। বরং এরা প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের মূল ধারায় কথা না বললে রাজনীতি করা অসম্ভব। তাই বগলে ইট মুখে শেখ ফরিদের নাম, জাতি জানে কারা বাধাহীনতার পক্ষে আর কাদের হাতে দেশ নিরাপদ। আওয়ামী লীগ ধোয়া তুলসী পাতা নয়, তাদের কাছে আমাদের চাওয়াও তেমন কিছু নয়, কিন্তু শেখ হাসিনার দৃঢ়তা আর বলিষ্ঠতাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে ত্বরান্বিত ও সফল হতে দিয়েছে। হঠাৎ ঘুম ভেঙে জেগে ওঠা কুম্ভকর্ণের মতো বেগম জিয়ারা যুদ্ধের ময়দানে এসে দেশপ্রেমের ভুয়া তলোয়ার ঘুরিয়ে আখেরে গর্দান খোয়াবেন মাত্র। বেগম জিয়া যা বলেছেন, তার নাম স্ববিরোধিতা, এটা টিকবে না বা তারা তা মানেনও না। ডিসেম্বরের উজ্জ্বলতার পাশাপাশি আরেকটা রোগ এ মাসে এই সময়ে দেশে অনেক মানুষ আবোল-তাবোল বকেন, সুস্থতা ও ভারসাম্যহীনতায় ভোগেন। কোনটা যে কি কে জানে!
×