ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাভাইয়ের সেই বাগমারা ফের অশান্ত করার চেষ্টা জঙ্গী গোষ্ঠীর

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫

বাংলাভাইয়ের সেই বাগমারা ফের অশান্ত করার চেষ্টা জঙ্গী গোষ্ঠীর

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ দীর্ঘ ১১ বছর পর আবারও রক্তপাতের ঘটনা ঘটল সেই বাগমারায়। তবে এবার মসজিদে নামাজরত অবস্থায় ঘটল আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। যেখান থেকে শুরু হয়েছিল সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাইয়ের সন্ত্রাসী কর্মকা- সেই বাগমারাতেই অপেক্ষাকৃত নির্জন এলাকায় এবার বেছে নেয়া হয় একটি মসজিদ। এ ঘটনার পেছনেও জঙ্গি সম্পৃক্ততার যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করছেন অনেকে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৪ সালের আগে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা নওগাঁর আত্রাই, রানীনগর ও নাটোরের নলডাঙ্গা ছিল পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (এলএমএল লাল পতাকা দল) ক্যাডারদের ঘাটি বলে পরিচিত। এর মধ্যে বাগমারার পরিচিতি ছিল রক্তাক্ত জনপদ নামে। এখানে তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আলো খন্দকার থেকে শুরু করে ইউপি চেয়ারম্যান মরু হামিদসহ কয়েকজনকেও সর্বহারাদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে। তাহেরপুর পুলিশ ফাঁড়ির তিনজন পুলিশ সদস্যও নিহত হন সর্বহারাদের হাতে। এরপর সর্বহারা দমনের নামে সেই বাগমারাতেই উত্থান ঘটে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামের ইসলামী জঙ্গী সংগঠন। রানীনগর এলাকায় সর্বহারা দমনের নামে ২০০৪ সালের ৩১ মার্চ হঠাৎ করে আবির্ভূত হয় জেএমবি জঙ্গী সংগঠন। যার নেতৃত্বে ছিলেন জেএমবির সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই। একই বছরের ১ এপ্রিল তারা বাগমারায় প্রথম অপারেশনের নামে তা-ব শুরু করে। প্রায় তিন মাসের ওই তা-বে রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁয় অন্তত ২৩ জনকে হত্যা করে জেএমবি ক্যাডাররা। জেএমবি ক্যাডাররা ২০০৪ সালের জুনের শেষের দিকে বাগমারা ছাড়ে। এরপর থেকে মূলত বাগমারা ক্রমেই শান্ত হয়ে ওঠে। বর্তমান সরকারের আমলে অনেকটা প্রশান্তির ছোঁয়া মেলে বাগমারায়। তবে সেই শান্ত বাগমারা প্রায় ১১ বছর পর শুক্রবার দুপুরে আবারও কেঁপে উঠে বোমার বিকট শব্দে। এবার মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদেই বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। অনেক প্রাণহানির শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বেঁচে যান সবাই আর নিহত হন বোমাবহনকারী নিজেই। উপজেলার মচমইল সৈয়দপুর এলাকার আহমদিয়া মুসলিম জামাত কাদিয়ানি সম্প্রদায় মসজিদে শুক্রবার দুপুরে নামাজরত অবস্থায় বোমার বিস্ফোরণে অজ্ঞাত বোমা হামলাকারী যুবক নিজেই নিহত হন। এছাড়া মসজিদে নামাজরত স্থানীয় অন্তত ১০ জন মুসল্লি আহত হন। তাদের মধ্যে ১২ বছরের একটি শিশুও রয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, এর আগে কখনও বাগমারায় মসজিদে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেনি। এটিই প্রথম মসজিদে হামলার মতো ঘটনা ঘটল। আবার এর আগে এ অঞ্চলে কখনোই আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটেনি। মচমইল সৈয়দপুর আহমদিয়া মুসলিম জামাত কাদিয়ানি সম্প্রদায় সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বোমাটি বিস্ফোরণের পরপর এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের মানুষ দিগি¦দিক ছোটাছুটি করতে থাকে। ঘটনার পর মসজিদের ভেতরের মুসল্লিদের আত্মচিৎকারে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। তাদের সবার চোখে-মুখে তখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ ভয়ে কাঁদতে শুরু করেন। রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার নিশারুল আরিফ বলেন, বোমাবহনকারী যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে স্থানীয়রা কেউ তাকে চিনতে পারেননি। ঘটনার সঙ্গে আর কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। ঘটনার পরদিন শনিবার সকালে উপজেলার সেই আক্রান্ত মসজিদের গ্রাম মচমইলের সৈয়দপুর চকপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, মানুষের মধ্যে আতঙ্কের ছাপ। ২৬ নবেম্বর বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে হামলার পর থেকেই স্থানীয় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন হামলার আশঙ্কায় ভুগছিলেন। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের রাজশাহীর মোয়াল্লেম মোঃ সালাউদ্দিন বলেন, মসজিদে এমন হামলা হতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করে আসছিলাম। এমন আশঙ্কার মধ্যেই শুক্রবার এ বোমা হামলার ঘটনা ঘটল।
×