ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল দাবিতে আল্টিমেটাম

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫

টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল দাবিতে আল্টিমেটাম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল দাবি এবং বেতন বৈষম্য ও মর্যাদাহানির অভিযোগ কেন্দ্র করে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া বাকি সব ক্যাডারে। প্রশাসন ক্যাডারকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে অন্য ক্যাডারদের মর্যাদাহানি, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধভাবে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে সিভিল সার্ভিসের ২৬ ক্যাডার ও বিভিন্ন ফাংশনাল সার্ভিসের অর্ধলক্ষাধিক সদস্যের সংগঠন বিসিএস সমন্বয় কমিটি (প্রকৃচি)। পেশাজীবীদের বৃহত্তর এ জোটের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকে দাবি বাস্তবায়নে কর্মসূচীসহ সরকারকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে পরদিন থেকে সারাদেশে শুরু করা হবে লাগাতার কর্মবিরতি। শনিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিসিএস সমন্বয় কমিটির সমাবেশে এই হুঁশিয়ারি দিয়ে ১০ দিনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় পে স্কেল নিয়ে আপত্তি ছাড়াও উপজেলা পরিষদে ইউএনওদের কর্তৃত্ব বাতিল করে জনপ্রতিনিধির ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন ক্ষুব্ধ পেশাজীবী কর্মকর্তারা। হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে, ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি না মানলে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের উপজেলা অফিসার্স ক্লাব থেকে বের করে দেয়া এবং সকল অফিস নিজেদের দখলে নেয়া হবে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিসিএস সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব ফিরোজ খান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সভাপতি প্রকৌশলী কবীর আহমেদ ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের মহাসচিব কৃষিবিদ মোবারক আলী, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব আই কে সলিমুল্লাহ খন্দকার প্রমূখ। সমাবেশ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচী ঘোষণা করে বলা হয়, আজ রবিবার থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কালো ব্যাজ ধারণ, ২৩ ডিসেম্বর সারা দেশে মানববন্ধন, ২৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান এবং ২৭ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করবেন কর্মকর্তারা। সমন্বয় কমিটির নেতারা অভিযোগ করেন, উপজেলা কার্যকর করার নামে ইউএনওকে উপজেলার ৯৮ শতাংশ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এবং জনপ্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে সরকারী কর্মকর্তার ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। কর্মকর্তারা উপজেলা চেয়ারম্যানের অধীনে কাজ করতে চান, ইউএনওর কাছে জবাবদিহি করতে চান না। সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব মোঃ ফিরোজ খান বলেন, জাতীয় বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল এবং উপজেলা পর্যায়ে ১৭ সার্ভিসের সেলফ ড্রয়িং কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য বিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর ও অযাচিত নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে সাড়া না দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ১৪ অক্টোবর উপজেলা পরিষদের ক্ষমতায়নের নামে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠামূলক একটি অফিস স্মারক জারি করে। জাতীয় বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল করে নতুন করে বেতন স্কেলের প্রজ্ঞাপন জারি করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে নেতারা বলেন, প্রশাসন ক্যাডারকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিচে নামিয়ে তাদের মর্যাদাহানি করা হয়েছে। টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করে প্রশাসন ছাড়া সকল ক্যাডারকে নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। অন্যান্য সকল ক্যাডারের ওপর খবরদারি করার সুযোগ দেয়া হয়েছে প্রশাসন ক্যাডারকে। এই কাজ করে একটি মহল সরকারকে বেকায়দায় ফেলছে বলেও অভিযোগ করেন নেতারা। বলেন, বার বার বলার পরও কারা এসব করছে তা খুঁজে বের করা দরকার। ২৬ ক্যাডারের বাইরের পেশাজীবীরাও পে স্কেল নিয়ে তাদের আপত্তির কথা জানিয়ে সমাবেশে বলেছেনÑ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েই ২৬ ক্যাডারের সঙ্গে যৌথভাবে আন্দোলনে নেমেছে প্রকৌশলী, কৃষিবিদ ও চিকিৎসকরাও। ফিরোজ খান বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা অফিস স্মারকে উপজেলা পরিষদকে অধিকতর কার্যকর করার নামে পেশাদার ও কারিগরিসহ উন্নয়নমুখী দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা উত্তোলন, প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ ও তদারকিসহ সব ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অযাচিত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত দেশের সব দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য চরম অবমাননাকর। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা স্মারকের মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যানের তুলনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বেশি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সমাবেশে বলা হয়, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিজস্ব ক্যাডার তফসিলের নির্ধারিত পদে (লাইন পদে) পদোন্নতি দেয়া হয় না। এর পরিবর্তে সরকারের বিশেষ পদ হিসেবে চিহ্নিত উপসচিব বা তদুর্র্ধ পর্যায়ের নির্ধারিত পদের চেয়ে অতিরিক্তসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। পদ না থাকার অজুহাতে অন্যান্য ক্যাডার ও ফাংশনাল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের বছরের পর বছর এমনকি এক যুগেরও বেশি সময় একই পদে বসিয়ে রাখা হয়। ফলে একই ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে বেতনবৈষম্য সৃষ্টি হয়। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেলের কারণে একজন কর্মকর্তা পদোন্নতি না পেলেও নিজ ব্যাচের কর্মকর্তার সঙ্গে সৃষ্ট বেতনবৈষম্য নিরসনের সুযোগ পান। তাই দাবি হচ্ছে, প্রশাসন ক্যাডারের মতো অন্যান্য ক্যাডারে সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি দেয়ার পর টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড তুলে দেয়া যেতে পারে, তার আগে নয়। সিলেকশন গ্রেড বন্ধ করায় বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে পদ অবনমন হয়েছে জানিয়ে সমন্বয় কমিটি জানায়, শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপকগণ পদোন্নতির পদ হিসেবে চতুর্থ গ্রেডে বেতন পান। এর মধ্যে ৫০ ভাগ অধ্যাপক সিলেকশন গ্রেড হিসেবে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হন। এ ক্যাডারের কর্মকর্তারা অধ্যাপকের পদকে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার জন্য দীর্ঘদিন প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। সে চেষ্টাকে বন্ধ করে দিয়ে বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড হিসেবে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হওয়ার পথও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে অধ্যাপকদের চতুর্থ গ্রেড থেকেই অবসরে যেতে হবে। বেসরকারী শিক্ষকদের আন্দোলন, ক্ষোভ ॥ এদিকে পে স্কেলে পরিষ্কার কিছু না থাকায় অসন্তোষ বাড়ছে বেসরকারী স্কুল-কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মাঝে। অসন্তোষ বাড়ছে আয় সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার শর্ত জুড়ে দেয়ার খবরেও। আগামী জানুয়ারি থেকেই সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরদের সঙ্গে শর্তহীনভাবে একযোগে বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদেরও বেতন স্কেল কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ দাবি বাস্তবায়নের ঘোষণা না এলে লাগাতার ধর্মঘট ও আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছেন সমিতির নেতারা। শনিবার সকালে রাজধানীতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সমান বেতন স্কেলের দাবিতে কর্মসূচীও ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২৭ ডিসেম্বর সারাদেশে শিক্ষক-কর্মচারীরা মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করবেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবুল কাশেম, সহ-সভাপতি রঞ্জিত কুমার সাহা, মোঃ বজলুর রহমান মিয়া, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ কাওছার আলী প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বেসরকারী শিক্ষকদের মূল দাবি হলো শিক্ষানীতি ২০১০-এর বাস্তবায়; যার মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার জাতীয়করণ হবে। আর শিক্ষা ব্যবস্থার জাতীয়করণ করা হলে প্রতিষ্ঠানের আয়ের অংশ সরকারী কোষাগারে ফেরত দেয়ার বিষয়টি সুরাহা করা যেতে পারে। পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন স্কেল নিয়ে অর্থ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি চালাচালির টানাহেঁচড়া চলমান সঙ্কটের জন্য দায়ী। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাস হওয়া বেতন স্কেলে বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এখন বলা হচ্ছে, যাচাই-বাছাই করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু যাচাই-বাছাই করেই তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এটা ষড়যন্ত্রমূলক। জটিলত নিরসনে এ বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে বর্তমানে এমপিওভুক্ত বেসরকারী স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার সংখ্যা ২৬ হাজার ৭শ’। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা চার লাখ ৭৭ হাজার ২২১। আর নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় সাত হাজার, যেখানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা দুই লাখ। সমিতির নেতারা বলেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে তাদের পরিবারগুলোর, যা সংখ্যায় এক কোটিরও বেশি, জীবনমান জড়িত। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জানিয়েছে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ। সরকার সমর্থক এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেছেন, শর্তের খবরে ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে আইডিইবি ॥ ৮ম জাতীয় বেতন স্কেলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের অবমূল্যায়ন ও বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে কর্মসূচী ঘোষণা করেছে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)। জাতীয় প্রেসক্লাব ভিআইপি লাউঞ্জে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলন থেকে আইডিইবি নেতৃবৃন্দ এ কর্মসূচী ঘোষণা করে। কর্মসূচীর মধ্যে ২২ ডিসেম্বর সকাল এগারোটায় কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও অর্থমন্ত্রী সমীপে স্মারকলিপি প্রদান এবং ২৩-২৪ ডিসেম্বর সকল জেলায় মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী সমীপে স্মারকলিপি প্রেরণের কর্মসূচী রয়েছে।
×