ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধুর হাতে খুন

নিখোঁজের ৪ দিন পর সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে কিশোরের গলিত লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫

নিখোঁজের ৪ দিন পর সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে কিশোরের গলিত লাশ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ শহরের ব্যবসায়ী সুলতান আহম্মেদের একমাত্র পুত্র আলিফ আহম্মেদ স্বপ্ন (১৪) নিখোঁজ হওয়ার চার দিন পর একটি সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে পুলিশ তার গলিত লাশ উদ্ধার করেছে। জানা গেছে, একটি জ্যাকেট কেনার টাকার জন্য ঘনিষ্ঠ বন্ধু রিফাতের হাতে খুন হতে হলো অষ্টম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র স্বপ্নকে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শহরের ভেলাকোপা এলাকার হানাগরপাড়ার সিনিয়র নার্স মোর্শেদা বেগমের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় জড়িত মোর্শেদা বেগম ও তার পুত্র রিফাতকে পুলিশ আটক করেছে। এ ঘটনা জানাজানি হলে হাজার হাজার মানুষ এসে ওই বাড়িতে ভিড় করে। ঘিরে রাখে রহস্যঘেরা ওই বাড়িটি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। এদিকে লাশ উদ্ধার করার খবরে গোটা সরদারপাড়ায় নেমে আসে শোকের ছায়া। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন বাবা সুলতান আহম্মেদ ও মা ফরিদা ইয়াসমিন। সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মুর্শেদুল করিম মোহাম্মদ এহতেশাম জানান, শহরের সরদারপাড়ার খাদ্য ব্যবসায়ী সুলতান আহম্মেদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। গত সোমবার সকাল ১০টার দিকে আলিফ আহম্মেদ স্বপ্ন তার মা ফরিদা ইয়াসমিনকে টেবিলে নাস্তা দিতে বলে তিনতলা ফ্ল্যাট থেকে নিচে নামে। বাসায় বলে বন্ধু রিফাতের সঙ্গে কথা বলে আসছি। এরপর সে নিখোঁজ হয়। তার আর বাড়ি ফেরা হয়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ০১৭৩১২০৭৬৯৩ বন্ধ পাওয়া যায়। সারাদিন খোঁজাখুঁজির পর পরিবারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার কুড়িগ্রাম সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। স্বপ্ন নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে রিফাতের মা মোর্শেদা বেগম রিফাতের সঙ্গে কাউকে কথা বলতে দিচ্ছিল না। পুলিশের সন্দেহ হলে মা ও ছেলেকে বুধবার রাতে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়। বৃহস্পতিবার সকালে রিফাত আত্মগোপন করে। আর মোর্শেদা বেগম ফোন বন্ধ রাখে। বিকেলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোর্শেদা বেগম ও পুত্র রিফাতকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে স্বপ্নকে খুনের ঘটনা স্বীকার করে। তাদের দেয়া তথ্যের সূত্র ধরে তাদের বাসার সেপটিক ট্যাঙ্ক ভেঙ্গে স্বপ্নের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ, সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদ আলম ও ইউএনও আমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে লাশ উদ্ধার করেন। প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রাম সদর হাপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মোর্শেদা বেগম এক বছর পূর্বে ভেলাকোপার হানাগরপাড়ায় বাড়ি করে বসবাস করে আসছে। স্বামী আতাউর রহমানকে তিন মাস আগে ডিভোর্স দেয়। একমাত্র ছেলে রিফাতকে নিয়ে থাকত। তবে ওই বাসায় কারও যাতায়াত ছিল নিষিদ্ধ। এ বাড়িটি ছিল রহস্যময়। স্থানীয় আবেদ আলী নামে একজন বাড়িটি পাহারা দিত। আর রাবেয়া বেগম নামে এক মহিলা গৃহপরিচারিকার কাজ করত। এর বাইরে ওই বাসায় কারও প্রবেশাধিকার ছিল না। মোর্শেদা বেগমের গ্রামের বাড়ি নাগেশ^রী উপজেলার রামখানা এলাকায়। তার প্রথম স্বামী রেজাউল মারা গেলে সে দ্বিতীয় বিয়ে করে। সর্বশেষ বিয়ে করে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী আতাউর রহমানকে। বিশাল দেহের অধিকারী মোর্শেদা প্রায়ই স্বামী আতাউরকে মারধর করত। এরই একপর্যায়ে গ্রামে সালিশের মাধ্যমে ডিভোর্স হয় তাদের। তাদের চলাফেরা, আচার-আচরণ সবই ছিল রহস্যময়। সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল-এ) মাসুদ আলম জানান, অভিযুক্ত মোর্শেদা ও রিফাত ধুরন্ধর প্রকৃতির। রিফাত তার নাগেশ্বরী এলাকার এক বন্ধু আকাশের সহায়তায় এ খুনের ঘটনা ঘটায়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আকাশ নাগেশ্বরী থেকে কুড়িগ্রামে আসে একটি জ্যাকেট কিনতে। কিন্তু টাকা নেই। তখন রিফাতসহ বুদ্ধি করে স্বপ্নকে শিকার বানাতে। রিফাত প্রথমে মোবাইলে স্বপ্নকে ডেকে আনে। ফাঁকা বাড়িতে দু’বন্ধু স্বপ্নকে হাত-পা বেঁধে ফেলে। তাদের টার্গেট ছিল মুক্তিপণ আদায় করা। কিন্তু ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা স্বপ্নকে তারা বাগে আনতে পারছিল না। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলে তারা ভয় পেয়ে একপর্যায়ে মাফলার দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরলে স্বপ্নের মৃত্যু হয়। পরে অন্যদের সহায়তায় লাশ গুম করতে সেপটিক ট্যাঙ্কে ঢুকিয়ে দেয়। আলিফ আহম্মেদ স্বপ্ন কুড়িগ্রাম কালেক্টরেট স্কুল এ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র ছিল। আর ঘাতক রিফাত ছিল কুড়িগ্রাম রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। দু’জনে ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
×