ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্বদেশ রায়

পৌর নির্বাচন নিয়ে কেন এ উদ্বেগ

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫

পৌর নির্বাচন নিয়ে কেন এ উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, সুইডেন, জার্মানি, তুরস্ক ও নেপালের কূটনীতিক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের কাছে নালিশ করেছে বিএনপি। ২৪ ডিসেম্বর জনকণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, ‘আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না বলে সংশয় প্রকাশ করে সরকার ও নির্বাচন কমিশনেরবিরুদ্ধে কূটনীতিকদের কাছে নালিশ করেছে বিএনপি। বুধবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে পৌর নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠককালে দলের নেতারা এ নালিশ করেন।’ ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া বলেন ইসি অথর্ব, পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। ২২ ডিসেম্বর নয়া দিগন্তে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, ‘বিএনপি প্রধান বলেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করতে হলে সেনা মোতায়েন করতে হবে। কিন্তু হাসিনা সেনা দেবেন না, তিনি তাদের মাঠে নামাতে চান না। দলীয় বাহিনী হিসেবে পুলিশকে তারা ব্যবহার করবে।’ এর আগে ১১ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা রাজশাহী ইউনিভারর্সিটি ল এ্যাসোসিয়েশানের বার্ষিক কনফারেন্সে দেয়া ভাষণে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ১২ ডিসেম্বর he Daily Star এ প্রকাশিত খবরের শিরোনাম ছিলÑ Chief justice express fear about local body polls- says there might be injustice, police torture.. (প্রধান বিচারপতি স্থানীয় পরিষদের নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেনÑ বলেন, অবিচার ও পুলিশী নির্যাতন হতে পারে) খবরের প্রথম প্যারা এমনই “Chief Justice Surendra Kumar Sinha yesterday expressed apprehension over the municipality polls scheduled for december 30, saying there might be injustice and police torture centering it.” (প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গতকাল ৩০ ডিসেম্বরের পৌর নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন সেখানে অবিচার ও পুলিশী নির্যাতনের কেন্দ্র হতে পারে।)” এর পরে ১৮ ডিসেম্বর, পৌর নির্বাচন নিয়ে সংশয় ও নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে প্রশ্ন তোলে সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক)। সুজনের পক্ষ থেকে ড. কামাল হোসেনের স্ত্রী হামিদা হোসেন বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। ১৯ ডিসেম্বর প্রথম আলো প্রকাশিত খবরের শিরোনাম ছিল, ‘সংবাদ সম্মেলনে সুজনের অভিযোগ আচরণবিধির লঙ্ঘন হচ্ছে, দায়িত্ব এড়াচ্ছে কমিশন।’ আগামী ৩০ ডিসেম্বর যে পৌরসভা নির্বাচন হতে যাচ্ছে এই নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে বড় দল ও বিশিষ্ট জন এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের মধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে যারা বক্তব্য রেখেছেন তারা এ ক’জনই। দল হিসেবে বিএনপি। এছাড়া বেগম জিয়া, প্রধান বিচারপতি ও হামিদা হোসেন। নির্বাচন কমিশন বা সরকার তাঁদের কথা কীভাবে নিয়েছেন তা সাধারণের জানার কথা নয়। তবে বেগম জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রের একটি অংশের প্রধান অন্যদিকে হামিদা হোসেনও বিশিষ্ট নাগরিক। তাই নিশ্চয়ই সরকার তাদের ও নির্বাচন কমিশন তাদের কথা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। কিন্তু এর পরে দেশের মানুষের মনে স্বাভাবিকই একটি প্রশ্ন উঠবে কেন তারা এই আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন? কারণ, নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পরে আজ অবধি কোথাও ওই অর্থে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কোন সহিংসতা বা কোন হত্যা বা নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান বা নেপালে এ ধরনের লোকাল বডি নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর থেকেই সহিংসতা ও এক পর্যায়ে আহত-নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। কিছুদিন আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে মাত্র কয়েকটি পৌরসভা নির্বাচনেই দশ জনের বেশি মানুষ মারা যায়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে এই শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশের পরেও কেন এ পর্যায় থেকে ঘোলাটে করা হচ্ছে? তাছাড়া ২০১২ থেকে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী জামায়াত-বিএনপির জঙ্গীদের বিরুদ্ধে শুধু দায়িত্ব পালন নয়, প্রাণও দিয়েছে। কেন সেই পুলিশ বাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হচ্ছে? কেন বলা হচ্ছে পুলিশ বাহিনী হাসিনার নিজস্ব বাহিনী, নির্বাচন পুলিশী টর্চারের কেন্দ্র হবে? বাংলাদেশের মানুষ ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরে মেঘ দেখলেই তাই আঁতকে ওঠে। তাছাড়া বেগম জিয়া যে সময় পাকিস্তানীদের সুরে কথা বলছেন, দেশের ভেতর একের পর এক জঙ্গীদের অস্ত্র উদ্ধার করছে পুলিশ এই সময়ে পুলিশকে বিতর্কিত করার কাজ দেখলেই সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হবে। মনে হবে কোথাও কিছু ঘটছে কি? তাছাড়া গণতান্ত্রিক দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশের পরেও সে নির্বাচন নিয়ে এ ধরনের উদ্বেগ সাধারণ মানুষকে ভিন্ন কিছু ভাবায়।
×