ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্যাক্সি ক্যাব ও অটোরিক্সা

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫

ট্যাক্সি ক্যাব ও অটোরিক্সা

ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহন নিয়ে অভিযোগ ও ভোগান্তির শেষ নেই। কর্মস্থলে ও বিভিন্ন প্রয়োজনে নানা গন্তব্যস্থলে যাওয়ার ক্ষেত্রে মানুষকে একান্ত বাধ্য হয়ে ভিড়ে ঠাসা বাস-মিনিবাসের যাত্রী হতে হয়। যানজট ছাড়াও বিভিন্ন স্টপেজে যাত্রী ওঠানো-নামানোর জন্য যানবাহন থামানোর কারণে নিত্যদিন অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়। যেসব নাগরিকের ব্যক্তিগত গাড়ি কেনা কিংবা তা রক্ষণাবেক্ষণের সামর্থ্য নেই অথচ বেশি ভাড়া দিয়ে হলেও সময় বাঁচিয়ে গন্তব্যস্থলে যেতে চান, সমস্যাটা তাদেরই বেশি। কারণ ট্যাক্সি ক্যাব, অটোরিক্সার নিদারুণ স্বল্পতা। রাজধানীতে সিএনজিচালিত অটোরিক্সা নিয়ে চলছে চরম নৈরাজ্য। প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে যাত্রীরা। ঢাকা মহানগরীতে সিএনজি অটোরিক্সার সংখ্যা প্রায় ২৩ হাজার। এর মধ্যে বৈধ অটোরিক্সা ১২ হাজার ৮৩০টি। সরকার গত ১ নবেম্বর থেকে মিটার রিডিংয়ে ভাড়া নির্ধারণের নির্দেশ দেয়। নজরদারির জন্য রয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সিএনজি অটোরিক্সার মালিকদের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৯০০ টাকা। সেখানে তারা নিচ্ছেন ১৪ থেকে ১৬শ’ টাকা। আইন না মানার সংস্কৃতি থেকে কিছুতেই রেহাই মিলছে না। ২০০২ সালে সিএনজি অটোরিক্সা চালুর পর এবার নিয়ে পাঁচবার ভাড়া বাড়ানো হলো। সময়ের ব্যবধানে ভাড়া বাড়তেই পারে এবং তার যৌক্তিকতাও অস্বীকার করা যায় না। তবে অটোরিক্সা চালকরা গত এক যুগে কখনই নির্ধারিত ভাড়ায় সন্তুষ্ট থাকেনি। যাত্রীদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কিছুতেই বন্ধ হয়নি। যাত্রীরা সিএনজি অটোরিক্সা মালিক ও চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়লেও তা দেখার যেন কেউ নেই। যেভাবে রাজধানীতে মানুষ বাড়ছে সেভাবে বাড়ছে না গণপরিবহন। ফলে ভোগান্তির যেন শেষ নেই। ভাড়া নৈরাজ্য দূর করা যায়নি। শৃঙ্খলা ফেরেনি গণপরিবহনে। সিএনজিচালিত অটোরিক্সার যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এখনও চলছে। এশিয়ার দেশগুলো, বলা যেতে পারে পার্শ্ববর্তী দেশের শহরের মতো সুশৃঙ্খল ও পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা আমাদের দেশের প্রধান শহরগুলোতে আজও গড়ে ওঠেনি। ট্যাক্সি এখানে সোনার হরিণ। সিএনজিচালিত অটোরিক্সাগুলো অত্যন্ত স্বেচ্ছাচারী। যাত্রীর প্রয়োজন নয়, তারা দেখে নিজেদের সুবিধা। অথচ চাহিবামাত্র যাত্রীর গন্তব্য অভিমুখে গাড়ি হাঁকানো আবশ্যিক শর্তের মধ্যেই পড়ে। জরুরীভিত্তিতে কোন সঙ্কটাপন্ন রোগীকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ট্যাক্সি পাওয়ার কোন সুবিধা গত কয়েক দশকেও কেন গড়ে উঠল না তা এক বিরাট প্রশ্ন। গণপরিবহনের এইসব দুরবস্থা এবং যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মহল জ্ঞাত নয়, এটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। তারপরও কেন মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সুপরিকল্পনা এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয় না, তাও বোধগম্য নয়। যাত্রীসুবিধা নিশ্চিত করার জন্য করণীয় কোন কিছুই উপেক্ষা করার সামান্যতম সুযোগ নেই। রাজধানীবাসী যাত্রীর প্রয়োজনের দিকটি বিবেচনা করলে জরুরীভিত্তিতে ট্যাক্সিক্যাব ও অটোরিক্সার সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানোর বিকল্প নেই। আমরা আগেও বলেছি, মালিক-যাত্রী-পরিবহন শ্রমিকÑ সব পক্ষেরই স্বার্থের সুরক্ষা সরকারকে দিতে হবে। এই সুরক্ষাদানের বিষয়টিও হতে হয় ভারসাম্যপূর্ণ ও জনমুখী।
×