ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৩০-৩১ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়-বিভাগের সঙ্গে বৈঠক

এডিপি কাটছাঁটের প্রক্রিয়া শুরু

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫

এডিপি কাটছাঁটের প্রক্রিয়া শুরু

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ অল্প সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও বাড়ানো যায়নি বাস্তবায়ন। প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাড়ানোর জন্য এর আগে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ফওয়ার্ড প্ল্যানিং করার তাগিদ দিয়েছিলেন। কিন্তু যা হওয়ার তাই হচ্ছে। বরং অন্য অর্থবছরের তুলনায় সমান তালে হচ্ছে না বাস্তবায়ন। ফলে কাটছাঁটের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি)। চলতি অর্থবছরে (২০১৫-১৬) বাস্তবায়ন শুরুর ছয় মাসের মাথায়ই এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে বৈদেশিক সহায়তা অংশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তারপরই শুরু হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল অংশের কাজ। আগামী ৩০-৩১ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে বৈঠকে আসছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি-২ সম্মেলন কক্ষে দুই দিনের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। গত অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তা অংশে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। ইআরডি সূত্র জানায়, ৩০ ডিসেম্বর যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক হবে সেগুলো হচ্ছে- কৃষি খাতের কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বিএডিসি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি বিপণন অধিদফতর, বিডব্লিউডিবি, এলজিইডি, খাদ্য অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতর, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, বন অধিদফতর, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৎস্য অধিদফতর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, সাধারণ বিমা কর্পোরেশন, আবহাওয়া অধিদফতর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর, ডিপিএইচই এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। পল্লী উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠান খাতের এলজিইডি, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়,পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়। পানি সম্পদ খাতের বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি, ডিএই, ডিপিএইচই, ভূমি মন্ত্রণালয়, বন অধিদফতর, পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা, পরিকল্পনা কমিশনের জিইডি। শিল্প খাতের শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বেপজা, বিসিআইসি, বিসিক, বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড, ইজিসিবিএল, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি, ডেসকো, বিদ্যুত বিভাগ, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, ডিপিডিসি, এনডব্লিউপিজিসি এবং সিপিজিসি। তৈল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতের পোট্রোবাংলা, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর এবং বিপিসি। এছাড়া আরও যেসব খাত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করা হবে সেগুলো হলো- পরিবহন, যোগাযোগ, ভৌত-পরিকল্পনা-পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাত, শিক্ষা ও ধর্ম এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতি। আগামী ৩১ ডিসেম্বর যেসব খাত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করা হবে সেগুলো হচ্ছেÑ স্বাস্থ্য-পুষ্টি-জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাত, গণসংযোগ, সমাজকল্যাণ মহিলা বিষয়ক ও যুব উন্নয়ন, জনপ্রশাসন, বিজ্ঞান-তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান খাত। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, বৈঠকের পরই জানা যাবে কত টাকা কমবে এবং কোন কোন মন্ত্রণালয় বেশি টাকা ব্যয় করতে পারবে আর কোন কোন মন্ত্রণালয় কম টাকা ব্যয় করতে পারবে। সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে (২০১৪-১৫) ৮০ হাজার কোটি টাকা থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (আরএডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে সরকারী তহবিলের ৫০ হাজার ১০০ কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। মূল এডিপি থেকে বরাদ্দ কমে যাচ্ছে ৫ হাজার ৩১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৮০ হাজার ৩১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। মূল এডিপির সরকারী তহবিল থেকে কমছিল ২ হাজার ১১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে কমছিল ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এডিপির মোট আকার সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নসহ প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। যার মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তার অংশে ৩৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের পরিমাণ ৩ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নবেম্বর) এডিপি বাস্তবায়নে অগ্রগত নেই। এ সময়ে বাস্তবায়নের হার ৩ বছরে সর্বনিম্নে নেমেছে। জুলাই থেকে নবেম্বর সময়ে মোট বরাদ্দের মাত্র ১৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ২০ শতাংশ, তার আগের বছর ছিল ১৯ শতাংশ। সম্প্রতি প্রকাশিত বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এডিপি বাস্তবায়ন কম হওয়ার কারণ হিসেবে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রচুর বৃষ্টি ছিল। ফলে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে এডিপি বাস্তবায়ন কম হয়েছে। তবে জানুয়ারি মাসের মধ্যেই একটি ব্যালেন্স পর্যায় আসবে বলে আশা করছি। তাছাড়া এ অর্থবছরে এডিপিতে যত অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তার সবটুকু ব্যয় করা সম্ভব হবে বলে মনে করছি। কিন্তু তার এই বক্তব্য কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। চলতি অর্থবছরের ৫ মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করেছে মোট ১৬ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিলের ১১ হাজার ৫৮৩ কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থাৎ ৫ মাসে মোট ব্যয় হয়েছিল ১৬ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা এবং তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ১৩ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থবছরের ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও ৮ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তায়নের হার ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিল্প ও খাদ্য মন্ত্রণালয় ৩ শতাংশ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ১ শতাংশ। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ৫ শতাংশ।
×