ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাক-দূতাবাস জঙ্গী নেটওয়ার্ক প্রসার ও জাল মুদ্রা ব্যবসায় জড়িত

আগামী স্বাধীনতা দিবসে ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর গণবিচার

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫

আগামী স্বাধীনতা দিবসে ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর গণবিচার

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর গণবিচারের ঘোষণা দিয়েছে ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার’ কমিটি। ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশন এখন নব্য ‘কাশিমবাজার কুঠি’তে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটি। এছাড়াও পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিবেচনা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুদ্ধাপরাধ গণবিচার কমিটি। শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির স্বাধীনতা হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব স্তরের শ্রেণী-পেশার মানুষ দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে গণজাগরণ সৃষ্টি করে পাকিস্তান, পাকিস্তানী চর, জামায়াত-শিবির রাজাকার আলবদরদের নির্মূল করে বাংলাদেশকে ষড়যন্ত্রমুক্ত ও ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনাদের বিচারে বাধ্য করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কমিটির আহ্বায়ক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও যুগ্ম-আহ্বায়ক সাংবাদিক-কলামিস্ট আবেদ খান। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ঢাকার পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মকর্তা মাজহার খান, সেকেন্ড সেক্রেটারি ফারিনা আরশাদ বাংলাদেশের ভেতরে জঙ্গী নেটওয়ার্কে প্রসার ও জালমুদ্রা ব্যবসার পৃষ্ঠপোষকতা করছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে তৎপর তারা। ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশন এখন নব্য কাশিমবাজার কুঠিতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া তিনি ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর বিচারে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে গণবিচারের আয়োজনের ঘোষণাও দেন। আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী বিচার হবে বলেও ঘোষণা করেন নৌমন্ত্রী। নৌপরিবহনমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনার বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছিল। তাদের বিচার করতে পাকিস্তানের প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে জনমত গঠন করা হবে। পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের আর্থিক পাওনা বুঝে নিতেও আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। আগামী ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার সামনে ১৯৫ পাকিস্তানী সেনার প্রতীকী বিচার করা হবে। এছাড়া পাকিস্তান সরকারের হামুদুর রহমান কমিশনের প্রতিবেদনে তাদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও তার বিচার হয়নি। পাকিস্তান যাদের ‘সাচ্চা পাকিস্তানী’ হিসেবে দাবি করেছেন তাদের নাগরিকত্ব বাতিলের পাশাপাশি ধর্মের নামে সহিংসতা করায় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকেও নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে কমিটি। আগামী ৩ জানুয়ারি মতিঝিলে সমাবেশ এবং ৬ জানুয়ারি নিজামির ফাঁসির আদেশ বহালের দাবিতে গণঅবস্থানেরও ঘোষণা দেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, জাতীয় সংসদ ভবনে স্বাধীনতাবিরোধীদের কবর রয়েছে। সেখানে লুই আইক্যানের নক্সা না মেনেই এসব কবর দেয়া হয়েছে। আমরা বলতে চাই লুই আইক্যানের নক্সার বাস্তবায়ন করতে হবে। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের অনেক ট্রাস্ট এখনও জেলা প্রশাসকরা দেখভাল করছেন। যেমন খুলনা জেলা প্রশাসক খান এ সবুর ট্রাস্টের সম্পত্তি তদারকি করছেন। তবে আদালতের রায় হলো এসব সম্পত্তি দ্রুত বাজেয়াফত করতে হবে। আদালতে দিক নির্দেশনারও দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরী বলে তিনি মনে করেন। পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধীদের গণআদালতে বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে আবেদ খান বলেন, এটা হবে একটি প্রতীকী বিচার। কেননা প্রকৃত আদালত গঠন করার এখতিয়ার আমাদের নেই। এছাড়া বিদেশী নাগরিকদেরও বিচার আমরা করতে পারি না। তবে প্রতীকী আদালতে বিচারের মাধ্যমে জনগণকে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হবে। এর ফলে তাদের বিচারের চাপটি আরও প্রবল হবে। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতেও এ ধরনের গণআদালত গঠন হয়েছিল বলেও তিনি জানান। দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়াজ মাহফিল ও মসজিদে খুতবার সময় যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গীবাদের পক্ষে প্রচারণা চলছে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, মসজিদ ও ওয়াজ মাহফিলে সিসিটিভি বসাতে হবে। সেখানে যারাই যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গীদের পক্ষে কথা বলবেন, সিটিটিভিতে ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়। নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৭১ সালে নরঘাতক ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা যাদের বিচার করার অঙ্গীকার করে পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছিল, তাদের বিচার করতে বাধ্য করার লক্ষ্যে পাকিস্তান সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করার জন্য জনমত গঠন করবে যুদ্ধাপরাধ গণবিচার কমিটি। এছাড়া পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের সকল পাওনা ও সম্পদ আদায়ের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও সৃষ্টি করা হবে। ঢাকার পাকিস্তানী দূতাবাসে বসে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী এখনও ষড়যন্ত্র করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হবে। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা ও জামায়াতে ইসলামী দলের ও নেতাদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াফত করার দাবি জানানো হবে। যুদ্ধাপরাধ বিচার কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, যেসব চিহ্নিত খুনী ও যুদ্ধাপরাধীর কবর সরকারী স্থানে আছে তা স্থানান্তরের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাবে কমিটি। এছাড়া ইতোমধ্যেই যাদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে বিচার করা হয়েছে ও রায় কার্যকর করা হয়েছে, তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াফত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি করে আন্দোলন চালিয়ে যাবে যুদ্ধাপরাধ গণবিচার কমিটি। উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর ইস্যুতে পাকিস্তান সরকারের সাম্প্রতিক অবস্থান দু’দেশের মধ্যে চলছে কূটনৈতিক টানাপোড়েন। পাকিস্তানের অবস্থানে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ, ঢাকায় পাকিস্তানী হাইকমিশনারকে তলব করে। এরপর পাকিস্তানও তলব করে ইসলামাবাদে বাংলাদেশের প্রতিনিধিকে। এর পাশাপাশি পাকিস্তান হাইকমিশনের দুই কর্মকর্তার সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জঙ্গী নেটওয়ার্কের যোগাযোগ ইস্যুতে দু’দেশের সম্পর্ক করে তুলেছে আরও দুর্বল। এমন সময় পাকিস্তানে ফিরে যাওয়া ১৯৫ জন যুদ্ধারাধীর বিচার দাবি করেছে সর্বস্তরের মানুষ। নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে গঠিত আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার কমিটি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন তাদের দাবির কথা। ইতোমধ্যেই গণবিচার কমিটি ৫০১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে সংসদ সদস্য শিরীন আখতার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমত কাদির গামা, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন মিয়া, সাংবাদিক কুদ্দুস আফ্রাদ, অঞ্জন রায়, অভিনেত্রী শমী কায়সার, রোকেয়া প্রাচী প্রমুখ রয়েছেন। এতে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক প্রমুখও থাকবেন বলেও জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
×