ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘নিজের টেনশন বুঝতে দেইনি মেয়েদের!’

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫

‘নিজের টেনশন বুঝতে দেইনি মেয়েদের!’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘ফাইনালের আগে এত বেশি টেনশনে ছিলাম যে, টানা দুই রাত ঘুমাতেই পারিনি। তবে তাই বলে ঘুণাক্ষরেও নিজের এই উদ্বেগ ভাবটা দলের খেলোয়াড়দের বুঝতে দেইনি। নইলে ওরাও খুব নার্ভাস হয়ে পরত।’ কথাগুলো যার, তিনি গোলাম রব্বানী ছোটন। এই মুহূর্তে তাকে অনায়াসেই অভিজিহত করা যায় বাংলাদেশ মহিলা ফুটবলের ‘ইতিহাস সৃষ্টিকারী কোচ’ হিসেবে। এএফসি অনুর্ধ ১৪ গার্লস রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে (নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত) স্বাগতিক নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। বিভিন্ন কারণে এই শিরোপা জয় বাংলাদেশ বালিকা ফুটবল দলের জন্য দারুণ গুরুত্বপূর্ণ এবং স্মরণীয়। মেয়েদের ফুটবলের যে কোন পর্যায়ের টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের এটাই প্রথম শিরোপা। এর আগে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ অনুর্ধ ১৪ মহিলা দল শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত এই আসরে অংশ নিয়ে তৃতীয় হয়েছিল (ফেয়ার প্লে ট্রফিও লাভ করেছিল)। গত ১৭ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এক ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে নেপাল জাতীয় ফুটবল দলকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। এবার নেপাল অনুর্ধ ১৪ বালিকা দলকে তাদের মাটিতেই হারিয়ে ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করল ছোটনের শিষ্যারা। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের পুরুষ ফুটবলের চেয়ে মহিলা ফুটবল অনেক দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এবার আরেকটু এগিয়ে গেল। ফাইনালে উঠে আগেই গড়া হয়েছিল ইতিহাস। হারানোর কিছু ছিল না। এবার ফাইনালে (২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত) জিতে ইতিহাসটা হলো আরও গৌরবময়, আরও সমৃদ্ধ। গৌরবময় ট্রফি জিতে রবিবারই দলের সঙ্গে দেশে ফেরেন কোচ ছোটন। স্মরণীয় কীর্তি গড়ে এখন অভিনন্দন-প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন তিনি। শিরোপা জয় প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ফাইনালের আগে যেভাবে আমরা খেলেছি, নেপালও ঠিক একইভাবে খেলে ফাইনালে উঠে আসে। বলতে গেলে ওরা আমাদের সমমানের দল ছিল। তাই ওদের সমীহ করেই খেলার পরিকল্পনা করি। তাছাড়া ওখানকার আবহাওয়া ছিল প্রচুর ঠা-া। তাপপমাত্র ছিল ৮ বা ৯ ডিগ্রীর মতো। তবে আমরা দেশ থেকেই ঠা-া মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছি এবং ওখানে গিয়েও মানিয়ে নিয়েছি।’ ছোটন আরও যোগ করেন, ‘এই শিরোপা জিতে আমরা প্রমাণ করেছি এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সেরা ও যোগ্য দল আমরাই। আমি খুবই খুশি এবং অভিভূত এই কারণে যে পুরো টুর্নামেন্টে আমার দল একই ছন্দে খেলে গেছে এবং চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।’ শিরোপা জেতার নেপথ্য কৌশল সম্পর্কে ছোটনের ভাষ্য, ‘ফাইনাল ম্যাচে বল নিয়ন্ত্রণে উভয়দলই সমানে সমানে ছিল। কিন্তু তুলনামূলকভাবে আক্রমণ এবং গোলপ্রচেষ্টা আমাদেরই বেশি ছিল। আমরা খেলার অবস্থা অনুযায়ী কখনও অলআউট স্টাইলে, কখনও ডিফেন্সিভ খেলেছি। বিশেষ করে ওদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে (স্টপার, জার্সি নম্বর ২) আমরা মার্কিং করে খেলেছি। ওই খেলোয়াড়টির প্রধান গুণ ছিল সে খুব ভাল লম্বা ফ্রি কিক মারতে পারে এবং সতীর্থদের বল যোগান দেয়। ওই খেলোয়াড়টিকে আটকানোর দায়িত্ব সূচারুভাবেই পালন করেছে আমাদের স্বপ্না।’ জিতলেও আরও বেশি গোলের ব্যবধানে জিততে পারতেন বলে কিছুটা আক্ষেপ আছে ছোটনের, ‘আমরা যদিও এক গোলে জিতেছি, তবে আরও বেশি গোলে জিততে পারতাম। আমাদের কৃষ্ণা তো বলতে গেলে হ্যাটট্রিকই করতে পারত। ভাগ্য সহায় না হওয়ায় ওর নেয়া প্রতি শটই বার ঘেঁষে বাইরে চলে যায়!’ এরপর উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে যোগ করেন তিনি, ‘আশা করি এই শিরোপা জেতার মাধ্যমে বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের নতুন এক দিগন্ত উন্মোচিত হলো। আরও এগিয়ে যাবে মহিলা ফুটবল।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে ছোটন বলেন, ‘আমার দলে এমন কিছু কোয়ালিটি ফুটবলার ছিল, যাদের ওপর ভরসা করেই আমি আগেভাগেই একাধিকবার সাহস নিয়ে বলেছিলাম আমরা ফাইনালে খেলব। আমার আস্থার প্রতিদান চমৎকারভাবেই দিয়েছে মেয়েরা।’ অনুর্ধ ১৪ দলের মেয়েদের ভবিষ্যত কী? ‘ওরা যেন হারিয়ে না যায়। আশা করি ওরা আগামীতে অনুর্ধ ১৬ ও জাতীয় দলে খেলবে। আসন্ন এসএ গেমসে তো এই দলের নয়জনকে (শিউলি, নার্গিস, শামসুন নাহার, মারিয়া, মৌসুমী, মারজিয়া, সানজিদা, কৃষ্ণা ও স্বপ্না) নিয়েছি জাতীয় দলে। জুনিয়র-সিনিয়রদের মিশ্রণে আশা করি দলটা অনেক ব্যালেন্সড হবে। তাছাড়া সিনিয়র দলে সাবিনার মতো কয়েকজন আগের চেয়েও অনেক পরিণত হয়েছে। এসএ গেমসে ভারত খুবই শক্তিশালী দল। গত আসরে আমরা তাম্রপদক জিতেছিলাম। এবার আমরা চাই আগের চেয়ে ভাল ফল করতে।’ আগামীতে মহিলা ফুটবলকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিতে ছোটন কি করেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
×