ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আদালতের আদেশে বৈধ প্রার্থী বাড়ছে ॥ পৌর নির্বাচনে নতুন প্রতীক বরাদ্দ ও ব্যালট পেপার ছাপা নিয়ে জটিলতা

ইসি বিপাকে

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫

ইসি বিপাকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৌরসভা নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও আদালতের আদেশে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর এসব প্রার্থীকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত আদালতের আদেশে ১৯৪ প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। এখন এসব প্রার্থীর অনুকূলে নতুন করে প্রতীক বরাদ্দ দিতে হবে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন প্রতীক বরাদ্দ ও ব্যালট পেপার ছাপা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। কারণ নির্বাচনে কাউন্সিলরদের প্রায় সব এবং মেয়র প্রার্থীদের অর্ধেক ব্যালট পেপার ছাপা হয়ে গেছে। এ অবস্থায় নতুন করে প্রার্থী বৃদ্ধি পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট পৌরসভার ব্যালট পেপার ছাপা স্থগিত রাখতে হচ্ছে। জানা গেছে, আদালতের আদেশ মেনে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হলে আগে ছাপা হওয়া ব্যালট পেপার বাতিল করে নতুন করে ছাপাতে হবে। যদিও নির্বাচন কমিশন এসব প্রার্থীর বৈধতার আদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এত অল্প সময়ে অধিক প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপীল করাও সময়সাপেক্ষ বিষয়। জানা গেছে, গত রবিবার পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে ১৯৪ জন প্রার্থীর প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া বিষয়ক আদালতের আদেশ পৌঁছেছে। এখন তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে নতুন করে ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে ইসিকে। অথচ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রার্থীর ব্যালট পেপার ছাপিয়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রেরণ করতে হবে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মেয়র পদে ব্যালট ছাপা নিয়ে বেশি জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে এ পদে ব্যালট পেপারে প্রার্থীর নাম উল্লেখ থাকায় আগের ছাপা ব্যালট বাদ দিয়ে নতুন প্রার্থীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ছাপতে হবে। এ কারণে যেসব পৌরসভায় প্রার্থীরা বৈধতা ফিরে পেয়েছেন এখন সেসব এলাকার বালট পেপার ছাপা বন্ধ রেখেছে ইসি। শুধু আদালতের আদেশে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে তা নয়, মনোনয়পত্র জমার সময় যাদের মনোনয়নপত্র জমা নেয়া হয়নি এমন প্রার্থীরা আদালতের রায় নিয়ে এসেছেন। এখন নির্বাচন কমিশনকে সেসব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা নিয়ে যাচাই-বাছাই করতে হবে। এক্ষেত্রে ওই সব সম্ভাব্য প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বৈধ হলে তাদের জন্যও ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে। এ কারণে ছাপানো ব্যালট পেপার বাতিল করে নতুন করে ছাপানোর প্রয়োজন পড়তে পারে। জানা গেছে, আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভায় মেয়র প্রার্থী শাহজাহান মিয়া ও নাজমা আক্তারের মনোনয়নপত্র ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তাদের মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বাছাই করার নির্দেশ দিয়েছে। এক্ষেত্রে ওই দুই প্রার্থী বৈধতা পেলে তাদের জন্যও ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে। গত ৫ ও ৬ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিনে মেয়র-কাউন্সিলর পদে এক হাজারের বেশি প্রার্থীর মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করা হলেও এদের বেশিরভাগ আবার প্রার্থিতা ফিরে পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৫শ’ প্রার্থী আদালতে তাদের বৈধতার জন্য আপীল করেছেন। এরমধ্যে ১৯৪ জন বৈধতা ফিরে পেলে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সঠিক সময়ে ব্যালট পেপার ছাপা নিয়ে জটিলতার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের জন্য ভোটার সংখ্যার তিনগুণ হিসেবে দুই কোটি ১০ লাখের বেশি ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে ইসিকে। এছাড়াও কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটের আগের দিন ব্যালট পেপার পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় সঠিক সময়ে ব্যালট পেপার ছাড়া ও কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছতে বিপাকে পড়তে হতে পারে ইসিকে। সারাদেশে ২৩৪ পৌরসভা নির্বাচনে প্রায় ১৩ হাজারের বেশি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। এরমধ্যে বাছাইয়ে এক হাজারের বেশি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এসব প্রার্থীর মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ে মেয়র পদে ১৫৭ জন, কাউন্সিলর পদে ৫৮১ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৫৯ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা। যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাহার শেষে গত ১৪ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে চূড়ান্ত প্রার্থীদের অনুকূলে প্রতীক বরাদ্দ দেয়। প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে নির্বাচনী প্রচরে নেমে পড়েন। অপরদিকে কমিশন এসব প্রার্থীর বনরাদ্দকৃত প্রতীক দিয়ে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ শুরু করেছে। এখন নতুন প্রার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। কিন্তু বাছাইয়ে যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছিল এসব প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেতে রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন। এখন পর্যন্ত ১৯৪ জন প্রার্থী আদালতের আদেশে প্রার্থীর সপক্ষে বৈধতা ফিরে পেয়েছেন। জানা গেছে, এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে মেয়র পদে অর্ধেক ব্যালট পেপার ছাপা সম্পন্ন হয়েছে। এখন প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় সেসব এলাকার জন্য নতুন করে ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে। তারা জানান, কাউন্সিলর পদে কমন প্রতীক থাকায় জটিলতা কম হলেও সমস্যা দেখা দিয়েছে মেয়র পদের ব্যালট পেপার ছাপা নিয়ে। কারণ মেয়র পদে প্রার্থীর প্রতীকের পাশাপাশি প্রার্থীর নামও ছাপাতে হবে। ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব ব্যালট পেপার ছাপার কাজ শেষ করতে হবে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, হাতে সময় কম থাকলেও আদালতের আদেশও অমান্য করা যাবে না। আবার এসব প্রার্থীর বৈধতার বিরুদ্ধে আপীল করার সিদ্ধান্ত হলে সেখানেও রয়েছে জটিলতা। কারণ এ অধিকসংখ্যক প্রার্থীর আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা সময়সাপেক্ষ বিষয় বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা। গত রবিবার কমিশনের এক বৈঠকে আদালতের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার বিরুদ্ধে আপীল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে জানা গেছে, এত অধিকসংখ্যক প্রার্থীর আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা সময়সাপেক্ষ বিষয়। কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রার্থিতার আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করলে তা ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগেই নিষ্পত্তি করতে হবে। তা না হলে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তবে জানা গেছে, কমিশন বেছে বেছে মেয়র প্রার্থীর রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭ থেকে ৮ জন মেয়র প্রার্থী আদালতের আদেশে তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। বাকি সবাই কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী। নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রিটার্নিং কর্মকর্তারা যৌক্তিক কারণেই এসব প্রার্র্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছেন বলে উল্লেখ করেন। ইসির আইন শাখার যুগ্ম-সচিব মোঃ শাহজাহান বলেন, এ পর্যন্ত ১৯৪ জনের বিষয়ে আদেশ পেয়েছেন তারা। আদালতের আদেশ মেনে সংশ্লিষ্টদের বৈধ প্রার্থী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে প্রতীক বরাদ্দ দিতে হবে। ফলে নতুন করে ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে। ব্যালট পেপার ছাপানো হলেও কিছু করার নেই। আদালতের আদেশ মানতে হবে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কাউন্সিলর পদে কমন ব্যালট পেপার থাকায় প্রার্থী বাড়লেও সমস্যা নেই। ইতোমধ্যে কাউন্সিলরদের সব ও মেয়র পদে ৫০ শতাংশের বেশি ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে। তবে মেয়র পদে প্রার্থী বাড়লেই ছাপানো ব্যালট নষ্ট করতে হবে বলে তারা জানান। নতুন প্রার্থীকে নিয়ে নতুন করে ছাপাতে হবে ব্যালট পেপার। বিএনপির আবেদন খারিজ ॥ এদিকে নেয়াখালীর চাটখিলে বিএনপিদলীয় প্রার্থীর মনোনয়পত্র প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে বলে দলের পক্ষ থেকে যে অভিযোগ কমিশনে দেয়া হয়েছিল তার কোন সত্যতা খুঁজে পায়নি ইসি গঠিত তদন্ত কমিশন। কমিশনের আইন শাখার উপ-সচিব মহসিনুল হক বিষয়টির সার্বিক তদন্ত করে ইতোমধ্যে কমিশনে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপির প্রার্থী স্বেচ্ছায় তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। মহসিনুল হক বলেন, বিএনপির প্রার্থী মোস্তফা কামাল ও প্রার্থীর পক্ষে অভিযোগ দাখিলকারী ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকনকে তদন্তের সময় পাওয়া যায়নি। তবে প্রার্থীর ভাই পরিচয়ে একজন এসেছিলেন। প্রার্থীর ভাই তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, মোস্তফা কামাল স্বেচ্ছায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। কমিটি অন্যান্য মাধ্যমেও খোঁজখবর নিয়ে একই ধরনের তথ্য পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে চাঁদপুরে ছেংগারচর পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থী সারোয়ারুল আবেদীন আদালতের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পেলেও আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ইসিতে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এখন কমিশন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করতে যাচ্ছে বলে জানান একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সারোয়ারুল আবেদীনের মনোনয়নপত্রে তথ্যের গরমিল থাকায় রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন।
×