ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লোকসানের বোঝা নিয়ে চালু হচ্ছে ঠাকুরগাঁও চিনিকল

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫

লোকসানের বোঝা নিয়ে চালু হচ্ছে ঠাকুরগাঁও চিনিকল

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ তিন মৌসুমের সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন অবিক্রীত চিনি আর দেড় শ’ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে চালু হচ্ছে ঠাকুরগাঁও সুগার মিল। শুক্রবার সকাল ১০টায় মিলের ২০১৫-১৬ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করবেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। এ সময় উপস্থিত থাকবেনÑ সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, দবিরুল ইসলাম এমপি, ইয়াসিন আলী এমপি, সেলিনা জাহান এমপি, জেলা পরিষদ প্রশাসক সাদেক কুরাইশী, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম দেলোয়ার হোসেন, মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন। এ বছর ৫৬ দিন মিলটি চালু রেখে ৭৫ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে পাঁচ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন টিনি উৎপাদন করবে বলে জানান মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন। তিনি জানান, গেল তিনটি মৌসুম ধরে ঠাকুরগাঁও চিনিকলের উৎপাদিত চিনি বিক্রি হচ্ছে না। বর্তমানে মিলটিতে মজুদ রয়েছে সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন চিনি। এরমধ্যে ২০১২-১৩ সালের উৎপাদিত চার হাজার মেট্রিক টনের বেশি চিনির গুণগতমান নষ্টের পথে। ২০১৩-১৪ সালে অবিক্রীত চিনি আছে দুই হাজার পাঁচ শ’ মেট্রিক টন এবং সর্বশেষ ২০১৪-১৫ সালের চিনি মজুদ আছে তিন হাজার ৮শ’ ৪৭ মেট্রিক টন। জেলায় ২৩ জন চিনির ডিলার থাকলেও তারা দেশী চিনি বিক্রি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ফলে চিনি অবিক্রীত থাকা আর শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা ও আখের দাম পরিশোধ করতে গিয়ে মিলটিতে দিন দিন বাড়ছে লোকসান। মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের অভিযোগ, বেতনের বদলে চিনি দেয়ায় বাইরে চিনি বিক্রি করতে গিয়ে মূল বেতন থেকে কমে যাচ্ছে শতকরা ছয় থেকে আট ভাগ টাকা। অন্যদিকে সময়মতো আখের টাকা না পেয়ে আখচাষ থেকে বিমুখ হচ্ছেন কৃষকরা। সদর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামের আখচাষী নিহার চন্দ্র, মাতৃগাঁও গ্রামের আরমান আলী ও মোবারক বলেন, আখচাষের জন্য জমি দীর্ঘদিন পড়ে থাকে। একই জমিতে অন্য ফসল করলে লাভ বেশি পাওয়া যায়। এদিকে মিলে আখ দেয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাওয়া যায় না। টাকার জন্য ঘুরতে হয়। ঠাকুরগাঁও চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, বর্তমানে মিলের অবস্থা জরাজীর্ণ হলেও ঠাকুরগাঁওয়ে একমাত্র ভারি শিল্প এ মিলকে নিয়ে আশার আলো দেখছি। মিলটি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে যে প্রকল্প দেয়া হয়েছে, এটি বাস্তবায়ন করা হলে শ্রমিক-আখচাষীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করবে। দীর্ঘদিনের পুরনো এ মিলটি বেশি সময় চালু রেখে লোকসান কমাতে মিল কর্তৃপক্ষ বহুমুখী কর্মপ্রস্তাবনা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। প্রস্তাবনা প্রকল্প চালু হলে আরও বেশি চিনি উৎপাদনের পাশাপাশি এখান থেকে বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে জানান মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন। মিলটি সংস্কার করে আখ সঙ্কট রোধে সুগারবিটে উৎপাদন হবে চিনি। আর বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে বিদ্যুত উৎপাদন, বায়োফার্টিলাইজার প্লান্টসহ বহুমুখী প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বাড়বে চিনি উৎপাদন ক্ষমতা, ফলে লোকসান কমে আসবে বলে জানান মিলের ব্যস্থাপনা পরিচালক। দেশের চিনিকলগুলোর এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দেশী চিনি উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বিপণনের ওপর গুরুত্বারোপ করে ভারি শিল্প রক্ষায় এগিয়ে আসবে সরকার- এমন প্রত্যাশা সবার।
×