ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সৌম্য সালেক

আধুনিক শিল্প-সাহিত্য ॥ কতিপয় প্রবণতা

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫

আধুনিক শিল্প-সাহিত্য ॥ কতিপয় প্রবণতা

বিমূর্ত শিল্প চিত্রকর্মে অথবা ভাস্কর্যে যেখানে কোনো বস্তুসরূপকে প্রকাশ করা উদ্দেশ্য নয় এবং দৃশ্যত তা যখন বস্তুপ্রকৃতির প্রতিনিধিত্বমূলক নয় তখনই তা বিমূর্ত শিল্প বলে আখ্যায়িত হতে পারে। আধুনিক চিত্রকর্মে ১৯১০ সাল থেকে কনদিনস্কি এবং ১৯১৭ সালের পর থেকে পিয়েৎ মনদ্রিয়ান বিমূর্ত ভঙ্গির প্রবর্তন করেন। ক্লদ মনে প্রাকৃতিক দৃশ্যকে বিমূর্ত করার সূত্রপাত করে দৃষ্টিগোচর পৃথিবীকে বিভিন্ন সমতল আকৃতিতে এবং ছায়া-পরিলেখে পর্যবসিত করেন। আধুনিককালে বিমূর্তভঙ্গিই শিল্পকর্মের প্রধান কৌশল হয়ে উঠেছে। যে কবিতা ধ্বনির উপর তার অর্থের জন্য নির্ভরশীল, কবি এডিথ সিটওয়েল তাকে বিমূর্ত কবিতা বলে অভিহিত করেছেন। সিটওয়েল নিজেও ওই ধারার একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি। এছাড়া ইংরেজ কবি জিরাল্ড ম্যানলি হপকিনস ও ফরাসী কবি র‌্যাবো বিমূর্ত কবিতার ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বর্তমান বাংলা কবিতায় এই ধ্বনিনির্ভর বিমূর্তচর্চা বেশ গতিশীল। অভিযোজন সাধারণভাবে কোন সাহিত্যকর্মকে মূলের কাহিনী-কাঠামো অবিকৃত রেখে তার চরিত্র ও পরিবেশাবলী পরিবর্তিত করে একই শিল্পমাধ্যমে বা ভিন্ন কোন শিল্পমাধ্যমে উপস্থাপনাই রূপান্তর বা অভিযোজন। অ চধংংধমব ঃড় ওহফরধ, ঙষফ সধহ ধহফ ঃযব ংবধ, ডধৎ ধহফ ঢ়বধপব প্রভৃতি চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ পাঠসমূহের মধ্যেও এই রূপান্তরকার্য ক্রিয়াশীল রয়েছে। কলাকৈবল্যবাদ ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে ইউরোপে যে কলাকৈবল্যবাদী আন্দোলন গড়ে ওঠে তার দার্শনিক প্রাণকেন্দ্র ছিলো ফ্রান্সে। শিল্পকর্মের সামাজিক মূল্য এবং উপযোগিতার ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে ফরাসী লেখকরা একটি তত্ত্ব তুলে ধরলেন, এই তত্ত্ব অনুযায়ী আর্ট বা শিল্পকলা হলো মানুষের যাবতীয় কর্মের মধ্যে সবচাইতে মূল্যবান। কারণ তা স্বয়ংসম্পূর্ণ, নিজে নিখুঁত হয়ে ওঠা ছাড়া তার আর অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। আর্টের সঙ্গে ইউটিলিটির কোনো সম্পর্ক নেই। শিল্পকলা সর্বপ্রকার উপযোগিতাবর্জিত, থিওফিল গত্যিয়ের এই প্রস্তাবনা থেকেই একটি সচেতন আন্দোলন হিসেবে ফরাসী কলাকৈবল্যবাদের জন্ম হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। বোদলেয়ার, ফ্লবেয়ার, মালার্মে এবং আরো অনেকে একে বিকশিত ও সম্প্রসারিত করেন। কলাকৈবল্যবাদের অন্যতম সেøাগান হলোÑশিল্পের জন্য শিল্প, আর্ট ফর আর্টস স্যেক। রাগী তরুণদল ১৯৫০-এর দশকে ও তার পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডে একদল লেখকের উদ্ভব হয় যাঁরা প্রচলিত আচার-আচরণ, রীতিনীতি, সামাজিক সম্পর্ক, পূর্ব ঐতিহ্য এবং যাকে ‘এস্টাব্লিশমেন্ট’ বলা হয় তার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভপূর্ণ সমালোচনামূলক সাহিত্যরচনায় আত্মনিয়োগ করেন। রাগী তরুণদল বলতে তাঁদের বুঝায়। এই লেখকদের গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্মের মধ্যেÑকিংসলি এমিসের লাকি জিম, জন ব্রেইনের রুম এ্যাট টি টপ, অ্যালন সিলিটোর লোনলিনেস অব দি লং ডিসটান্স রানার উপন্যাস তিনটি এবং জন ওসবোর্নের নাটক, লুক ব্যাক ইন অ্যাঙ্গার অন্যতম। অ্যাফরিজম (সংক্ষিপ্ত জ্ঞানগর্ভবাণী) বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার অসংখ্য প্রবচনের মধ্যে আমরা এর সাক্ষাত পাই। পাশ্চাত্য সাহিত্যে অ্যারিস্টটল, প্লেটো, লা রশোফুকো, ফ্রান্সিস বেকন, ডক্টর জনসন, বার্নার্ড শ প্রমুখের রচনায় প্রচুর অ্যাফরিজম-এর দৃষ্টান্ত লক্ষণীয়। বাংলা সাহিত্যে খনা, ডাক থেকে আরম্ভ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, হুমায়ুন আজাদসহ আরো অনেকেই প্রবচনের চর্চায় চেষ্টাশীল ছিলেন এবং বর্তমানেও কেউ কেউ আছেন। (চলবে)
×