ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা চায়নি, মুক্তিযুদ্ধও করেনি ;###;নির্বাচন কমিশন বোবা ও অযোগ্য

৩০ লাখ মরেনি

প্রকাশিত: ০৫:০২, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫

৩০ লাখ মরেনি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর এবার মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। যুদ্ধে ৩০ লাখ লোক প্রাণ দিলেও তিনি বলেন, আজকে বলা হয় মুক্তিযুদ্ধে এত লাখ লোক শহীদ হয়েছে। আসলে কত লোক শহীদ হয়েছে এটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, নানা বই-কিতাবে নানা কথা লেখা হয়েছে। আর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে দেশে মুক্তিযুদ্ধ হতো না, আপনারা কেউ মুক্তিযোদ্ধা হতে পারতেন না। সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তিনি এসব বিতর্কিত মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেই রাজাকার পোষা এবং রাজাকারদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেয়ার অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, যারা যুদ্ধ করেনি, বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত তারাই এখন আওয়ামী লীগের প্রিয় লোক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নিজের ঘরেই মুক্তিযোদ্ধার নাম দিয়ে যুদ্ধাপরাধী পালে, মন্ত্রী বানায়। এসব তারা চোখে দেখে না। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেই। মাওলানা নুরুল ইসলাম কী মুক্তিযোদ্ধা ছিল? সেই রাজাকারকে মন্ত্রী বানিয়ে জাতীয় পতাকা দিয়েছিল শেখ হাসিনাই। নিজের আত্মীয় স্বজনদের মধ্যেও অনেক বড় রাজাকার আছে, তাদের তিনি চোখে দেখেন না। নিজেদের কথা তারা অতি সহজে ভুলে যান। কিন্তু জনগণ তা সহজে ভোলে না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে মুক্তযোদ্ধারা সঠিক সম্মান পায় না। অথচ যারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি তারা আজ বড় মুক্তিযোদ্ধা। ক্ষমতায় গেলে এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, অনেকেই আছেন যারা মুক্তিযুদ্ধের সত্য কথা লিখেন। এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকারও সত্য কথা লেখেন। কিন্তু সত্য লেখার পর একে খন্দকারকে বইগুলো প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। জবাবে উনি বলেছেন, যা সত্য তাই লিখেছি, প্রত্যাহার করব কেন? তাজউদ্দিন আহমদের মেয়েও সত্য কথা বলেছেন। কিন্তু সত্য কথা লেখায় একে খন্দকারের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। অথচ তিনি আওয়ামী লীগেরই অত্যন্ত প্রিয় লোক ছিলেন। আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের দল নয় উল্লেখ খালেদা জিয়া বলেন, তারা শুধু মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, কিন্তু তাদের দলে কোন মুক্তিযোদ্ধা নেই। যারা আছেন সবাই ভুয়া। তাদের দেশের প্রতি কোন মায়াও নেই। ১৯৭১ সালে তারা স্বাধীনতা চাননি। চেয়েছিলেন কেবল ক্ষমতা। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। আজকেও এই দল গণতন্ত্র চায় না, শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। এ জন্য জোর করে ক্ষমতা ধরে বসে আছে। আসন্ন পৌর নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু করতে হলে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোন বিকল্প নেই। এ সময় তিনি দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচনের আয়োজনকে সরকারের ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের কথা বেশি বেশি বললেও তারা মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন করেনি। নিজেদের ঘরে থাকা রাজাকারের কোন বিচার করছে না। নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি দাবি করলেও স্বাধীনতার পর তারা রক্ষীবাহিনীর মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য কায়েম করেছে। তাদের তৈরি রক্ষীবাহিনী লোকদের ঘর থেকে ধরে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। প্রতিদিন মানুষ গুম করেছে। সেই গুম-হত্যার সেই ধারাবাহিকতা এখনও চলছে। এখনও অহরহ মানুষ খুন হচ্ছে, গুম হচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গুণীদের সম্মান করতে জানে না। শাহাবুদ্দীন ও লতিফুর রহমানের উদাহরণ টেনে বলেন, গুণী এই মানুষদের আওয়ামী লীগ অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র দেখার জন্য। যেখানে থাকবে ন্যায়বিচার এবং সুশাসন। কিন্তু আজ দেশে সুশাসন এবং ন্যায়বিচার অনুপস্থিত। আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে দেশে নৈরাজ্য চালাচ্ছে। খালেদা জিয়া বলেন, পৌরসভায় যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হয় তাহলে বিএনপি ৮০ শতাংশ ভোট পাবে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেও জানেন না তাদের নৌকা ডুবতে বসেছে। সেনাবাহিনীর প্রতি আওয়ামী লীগের আস্থা নেই বিধায় পৌর নির্বাচনে সেনা মোতায়েন চায় না। আজকে লজ্জা হয় একারণে যে, বিভিন্ন নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা বরখাস্ত হচ্ছে। আর অনির্বাচিতরা দেশ চালাচ্ছেন। তবে দ্রুতই এসবের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ জেগে উঠবে এবং দেশের এমন চেহারা পরিবর্তন হবেই। খালেদা জিয়া তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, সেনাবাহিনীকে আওয়ামী লীগ আজকে নয়, অনেক আগেই ধ্বংস করতে চেয়েছিল। সেনাবাহিনীর ওপর তাদের কোন বিশ্বাস নেই। বিডিআর হত্যার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর হাতেও রক্ত রয়েছে। আল্লাহ এর বিচার করবেন। তরুণদের ’৭১-র মতো জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে যত অন্যায় কাজ হয়েছে তার সবই করেছেন শেখ হাসিনা। প্রশাসন-পুলিশ-সেনাবাহিনী কারওই কোন অন্যায় নেই। তাদের কিছু হবে না। কারও চাকরি যাবে না বিএনপি ক্ষমতায় গেলে। জেলে গেলে শেখ হাসিনাকেই যেতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সবখানে দলীয় যোগ্য-মেধাবী অফিসারদের মূল্যায়ন করা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার দেশটাকে লুটপাট করে খাচ্ছে। নিজেরাই কামড়াকামড়ি করছে। সুইস ব্যাংকে ২০০৮ সালের পর থেকে কারা টাকা পাঠিয়েছেন। স্বপ্নের পদ্মাসেতু স্বপ্নই থেকে যাবে উল্লেখ করে বলেন, তবে পদ্মাসেতু হবে। দৌলদিয়া-পাটুরিয়া দিয়েও সেতু হবে। সেতু বাস্তবায়নের মানুষ এ দেশে আরও আছে। পৌর নির্বাচনে আইন ভঙ্গ হচ্ছে অভিযোগ করে বলেন, এ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নিজেই এবং তার দলের লোকরা প্রতিদিনই আইন ভঙ্গ করছেন। বোবা-অযোগ্য নির্বাচন কমিশন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না তাতে। এ জন্য চাই সেনা মোতায়েন। পুলিশের বা প্রশাসনের সব লোক খারাপ না, কিছু দুষ্টু লোকের জন্য এই অবস্থা হচ্ছে। তাই নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন রয়েছেন সুষ্ঠু করার জন্য। ‘নির্বাসিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সাহসী মানুষের ঐক্য ও আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই’ শীর্ষক এই সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরউল্লহ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ উদ্দিন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান প্রমুখ। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কয়েকশ’ মুক্তিযোদ্ধা এতে অংশ নেন। গলায় লাল-সবুজের উত্তরীয় এবং মাথায় লাল-সবুজ টুপি পরে আসেন মুক্তিযোদ্ধারা। খালেদা জিয়া অনুষ্ঠানস্থলে এলে তাকে উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়।
×