ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ থেকে এই সার্ভিস চালু হবে

ঘরে বসেই অনলাইনে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র নক্সা অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:০০, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫

ঘরে বসেই অনলাইনে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র নক্সা অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ থেকে ঘরে বসেই অনলাইনে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও নক্সা অনুমোদন নিতে পারবেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন বাসিন্দারা। এছাড়া বিশেষ প্রকল্পের ছাড়পত্রসহ আবাসন কোম্পানিও এ সেবা পেতে আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনে সেবা গ্রহণকারীদের রাজউক বিশেষ সুবিধা প্রদান করবে। আজ থেকেই নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি প্রদানের মাধ্যমে এ সেবা গ্রহণ করতে পারবেন গ্রাহকরা। এক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদনকারীদের কাগুজে দরখাস্তকারীর আগেই নক্সা বা ভূমি ছাড়পত্র অনুমোদনসহ সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করতে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে। রাজউকের কাজে কাগুজে আবেদনকে অনুৎসাহিত করতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ সেবার আওতায় নক্সা বা ভূমি ছাড়পত্র নবায়ন বা অনুমোদনের সর্বশেষ তথ্যও জানা যাবে। এমনকি কোন কর্মকর্তার কাছে গ্রাহকের সংশ্লিষ্ট ফাইলটি রয়েছে তাও জানা যাবে। রাজউক কর্তৃক অনুমোদন বা নবায়ন করতে কোন প্রকার তথ্য জানা বা কাগজ জমা দিতে হলে তাও মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে রাজউক কর্তৃপক্ষ ওই গ্রাহককে জানাবে। কোন কর্মকর্তার কাছে যেতে হবে বা নক্সা প্রাপ্তিতে কর্তৃপক্ষের কোন আপত্তি রয়েছে কি না তাও বলে দেবে রাজউক। এ সেবা পেতে হলে পূর্বে প্রদত্ত ফির বাইরে অতিরিক্ত কোন অর্থ প্রদান করতে হবে না। উল্লেখ্য, বর্তমানে কাগুজে অনুমোদনের জন্য ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র নিতে এক হাজার টাকা ও নক্সা অনুমোদন পেতে ৫০০ টাকা এবং বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি প্রদান করতে হয়। প্রাথমিকভাবে রাজউকের ৫ নাম্বার জোনের (ধানম-ি-আজিমপুর-লালবাগ) বাসিন্দারা এ সেবার আওতায় থাকবে। আগামী ২ মাসের মধ্যে রাজধানীর সব এলাকাসহ সমস্ত রাজউক এলাকায় এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। আধুনিক বিশ্বের ন্যায় নাগরিক ভোগান্তি কমাতে ও কাগুজে সমস্যার ঝামেলা দূর করার পাশাপাশি সময়ের সাশ্রয় করতে এ বিশেষ উদ্যোগ হাতে নিয়েছে রাজউক। এর মধ্য দিয়ে নাগরিকদের সর্বোচ্চ আধুনিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে রাজউক ডিজিটাল দুনিয়ায় প্রবেশ করল। মঙ্গলবার রাজধানীর রাজউক মিলনায়তনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন নতুন এ সেবা উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানস্থলে ধানম-ির একটি মসজিদের নক্সা অনুমোদনের মধ্য দিয়ে রাজউকের এ নতুন ডিজিটাল সেবার যাত্রা শুরু হয়। বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) সহায়তায় প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সার্ভিস চালু করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর বাইরে রাজউকের নতুন ও পুরাতন বিভিন্ন প্রকল্পের অন্তর্গত জমির দলিলাদির তথ্য, ফ্ল্যাট বা প্লটের সঠিক আয়তন বা এ সংশ্লিষ্ট সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ, গ্রাহক কর্তৃক বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতের বরাদ্দকৃত জমির কিস্তি প্রদান বা বকেয়ার পরিমাণ জানা কিংবা রাজউক সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারী নির্দেশ সম্পর্কিত তথ্য গ্রাহকদের অতি দ্রুত প্রদানের লক্ষ্যে রাজউক কাজ করতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন অতি দ্রুত বাস্তবায়নের পথে একধাপ এগিয়ে গেল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, অনলাইনে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও নক্সা অনুমোদন সার্ভিস চালুর ফলে নতুন যুগে প্রবেশ করল রাজউক। এখন ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও নক্সা অনুমোদন করতে আর হয়রানি হবে না। রাজউকে না এসেই অনলাইনে এ সেবা পাওয়া যাবে। এমনকি সর্বশেষ খবরও জানতে পারবেন যে কোন গ্রাহক। এর ফলে ফাইলের পেছনে ছুটতে হবে না গ্রাহককে। যানজট সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, রাজধানীবাসীকে বর্তমানে রাস্তায় নেমে এক ঘণ্টার রাস্তা তিন ঘণ্টায় যেতে হয়। এর একটি অন্যতম কারণ রাজউক থেকে বাসাবাড়ির জন্য অনুমোদন নিয়ে রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলা হচ্ছে। রাজউককে এ ধরনের অবৈধ কাজ বন্ধের পদক্ষেপ নিতে হবে। যানজট কমানোর প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আছে। মন্ত্রী বলেন, রাজউকের প্রতিটি প্রকল্পকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে পূর্বাচলে ১৩০ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। এ ভবন নির্মিত হয়ে গেলে পূর্বাচলের চেহারাই পাল্টে যাবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মোহাম্মদ মঈন আব্দুল্লাহ বলেন, রাজউকে না এসেই মানুষ যাতে সেবা পেতে পারেন, সেজন্য অনলাইন সেবা চালুর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য পূরণে সব ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা একটি এ সেবার অন্যতম উদ্দেশ্য। অনুষ্ঠানে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের প্রতিনিধি মিয়া রহমত আলী বলেন, এ সেবা একদিকে সক্ষমতা বাড়াবে, অন্যদিকে কাজের স্বচ্ছতা বাড়বে। এজন্য রাজউকে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার দিকেও নজর দিতে হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে রাজউকের চেয়ারম্যান জি এম জয়নাল আবেদীন বলেন, প্রথমে অনলাইন সেবা ৫ নাম্বার জোনে এ সেবা চালু করা হচ্ছে। আগামী ২ মাসের এ সেবার আওতা বাড়ানো হবে। পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকার সব অঞ্চলের জন্য অনলাইন সেবা চালু করা হবে। এ সেবার মাধ্যমে আবেদনকারীর আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা কি ও কোন পর্যায়ে রয়েছে তা সরাসরি গ্রাহকগণ তার মোবাইলের মাধ্যমে ম্যাসেজ পাঠিয়ে জানতে পারবেন। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এটি একটি উদ্যোগ। আমরা এর বাইরেও নাগরিক সেবার পরিমাণ বাড়াতে রাজউক প্রদত্ত বর্তমানের বিভিন্ন প্রকার সেবা সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক করতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে উন্নত বিশ্বের ন্যায় রাজউক সংশ্লিষ্ট সকল প্রকার সেবা অনলাইনের মাধ্যমে প্রদান করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ টু আই প্রকল্পের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। এর মাধ্যমে নাগরিকগণ ঘরে বসেই আমাদের সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। ফলে মানুষের কর্মঘণ্টা সাশ্রয়ের পাশাপাশি হয়রানি ও ভোগান্তি থাকবে না। এ সেবা উদ্বোধনের মাধ্যমে মূলত নক্সা অনুমোদন বা ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র পেতে হয়রানি সম্পর্কিত গ্রাহকদের দীর্ঘদিনের বিভিন্ন অভিযোগ বন্ধ হবে।
×