অনলাইন ডেস্ক ॥ ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনী বেসামরিক এলাকার উপর ‘অসংখ্য’ হামলা চালানোর জন্য দায়ী বলে মনে করে জাতিসংঘ।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার হাইকমিশনার নিরাপত্তা পরিষদকে এ কথা জানিয়েছেন।
নয়মাস আগে ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর বোমা হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটির পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের প্রথম প্রকাশ্য আলোচনায় হাইকমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেইন এ কথা বলেন।
তিনি জানান, ‘প্রচণ্ড উদ্বেগের সঙ্গে তিনি দেখেছেন’ ইয়েমেনের বেসামরিক এলাকায় ভূমি ও আকাশ থেকে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে এবং তাতে অন্যান্য স্থাপনার পাশাপাশি হাসপাতাল ও স্কুল ধ্বংস হচ্ছে।
তিনি বলেন, “গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে থাকা সব পক্ষই এর জন্য দায়ী, তবে বেশিরভাগ ক্ষয়ক্ষতি জোট বাহিনীর বিমান হামলার ফল বলেই ধারণা পাওয়া গেছে।”
ইরান সমর্থিত শিয়া বিদ্রোহী হুতি বাহিনী ইয়েমেনের রাজধানী দখল করে সুন্নি প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বা মনসুর হাদিকে ক্ষমতাচ্যুত করে। সানা থেকে পালিয়ে বন্দর শহর এডেনে আশ্রয় নেন হাদি। হুতিরা দেশের অধিকাংশ স্থান দখল করে এডেনের দিকে এগোতে শুরু করলে শঙ্কিত সৌদি আরব ইয়েমেনে বিমান হামলা শুরু করে।
ক্ষমতাচ্যুত হাদিকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনাই এ বিমান হামলার লক্ষ্য বলে দাবি করে সৌদি আরব। উপসাগরীয় সুন্নি আরব দেশগুলোও সৌদি বাহিনীর নেতৃত্বে বিমান হামলায় যোগ দেয়।
কিন্তু এসব বিমান হামলায় বেসামরিক নিহতের সংখ্যা বাড়তে শুরু করলে এবং ইয়েমেনের মানবিক পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়লে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো সতর্কতা জানাতে শুরু করে।
এই যুদ্ধ বন্ধে একটি রাজনৈতিক মিমাংসার দিকে যাওয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলো সৌদি আরবের ওপর উত্তরোত্তর চাপ বৃদ্ধি করে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত পশ্চিমা কূটনীতিকরা। নিরাপত্ত পরিষদের মঙ্গলবারের বৈঠকও ইয়েমেনের যুদ্ধ বন্ধে একটি রাজনৈতিক মিমাংসার দিকে যাওয়ার জন্য সব পক্ষের উপর সৃষ্টি করতেই আহ্বান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
বৈঠকে ডিসেম্বরে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালনরত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সামান্থা পাওয়ার সব পক্ষের মানবাধিকার আইন মেনে চলা উচিত বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বেসামরিকদের উপর ও সীমান্তের অপর পাশে হুতিদের নির্বিচার গোলাবর্ষণ বন্ধ করা উচিত।
তিনি আরব বলেন, “আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার জন্য এবং নির্বিচার বোমা হামলা থেকে বিরত থাকার জন্য এবং বেসামরিক হতাহতের অভিযোগগুলোর বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের জন্য সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।”
১৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ইয়েমেনের লড়াইরত পক্ষগুলো সাতদিনের নতুন একটি অস্ত্রবিরতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু তারপর থেকেই প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন করছে পক্ষগুলো।
ইয়েমেনের লড়াইয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ; এদের প্রায় অর্ধেক বেসামরিক। নিহতদের মধ্যে ছয়শরও বেশি শিশু রয়েছে।