ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিঙ্গাপুরে গুলিসহ বাংলাদেশী আটকের ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট

শাহজালালে দুই স্ক্যানিং অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫

শাহজালালে দুই স্ক্যানিং অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ

আজাদ সুলায়মান ॥ অস্ট্রেলিয়া যাবার পথে সিঙ্গাপুরে এক বাংলাদেশী ব্যবসায়ী গুলিসহ আটকের ঘটনায় সিভিল এভিয়েশনের দুই নিরাপত্তাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ঢাকা ও সিঙ্গাপুর বিমানবন্দরে তোলপাড় চলা এ ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা ও গাফিলতিকে দায়ী করা হয়েছে। সিভিল এভিয়েশনের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য সন্নিবেশিত করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা আরও জোরদার করার সুপারিশ করা হয়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন দাখিল করে। শাহজালাল বিমানবন্দরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে কমিটি এ ঘটনা তদন্ত করে। তদন্ত কমিটির এক সদস্য জনকণ্ঠকে জানান, মূলত শাহজালাল বিমানবন্দরে দুই নিরাপত্তাকর্মীর গাফিলতিতেই গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা থেকে বাংলাদেশী ব্যবসায়ী কামরুল হাসান মাসুদ নির্বিঘেœ হ্যান্ডলাগেজে করে গুলি নিয়ে সক্ষম হন। চার নম্বর গেট দিয়ে ওই ব্যবসায়ী সপরিবারে বিমানবন্দরে প্রবেশ করে। তার হ্যান্ডলাগেজটিও যথারীতি স্ক্যানিং করা হয়। কিন্তু তারপরও কেন সেটা ধরা পড়েনি সেটাই ছিল তদন্ত কমিটির মূল জিজ্ঞাস্য। ওই রাতে চার নম্বর গেটের স্ক্যানিং ও বোর্ডিং ব্রিজ এলাকায় স্ক্যানিং পয়েন্টে যে দুই নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্বে ছিলেন তাদেরও জিজ্ঞাসা করা হয়। বিশেষ করে চার নম্বর গেটের কাছে স্ক্যানিং অপারেটর জিয়া তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন ওই সময় অপর এক নিরাপত্তাকর্মীকে সেখানে বসিয়ে তিনি টয়লেটে গিয়েছিলেন। মিনিট বিশেক পরে তিনি সেখানে হাজির হন। এই ফাঁকেই ব্যবসায়ী কামরুল হাসান মাসুদ তার হ্যান্ডলাগেজ স্ক্যান করে নিয়ে যান। এরপর তিনি চেক্ইন ও ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেন। হ্যান্ডলাগেজটা ছিল তার সঙ্গেই। ইমিগ্রেশন পেরিয়ে তিনি যখন বোডিং ব্রিজের কাছে ইমিগ্রেশন ন্যাচারাইলাইজেশন সার্ভিসে (আইএনএস) যান, তখনও তার লাগেজ স্ক্যান করা হয়। কিন্তু এখানেও লাগেজের গুলি ধরা পড়েনি। তদন্তকারীরা এখানেই বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন রেখেছেন- প্রথম স্ক্যানিং অপারেটর না হয় টয়লেটে থাকায় অস্থায়ী নিরাপত্তাকর্মী ততটা মনোযোগ দিতে পারেননি। কিন্তু দ্বিতীয় স্ক্যানিং অপারেটর মাসুদ করিমকে কিভাবে ফাঁকি দেয়া হলো এ প্রশ্নের হিসাব মেলাতে পারেননি তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তাহলে কি এটা দুজনেরই গাফিলতি ও দায়িত্ব পালনের উদাসীনতার পরিণতি? অবশ্য সিভিল এভিয়েশনের একাধিক কর্মকর্তা জনকণ্ঠের কাছে দাবি করেছেন, মাসুদ করিমও তো একটানা বারো ঘণ্টা ডিউটি করেছেন ওই রাতে। তাকে একই সময়ে চোখ রাখতে হয় মেশিনে আবার পাশ দিয়ে যাওয়া ব্যাগও দেখতে হয়। হয়ত তখন তার চোখ ছিল ব্যাগেজের দিকে- এ ফাঁকে মাসুদের লাগেজ চলে গেছে তার চোখ এড়িয়ে। এ ধরনের গাফিলতি ও উদাসীনতার দায় এনে ওই রাতে দুই স্ক্যানিং অপারেটর মাসুদ করিম ও জিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। এদিকে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টের গুলিসহ কামরুল হাসান মাসুদ ধরা পড়ার পর সেখানেও শাহজালাল এয়ারপোর্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। সেখানকার নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বিস্ময়মাখা প্রশ্ন ছিল- শাহজালাল এয়ারপোর্টের স্ক্যানারে কেন এটা ধরা পড়েনি। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজালাল বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, আইকাও রুল অনুযায়ী এ ধরনের স্ক্যানার যেভাবে অপারেট করার কথা সেভাবে এখানে তা করা হচ্ছে না। আইকাও রুলস অনুযায়ী এ ধরনের স্ক্যানার পরিচালনা করার জন্য কিছুতেই একজনকে দুই ঘণ্টার বেশি ডিউটি করতে দেয়া হয় না। কারণ স্ক্যানার অপারেটরের মনোযোগ ঠিক রাখতে হলে অবশ্যই ঘন ঘন তাকে বদল করতে হবে। অথচ শাহজালাল বিমানবন্দরে স্ক্যানার অপারেটর হিসেবে টানা ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। স্বভাবতই তার কাছ থেকে বিশ্বমান বা আইকাও প্রত্যাশিত সেবা পাওয়া যাবে না। স্ক্যানিং মেশিনে একজন কর্মচারীর পক্ষে কিছুতেই টানা বারো ঘণ্টা মনোযোগের সঙ্গে চোখ লাগিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তার মনোযোগ ও দৃষ্টিচ্যুতি ঘটবেই। এ জন্যই আইকাও দু’ঘণ্টার বেশি কাউকে দিয়ে এ দায়িত্ব পালনে নিষেধ করেছে।
×